ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: নাগপুরে দলের ‘অ্যালায়েন্স কমিটি’র মুখোমুখি হয়ে সিপিএমের (CPM) সঙ্গে সমঝোতার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন প্রদেশ নেতৃত্ব। জানা যাচ্ছে, এটা নেহাতি পোশাকি আলোচনা। আসলে বঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে জোটে যেতে আগ্রহী রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) মনোভাব বুঝে বেশ চাপেই বঙ্গ কংগ্রেস (Congress)। তৃণমূলের সঙ্গে এই জোটের পরিস্থিতি আঁচ করে এআইসিসির কাছে ঘুরিয়ে কিছু শর্ত রেখেছেন তাঁরা। প্রদেশ নেতৃত্বের দাবিদাওয়া শুনেই হাইকমান্ড তৃণমূলের সঙ্গে আলোচনায় বসবে। তাই হাইকমান্ডের কাছে প্রদেশ নেতৃত্বের দাবি, তৃণমূলের সঙ্গে জোট-আলোচনার সময় তাঁদের শর্তগুলিও সামনে রাখা হোক।
কী সেই শর্ত? শর্ত মূলত দুটি। এক, কংগ্রেস নেতাদের নামে নানা থানায় পুরনো বহু অপরাধের অভিযোগ আছে। মামলাও চলছে বেশ কিছু। জোট হলে সেসব থেকে মুক্তির জন্য প্রশাসনিক সহযোগিতা করতে হবে রাজ্যের শাসক দলকে। দুই, কংগ্রেসের যেখানে যত পার্টি অফিস তৃণমূলের পার্টি অফিসে বদলে নিয়ে স্থানীয় নেতৃত্ব দলবদল করেছেন, অল্প সংখ্যায় হলেও সেই অফিসগুলো ফেরানোর বন্দোবস্ত করা। তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে ভোটে যেতে হবে বুঝে হাইকমান্ডকে দিল্লির বৈঠকের পর নাগপুরের বৈঠকেও এ নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে প্রদেশ নেতৃত্ব।
[আরও পড়ুন: অবসর গ্রহণের পরই নতুন দায়িত্বে হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, আর্থিক উপদেষ্টা পদে নিয়োগ মুখ্যমন্ত্রীর]
এক প্রদেশ নেতা জানাচ্ছেন, জোট প্রক্রিয়ায় মানসিক প্রস্তুতির দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে কংগ্রেস হাইকমান্ড। দিল্লির বৈঠকে তার আঁচও মিলেছে বঙ্গ কংগ্রেসের নেতাদের। জোট পর্বের দ্বিতীয় ভাগে আসন সমঝোতার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের সম্ভাব্য ভোটের শতাংশের হিসাব দিয়েছেন প্রদেশ নেতারা। সেই বৈঠকে ‘৪-এর কম কোনওভাবেই নয়’, আসন সমঝোতা নিয়ে এমন কথা জানিয়েই তৃণমূলের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে বলে হাইকমান্ড প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে। তার পরের পর্বেই দুটি শর্ত নিয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। নাগপুরের সভায় প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরি ও দীপা দাশমুন্সি একসঙ্গে রাজ্যে দলের পরিস্থিতি, জোট হলে তার পরিণতি নিয়ে নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছেন। জানা যাচ্ছে, সেই আলোচনাতেই এই শর্তের প্রসঙ্গ উঠেছে।
প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যর কথায়, “কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের নামে নানা মামলা রয়েছে। মিথ্যা অভিযোগ রয়েছে। তৃণমূলের সঙ্গে জোটে যদি যেতেই হয়, সেগুলো থেকে মুক্তির কথা হাইকমান্ডকে জানাতেই হবে। রাজে্য এখন কী পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে দল করতে হয়, এআইসিসি নেতৃত্বের কাছে তার বাস্তব ছবিটা সামনে রাখা উচিত।” আরেক বর্ষীয়ান নেতার বক্তব্য, “হাইকমান্ড যে তৃণমূলকে জোটে চাইছে সে তো স্পষ্টই হয়ে গিয়েছিল আগের বৈঠকে। ফলে পরের আলোচনার পদক্ষেপগুলোকেও তো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”
[আরও পড়ুন: বছর শুরুতেই মহাকাশে বড় পদক্ষেপ ভারতের, কৃষ্ণগহ্বরের খোঁজে পাড়ি দিল স্যাটেলাইট]
তবে জোট আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে প্রদেশের একাধিক নেতৃত্ব। জোট যদি হয়ও, তাতে কংগ্রেসের দুর্বলতার কথা মনে করিয়ে এক রাজ্যনেতার বক্তব্য, “ছাব্বিশের জমির প্রস্তুতিও এই ভোট থেকে শুরু করবে তৃণমূল। ফলে তার আগে কংগ্রেসকে জমি ছেড়ে আদৌ তৃণমূল সুযোগ হারাতে চাইবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তেমন হলে জোট নিয়ে চূড়ান্ত রফায় যেতেই চাইবে না তৃণমূল। নিজেদের শক্তি ৪২ আসনেই পরখ নিতে চাইবে তারা। সেক্ষেত্রে জোটের সবটাই পণ্ড হবে।” তাতে কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের জোট হওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন দলের ওই নেতা।