অর্ণব আইচ: সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভরতি করিয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে ৬০ লক্ষ টাকার জালিয়াতি। অভিযোগের আঙুল জালিয়াতি চক্রের মহিলা কিংপিনের দিকে। কিছুদিন আগেই একটি নামী মঠের সন্ন্যাসীদের প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয় অর্পিতা ঘোষ নামে ওই মহিলা। এবার ৬০ লাখ টাকার জালিয়াতির ঘটনায় তাঁকে গ্রেপ্তার করল লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের গুন্ডাদমন শাখা। এই মামলায় অর্পিতার স্বামী স্টিফেন বার্নার্ড ও অর্পিতার সঙ্গিনী বেবি সিমরন ওরফে সুকন্যাকেও গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৮ সালে এই ঘটনার সূত্রপাত। তপসিয়ার বাসিন্দা এক ছাত্রই ডাক্তারিতে ভরতির জন্য সর্বভারতীয় পরীক্ষা দেন। মেধা তালিকায় তাঁর নাম ছিল এক লাখের উপর। যদিও এই রাজ্যের একটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভরতি হওয়ার ইচ্ছা ছিল ওই ছাত্রের। তার বাবা এক পরিচিতকে বিষয়টি বলেন। তার মাধ্যমেই তিলজলার বাসিন্দা অর্পিতার সঙ্গে অভিযোগকারীর পরিচয় হয়। অর্পিতা নিজেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ও উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিক বলে পরিচয় দেন। জানান, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে তাঁর বিশেষ পরিচয় আছে। তিনি চাইলে স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনে তাঁর ছেলেকে ভরতি করিয়ে দেবেন। উপরন্তু স্কলারশিপের ব্যবস্থাও করে দেবেন। তার ফলে পড়াশোনার খরচ অনেক কমে যাবে। কিন্তু ভরতির জন্য ৬০ লাখ টাকা লাগবে বলে জানানো হয়।
[আরও পড়ুন: আসন বণ্টন নিয়ে প্রথমবার বৈঠকে বসছে বাম-কংগ্রেস, তিন জেলা নিয়ে দড়ি টানাটানি]
অর্পিতার এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান অভিযোগকারী। বিহারে তাঁদের জমি রয়েছে। সেই জমি তিনি বিক্রি করেন। তার উপর তাঁর মা ও স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে দেন। এভাবে ৬০ লক্ষ টাকা জোগাড় করে অর্পিতার হাতে তুলে দেন তিনি। অভিযুক্তরা পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জাল নথিপত্র তাঁকে দেয়। এমনকী, কবে থেকে ক্লাস শুরু হবে, তাও জানিয়ে দেয়। কিন্তু ক্লাস শুরু হওয়ার আগের দিন ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি ফোন করে জানান, বিশেষ কারণে ক্লাস শুরু হতে দেরি হচ্ছে। এভাবে সময় নিতে শুরু করে অভিযুক্তরা। শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে না পেরে অর্পিতার সঙ্গে দেখা করেন। টাকা ফেরত দিতে বলেন তিনি। অর্পিতা ও তাঁর স্বামী একটি চুক্তিপত্র তৈরি করেন। অর্পিতা একটি চেকও দেন। কিন্তু সেই চেক জমা দিয়ে দেখা যায়, তা বাউন্স করেছে।
এর পর থেকে উধাও হয়ে যান অর্পিতা, তাঁর স্বামী ও অন্য সঙ্গীরা। সম্প্রতি অভিযোগকারী জানতে পারেন যে, অন্য একটি মামলায় সাইবার থানার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন এই অভিযুক্তরা। তিনি সরাসরি লালবাজারে এসে অভিযোগ জানান। এই ব্যাপারে বউবাজার থানায় মামলা হয়। লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের গুন্ডাদমন শাখার অফিসাররা তদন্ত করেন। শনিবার আদালতে আবেদন জানিয়ে তিনজনকে নিজেদের হেফাজতে নেন গোয়েন্দারা। ধৃতদের জেরা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।