ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকারকে ফের নিশানা তৃণমূলের। সোমবার দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা দলের অন্যতম সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি যশবন্ত সিনহার তোপ, ডবল ইঞ্জিন সরকার আসলে দু’মুখো সরকার। কেন্দ্র ডবল ইঞ্জিন সরকারের কথা বলছে মানেই তারা অন্য কোনও দলের সরকার থাকতে দিতে চায় না। একনায়কতন্ত্র চালাতে চায়।
গোয়ায় এই মুহূর্তে রয়েছেন দলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংগঠনিক নানা বিষয়ে একাধিক বৈঠক চলছে। এর মধ্যেই এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন যশবন্ত। কেন্দ্রকে তাঁর নিশানা, “ডবল ইঞ্জিনে দেখা যায় সামনের ইঞ্জিন একদিকে যাচ্ছে, পিছনেরটা অন্যদিকে। এটা তো দু’মুখো ব্যাপার।” তাঁর তোপ, “বিজেপি সরকার বারবার ডবল ইঞ্জিনের কথা বলছে। বিজেপি সরকার আসলে দেশে একনায়কতন্ত্র চালাতে চাইছে। তার মানে অন্য কোনও দলের কোনও সরকার কোথাও থাকবে না! আমাদের দেশ তো বৈচিত্রের দেশ।”
[আরও পড়ুন: সিধুকে পাঞ্জাবের মন্ত্রী করতে সুপারিশ করেছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী! বিস্ফোরক অমরিন্দর সিং]
এদিকে গোয়ায় জোটপর্বের আলোচনাকে নতুন মাত্রা দিয়েছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতা পি চিদম্বরম। তৃণমূল যে তাঁদের কাছে প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিল একপ্রকার তা স্বীকার করেও তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলেছেন। বলেছেন, একদিকে তারা জোটের প্রস্তাব দিচ্ছে, অন্যদিকে, কংগ্রেসকেই ভাঙাচ্ছে তৃণমূল। এর জবাব দিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, “গোয়া নিয়ে কংগ্রেস যা বলছে তাতে ওদের মধ্যে দ্বিচারিতা আছে। ওরা খেই হারিয়ে ফেলেছে। চিদম্বরমজি মানতে বাধ্য হচ্ছেন ওঁদের কাছে প্রস্তাব গিয়েছিল। আগে তাহলে ‘না’ বলেছেন কেন?” কুণালের পালটা তোপ, “কংগ্রেস থেকে নেতা ভাঙিয়ে আনা তৃণমূলের কাজ নয়। গোয়াতে কংগ্রেসের উপর তাদের নেতারা আস্থা রাখতে পারেননি। গত নির্বাচনে আপনাদের বিধায়করা জিতেছিলেন। আপনারা ধরে রাখতে পারেননি। কংগ্রেস ব্যর্থ হয়েছে বলেই তাদের ছেড়ে তৃণমূলে আসতে চেয়েছেন।” এ প্রসঙ্গে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার মতো প্রথম সারির কংগ্রেসের নেতা কেন কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে চলে গিয়েছেন তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কুণাল।
অন্যদিকে, যশবন্ত ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিয়েছেন রাজ্য বাজেট থেকেই গোয়ার মানুষের জন্য প্রস্তাবিত তিন প্রকল্প নেওয়া সম্ভব। তার জন্য বাড়তি ঋণ নিতে হবে না। বাড়তি করের বোঝাও চাপবে না রাজ্যবাসীর উপর। তৃণমূল গোয়ায় সরকার গড়তে পারলে গৃহলক্ষ্মী, যুবাশক্তি এবং মাঝে ঘর মালকি হক এই তিনটি প্রকল্প নেবে বলে জানিয়েছে। যশবন্তর দাবি, “এর জন্য আমাদের আলাদা করে আর ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এ জন্য অর্থ সংস্থান রাজ্য বাজেটেই রয়েছে। তার অনুমোদনও আরবিআই দেয়।”
[আরও পড়ুন: করোনা আবহে শেয়ার বাজারে ফের বড় ধস, প্রায় দু’হাজার পয়েন্ট পড়ল সূচক]
এই তিনটি প্রকল্পের জন্য তিন হাজার ৩৩০ কোটি টাকার প্রয়োজন। সেখানে রাজ্যের বাজেট ২৫ হাজার কোটি টাকার। তিন হাজার ৩৩০ কোটি টাকার মধ্যে বেশিরভাগের সংস্থানই রাজস্ব থেকে সম্ভব। বাকি অংশ বাজেট থেকে নিলেই হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন যশবন্ত। তাঁর কথায়, “আমি যখন কেন্দ্রে অর্থমন্ত্রী ছিলাম তখন ব্যয়বরাদ্দে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমি সামান্য ছাঁটাই করতাম। বিরোধীরা আমায় নানা কথা শোনাতো।” কী করতেন তিনি? বলছেন, “আমি প্রতি খাত থেকে দুই শতাংশ করে বরাদ্দ কমাতাম। এতে তেমন ফারাক হত না। আবার কিছু কিছু করে বাঁচিয়ে আমি রাজ্যের রাজস্বও বাড়াতাম।” গোয়ায় তাঁদের সরকার গঠন হলে, এই তিনটি প্রকল্প যাতে নিশ্চিতভাবে হয় তার জন্য সেই সরকারকে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে যথাসাধ্য সাহায্য করবেন বলে জানিয়েছেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী।