দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: তিনদিনের লম্বা ছুটি। দোলে বাক্স প্যাঁটরা গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন অনেকেই। কলকাতার কাছেপিঠে বলতে দিঘা থেকে দার্জিলিং ভিড়ে ঠাসা। কিন্তু সুন্দরবনে বিপরীত ছবি। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ডেরায় ছুটি কাটানোর ক্ষেত্রে বাদ সেধেছ অনুমতিপত্র। বিভিন্ন সময়ে এই অনুমতিপত্র নিয়ে কালোবাজারি হয়। এবার তা আরও প্রকট। ফলে সুন্দরবন ভ্রমণের জলযানগুলি অনুমতিপত্র পাইনি। আর তাই বহু পর্যটককে বাতিল করতে হয়েছে সুন্দরবন ভ্রমণের পরিকল্পনা। তার ফলে বহু হোটেল, বোট পড়ে আছে খালি। পর্যটকরা যেমন বঞ্চিত হচ্ছেন তেমনই আবার আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সুন্দরবন ভ্রমণে কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে জঙ্গলে ঘোরার জন্য মাথাপিছু ১৮০ টাকা ছাড় পান পর্যটকরা। অন্যদিকে জঙ্গলে ঘোরার বোটের সংখ্যা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবন ভ্রমণ ব্যবসায়ী মৃত্যুঞ্জয় অধিকারী বলেন, "নির্দিষ্ট সময়ে অনুমতি করানো হয়নি বলে বহু মানুষ সুন্দরবন ঘুরতে আসতে পারছেন না। অথচ প্রতি বছর আমরা দোলে বহু মানুষকে সুন্দরবনে ঘুরিয়ে থাকি। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অনুমতিপত্র নিজেদের মতো করে তৈরি করে রেখেছেন বলে এই সমস্যা।" সুন্দরবন টাইগার ক্যাম্পের সিইও বলেন, "অনুমতিপত্র এখন অনলাইনে করতে হয়। তাই আগেভাগেই বেশ কয়েকজন সাইবার ক্যাফের মালিক অনুমতি নিয়ে রেখেছেন। অথচ তাঁদের কাছে কোনও পর্যটকের বুকিং নেই। পরবর্তীকালে মোটা টাকার বিনিময়ে ওই অনুমতিপত্র বিক্রি করছেন। তার ফলে আদতে যাঁরা পর্যটক নিয়ে যেতে চান, তাঁরা পারছেন না।"
দোলের পর্যটনের বুকিং শুরু হয় মাসখানেক আগে। বুকিং শুরু হওয়ার মিনিট দশেকের মধ্যে অনুমতিপত্র দেওয়ার কাজ শেষ। অর্থাৎ ১০ মিনিটের মধ্যে ২৩০টি বোট যাতায়াত অনুমতি দেওয়া হয়ে গিয়েছে। এই কারচুপির কথা বনদপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের জানানো হয়েছে। পরিবেশ দপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, সুন্দরবনের মতো হেরিটেজ জঙ্গলে ঘোরার জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক বোটের অনুমতি দেয় ব্যাঘ্র প্রকল্প দপ্তর। বাস্তবে যেকটি বোটকে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, সেগুলি জঙ্গলে ঢুকছে না। অথচ নির্দিষ্ট দিনে সেই বোটগুলি তাদের ভ্রমণ বাতিল করে দিচ্ছে। কিন্তু যাঁরা বুকিং করে জলপথে সুন্দরবন ঘুরে দেখার পরিকল্পনা করেছেন, তাঁরা পারছেন না। এ বিষয়ে ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর জাস্টিন্স জোন্স বলেন, "অনলাইনে অনুমতিপত্র দেওয়া হয়। তাই কারচুপি হচ্ছে কিনা, তা বোঝা সম্ভব হয় না। কতগুলি বোট অনুমতি নিচ্ছে আর কতগুলি যাচ্ছে, কালোবাজারি চলছে কিনা, সেই সমস্যা সমাধান স্থানীয় ব্যবসায়ীদেরই করতে হবে।