সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: মানুষের জন্য রাজনীতিতে এসেছি, কমবেশি সব নেতাদের মুখেই শোনা যায় একথা। কিন্তু কাজে ক’জন করেন? সংখ্যাটা যে নিতান্তই কম তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) ও অনুব্রত মণ্ডলের ‘কীর্তি’ ফাঁস যেন আরও বেশি করে সেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। কিন্তু কাঁকসার রানি মুর্মু ব্যতিক্রমী উদাহরণ, এক আদর্শ জনপ্রতিনিধি।
মাটির ঘর, তাও ভগ্নপ্রায়। রোদ-বৃষ্টির অবাধ আনাগোনা সেখানে। আর সেই একচিলতে ঘরেই বাস কাঁকসার মলানদিঘির মোলডাঙা আদিবাসী পাড়ার বাসিন্দা বছর ষাটেকের রানি মুর্মুর। পেশায় ভাগচাষী। দু’বেলার ভাত জোগাতে চাষ করতে হয় অন্যের জমিতে। তবে এটাই তাঁর এক মাত্র পরিচয় নয়। তিনি মলানদিঘি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান। বরাবরই মানুষের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। সেই নেশা থেকেই আস্ত একটা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের দায়িত্ব পেয়েছেন। কিন্তু আর পাঁচজন নেতার সঙ্গে তার মিল খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন। নিজের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবন নয়, সকলের জন্য কাজ করতে চান তিনি। ভালবাসেন এলাকার সকলকে। তাঁর কথায়, “আমি এলাকার সবাইকে ভালবাসি। তাই ওরাও আমাকে ভালবাসে।”
[আরও পড়ুন: হাওড়ার পাঁচলায় দুর্ঘটনায় মৃত ৩, দু’লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর]
কয়েক বছর আগেই জনপ্রতিনিধি হলেও কোনও পরিবর্তন হয়নি দরিদ্র রানির জীবনযাত্রায়। সকালে বাড়ি ও জমিতে কাজ সেরে সাইকেলে চেপে পঞ্চায়েতে যেতেন তিনি। তবে বর্তমানে অসুস্থতার কারণে সাইকেল চালাতে সমস্যা হয়। তাই এখন যাকে সামনে পান, তার সঙ্গেই চলে যান পঞ্চায়েতে। ফেরার সময়ও কেউ না কেউ বাড়ি পৌঁছে দেন। ফিরে আবার ঘরের কাজ। এভাবেই কাটে দিন। রাজনীতিবিদ পরিচয়ে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন তাবড় তাবড় নেতারা, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে গ্রামের সকলের ঘর না হলে নিজের পাকা ঘরটুকুও করতে রাজি নন রানি। পাছে লোকে কিছু বলে, তাঁর দিকে আঙুল তোলে। তাঁর সাফ কথা, “ঘর আমার দরকার। কিন্তু এখনও গ্রামের সবাই ঘর পায়নি। তাই আমি কী করে করি? সবার ঘর হওয়ার পর আমারটা হোক।”
আর এই স্বভাবের জন্যই কাঁকসাবাসীর মন জয় করে নিয়েছেন দরিদ্র উপপ্রধান। স্কুল শিক্ষিকা হোক বা জনমজুর বারবার রানী মুর্মুকেই চায় সকলে। তাঁদের একটাই দাবি, প্রতি ভোটে ফিরে আসুন রানী। সাধ্য মতো সাজিয়ে দিন তাঁদের গ্রাম।