shono
Advertisement

স্থায়ী চাকরি অলীক গুজরাটের শিল্পাঞ্চলে, শ্রমিক সংগঠনও নিষিদ্ধ মোদি-গড়ে!

শ্রমিক অধিকার নিয়ে কথা বললে 'টুকরা টুকরা গ্যাং'য়ের তকমা!
Posted: 12:25 PM Nov 30, 2022Updated: 12:26 PM Nov 30, 2022

বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, আমেদাবাদ: কয়েক হাজার চালু কারখানা। লক্ষ লক্ষ শ্রমিক। ভোরে সাইরেনের শব্দে ঘুম ভাঙে তাঁদের। গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই শুরু হয় শোষণ। সারা মাস হাড়ভাঙা খাটুনির পর মাস পয়লায় হাতে আসে বড়জোর ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। তারপরেও সংগঠন ও রাজনীতিমুক্ত কারখানার গেট। সব জেনেও চুপ বাম নেতারা। গুজরাটে (Gujarat) শোষণের বিরুদ্ধে শ্রমিক সংগঠন গড়ে তুলতে ব্যর্থ লাল ঝান্ডা। গুজরাট যেন দেশের মধ্যে আরেকটি দেশ। এখানে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কথা বলা অপরাধ। বলা হবে ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’। স্থান হবে গারদের ভিতরে। মোদি-গড়ে লাল ঝান্ডা ‘কার্যত’ নিষিদ্ধ। জানালেন সিপিএমের (CPM) রাজ্য কমিটির এক সদস্য। রয়েছে নেতৃত্বের দুর্বলতাও। তাই পার্টি এখানে থমকে রয়েছে।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গে বামেরা ক্ষমতায় থাকাকালীন কারখানার গেটে লাল ঝান্ডার দাপটে কম্পমান থাকতেন মালিকরা। তার ঠিক উলটো চিত্র শিল্প-বাণিজ্যের রাজ্য গুজরাটে। এখানে কলকারখানা আছে। প্রতিদিন চাহিদা মতো উৎপাদন আছে। শ্রমিকদের হাড়ভাঙা খাটুনি আছে। আছে মালিকপক্ষের শোষণ। তবে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে পার্থক্য একটাই। বাংলায় প্রচুর উর্বর জমি। কিন্তু গুজরাটে অধিকাংশ জমি অনুর্বর। আবার বাংলার মতো ভূমি-সংস্কার হয়নি। তাই কারখানা করতে জমির অভাব হয় না। দেশি-বিদেশি উদ্যোগপতিরা শিল্প করতে তাই আসেন মোদি-গড়ে। আর এই রাজ্যের কলকারখানায় শ্রমিক আমদানি হয় সাধারণত বিহার, রাজস্থান, বাংলা ও মহারাষ্ট্র থেকে। শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে রয়েছে ঠিকাদাররা। সংস্থা কর্তৃপক্ষ সরাসরি নিয়োগ করে না। করলেও কোনওরকম শ্রমিক সংগঠন করা যাবে না বলে কার্যত মুচলেকা দিতে হয়।

[আরও পড়ুন: লিভ-ইন সঙ্গী শ্রদ্ধাকে নৃশংসভাবে খুন করে আক্ষেপ নেই আফতাবের, জানালেন আধিকারিকরা]

আমেদাবাদ (Amedabad) শহরের অদূরেই বটোবা শিল্পতালুক। দেশের প্রথম স্বনামধন্য ডিটারজেন্ট পাউডার কারখানা এখানেই। ঘড়ির কাঁটা পাঁচটা বাজতেই জেল থেকে মুক্তি পাওয়া আসামির মতো কয়েকশো শ্রমিক বেরিয়ে এলেন। তারমধ্যেই খুঁজে পাওয়া গেল কোলাঘাটের বাসিন্দা সঞ্জয় প্রধান ও সঙ্গীদের। কেউ বাঁকুড়া, কেউ মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা। ঠিকাদারের হাত ধরে কাজের সন্ধানে সঞ্জয়ের আমেদাবাদে পা রাখা পনেরো বছর আগে। এতদিন পর এখনও ঠিকা শ্রমিক। পড়াশোনা শেষ করে কাজের সন্ধানে মোদি-রাজ্যে আসেন নদিয়ার জয়ন্ত প্রামাণিক। ডিটারজেন্ট কারখানার করণিক। কিন্তু অস্থায়ী কর্মী। যতদিন কাজ ততদিনের বেতন চুক্তিতে। কাজের কোনও নিরাপত্তা নেই। তাহলে দাবিদাওয়া আদায়ে শ্রমিক সংগঠন করেন না কেন। প্রশ্ন শুনে অবাক জয়ন্ত জানান, সংগঠন তৈরি হচ্ছে এমন কথা কর্তৃপক্ষের কানে গেলেই বসিয়ে দেবে। এখানে কাজ করো, বেতন নাও। অন্যথা নতুন কাজ খুঁজে নাও। গোটা গুজরাট জুড়েই এই নিয়ম। ‘শেঠ’রাই শেষ কথা। এখানে ঝান্ডাবাজি চলবে না। নিয়োগের সময়েই মুচলেকা দিতে হয়।

[আরও পড়ুন: NDTV’র রাশ এবার আদানির হাতে! পর্ষদ থেকে ইস্তফা দিলেন প্রণয় রায় ও রাধিকা রায়]

এমন পরিস্থিতি অথচ বামপন্থীদের হাল এমন কেন? সিটু নেতা ও সিপিএমের আমেদাবাদ জেলা সম্পাদক জানান, কাজ চলে যাওয়ার ভয়ে শ্রমিকরা সংগঠন করেন না। যাঁরা করেন, গোপনে করেন। নাম প্রকাশ করা চলবে না। এখানকার সিপিএম ও সিটুতে বহু বাঙালি সদস্য রয়েছে। তাঁরাও প্রকাশ্যে সিপিএম করার কথা বলতে ভয় পান। কারণ লাল ঝান্ডা এই রাজ্যে অলিখিতভাবে নিষিদ্ধ। তাই শ্রমিকদের মধ্যে অনেক চেষ্টা করেও সংগঠন গড়ে তোলা যাচ্ছে না। তার ওপর রয়েছে গেরুয়া বাহিনীর দাপট। এমনকী সংঘের (RSS) শ্রমিক শাখাও গুজরাটে সংগঠন মজবুত করতে পারেনি বলে জানান।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement