shono
Advertisement

Breaking News

বিদ্যাসাগরের স্মৃতি আগলে ঝাড়খণ্ডের বাঙালি সমাজ, প্রত্যন্ত গ্রামেই চলছে দরিদ্রসেবা

জীবদ্দশায় বিদ্যাসাগর ঠিক যেমনটা করতেন তাঁর সাধের নন্দনকাননে বসে ঠিক সেইভাবেই চলছে সমাজসেবা। The post বিদ্যাসাগরের স্মৃতি আগলে ঝাড়খণ্ডের বাঙালি সমাজ, প্রত্যন্ত গ্রামেই চলছে দরিদ্রসেবা appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 12:03 PM May 16, 2019Updated: 12:03 PM May 16, 2019

চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: ভিনরাজ্যে বিদ্যাসাগরকে আগলে রেখেছেন বাঙালি সমাজ। বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা সমিতি তৈরি করে ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত গ্রাম কার্মাটারে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত ভিটে-মাটি, আমবাগান ও ব্যবহৃত জিনিষপত্র সংরক্ষিত করে রেখেছেন প্রবাসী বাঙালিরা। শুধু সংরক্ষণ নয় বিদ্যাসাগরের নামাঙ্কিত স্কুল, লাইব্রেরি চালানোর পাশাপাশি দরিদ্র মানুষের জন্য হোমিওপ্যাথির চেম্বার খুলে চিকিৎসা পরিষেবাও চালু রেখেছেন তাঁরা। জীবদ্দশায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ঠিক যেমনটা করতেন তাঁর সাধের নন্দনকাননে বসে ঠিক সেইভাবেই চলছে সমাজসেবা। স্বাভাবিকভাবেই মঙ্গলবার কলকাতায় বিদ্যাসাগর কলেজে হামলা ও মূর্তি ভেঙে দেওয়ার পর মর্মাহত গোটা কার্মাটার গ্রাম ও বিহার বাংলা অ্যাকাডেমির সদস্যরা। তাঁদের আক্ষেপ, ‘এই মানবতাবাদী মানুষটির যোগ্য উত্তরাধিকারী হয়ে উঠতে পারিনি আমরা। বিদ্যাসাগরের কাছে আমরা ঋণী। সরকারি ও বেসরকারি স্তরে আমাদের সকলেরই দায়িত্ব এই মনীষীকে যথাযথ সম্মান দেওয়া।’

Advertisement

[বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুরের জের, প্রতিবাদে ফুঁসছে বীরসিংহ গ্রাম]

পারিবারিক জীবন এবং চারপাশের পৃথিবীটা যখন ভীষণভাবে তাঁর কাছে প্রতিকূল হয়ে উঠছিল তখন তিনি সকলের থেকে অনেক দূরে ঝাড়খণ্ডের কার্মাটারে পাঁচশো টাকায় এক বাড়ি কিনে সেখানে চলে যান। সালটা ছিল ১৮৭৩-৭৪। সেই নির্জন সাঁওতালপল্লিতে দরিদ্র আদিবাসীদের সারল্য দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন বিদ্যাসাগর। তিনি তাঁদের ভীষণভাবে ভালবেসে ছিলেন। কার্মাটারে অসহায়,গরিব মানুষের সেবায় নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। সেখানে মেথরপল্লিতে উপস্থিত থেকে তিনি নিজের হাতে কলেরা রোগীর শুশ্রুষা করেছেন। শীতে কার্মাটারে হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা। সেই সময় মোটা চাদর কিনে গরীব মানুষের মধ্যে বিতরণ করেছেন। সাঁওতালদের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করে ওষুধ দিতেন। পথ্যের জন্য সাগু, বাতাসা, মিছরি দিতেন। সাঁওতালরা তাই তাঁকে দেবতার মতো শ্রদ্ধা করতেন। প্রতি বছর পুজোর সময় তাঁদের জন্য জামাকাপড় কিনতেন। কলকাতায় গেলে তাঁদের জন্য ফল নিয়ে আসতেন। সরল সাদাসিধে মানুষগুলিকে নিযে এভাবেই দিন কেটে যেত তাঁর। দুপুরে হোমিওপ্যাথির চেম্বার শেষ করে খাওয়া-দাওয়া সেরে বাগানের গাছপালা দেখাশুনা করা। পরে বই লেখায় মনোনিবেশ। বিকেলবেলা সাঁওতাল গ্রামে গিয়ে তাঁদের ঘরে ঘরে খবর নেওয়া, সাহয্য করা। এই ছিল বিদ্যাসাগরের শেষ জীবনের রোজনামচা।

বিহার বাংলা অ্যাকাডেমি ও ঝাড়খণ্ড বাংলা অ্যাকাডেমির সমন্বিত সংস্থা নন্দনকানন স্মৃতিরক্ষা সমিতির চেয়ারপার্সন দেবাশিস মিশ্র জানান, জামতাড়া ও যশিডি স্টেশনের মাঝে কার্মাটার গ্রামের মালিয়া পাড়ায় বিদ্যাসাগরের বাড়িটির নাম নন্দনকানন। বিদ্যাসাগরের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে এই ভিটে বাড়ি ও বাগানটি বিক্রি করে দিয়েছিলেন কলকাতার সিংহদাস মল্লিক বলে কোনও একজনকে। ছোট্ট গ্রাম কার্মাটার সম্পর্কে কারওর জানা ছিল না। ১৯৭২ সালে বিহার বাংলা অ্যাকাডেমির সদস্য তথা বিশিষ্ট আইনজীবী ধ্রুবজ্যোতি গুপ্ত অনেক অনুসন্ধানের পর বাড়িটি খুঁজে পান। এরপর কলকাতায় বিশিষ্টজনদের কাছে যাতায়াত করে তৎকালীন বিহার সরকারকে তদ্বির করে কিছু অনুদান জোগাড় করেন। শেষ পর্যন্ত ১৯৭৪ সালের ২৯ মার্চ ২৪ হাজার টাকার বিনিময়ে ওই বাড়িটি কিনতে সমর্থ্য হয় বিহার বাংলা অ্যাকাডেমি। বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা কমিটি গঠন হয়। গঠন হয় নন্দনকানন স্মৃতিরক্ষা কমিটিও। সবার যৌথ প্রয়াসে আর্থিক অনুদান যোগার করে ধীরে ধীরে বাড়িটি সংস্কার করা হয়। বিদ্যাসাগরের মূর্তি বসানো হয়। বালিকা বিদ্যালয় তৈরি করা হয়। একটি মিউজিয়াম তৈরি করা হয়। পরবর্তীকালে রেলকে প্রস্তাব দিয়ে কার্মাটার স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে বিদ্যাসাগর রাখা হয়। সম্প্রতি আসানসোল রেলডিভিশন স্টেশনে একটি বিদ্যাসাগরের মূর্তি স্থাপন করেছে। বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা সমিতির চেয়ারপার্সন অরুণ কুমার বোস বলেন, ‘স্থানীয় জেলা প্রশাসন বিদ্যাসাগরের বাড়ি ও বাগানবাড়িটি সংস্কারের জন্য ২৫ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। সেই টাকায় মিউজিয়ামের পাশাপাশি একটি ছোট্ট গেস্ট হাউসও তৈরি করা হয়েছে। বাইরে থেকে পর্যটকরা এলে বা রিসার্চে এলে থাকতে পারবেন।’

বিহার বাংলা অ্যাকাডেমির ভাইস চেয়ারপার্সন দিলীপ সিনহা বলেন, ‘সরকারি ও বেসরকারি অর্থানুকুল্যে শুধু সংস্কার নয় ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত গ্রাম কার্মাটারে বিদ্যাসাগের শিক্ষার প্রসার ও নারী শিক্ষা স্বাধীনতার প্রসারে আমরা কীভাবে কাজ করছি তা কল্পনাও করতে পারবেন না। তাই কলকাতায় যখন বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা হল তখন আমাদের বেদনায় বুক ফেটে যাচ্ছিল। আমরা তীব্র ধিক্কার জানাই এই ঘটনার।’ বালিকা বিদ্যালয় কমিটির সম্পাদক তথা নন্দনকানন স্মৃতিরক্ষা সমিতির চেয়ারপার্সন দেবজ্যোতি মিশ্র বলেন, ‘আমরা বহু আগে থেকে জনচেতনা শুরু করেছি। কলকাতা বর্ধমান পাটনা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনার করছি। বিদ্যাসাগরের জীবনী নিয়ে হিন্দিতে পত্রিকা প্রকাশ করেছি। বিহার ঝাড়খন্ডের পড়ুয়াদের মধ্যে তা বিলি করা হচ্ছে। তাই আমরা মনে করি বিদ্যাসাগরে মূর্তিভাঙা মানে বাঙালি জাতির আত্মহনন করা।’ কার্মাটার গ্রামের বাসিন্দা হোমিওপ্যাথি চিকিতসক সি কে চক্রবর্তী বলেন, ‘যে বাড়িতে বসে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর গরীবদের পথ্য দিতেন সেই ঘরে বসে আমিও হোমিওপ্যাথির সেবা দিচ্ছি। এই সুযোগ করে দিয়েছে স্মৃতিরক্ষা সমিতি। আমি কৃতজ্ঞ।’

[ইসলামের ‘অবমাননা’ করায় মৃত্যুদণ্ড, পাকিস্তানি যুগলের ত্রাতা আসিয়ার আইনজীবী]

The post বিদ্যাসাগরের স্মৃতি আগলে ঝাড়খণ্ডের বাঙালি সমাজ, প্রত্যন্ত গ্রামেই চলছে দরিদ্রসেবা appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement