সব্যসাচী ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: দার্জিলিং ঘুরেছেন, মিরিকও দেখা। সদ্য পরিচিতি পাওয়া লামাহাটাও কেউ কেউ ঢুঁ মেরেছেন। বর্ষশেষে পাহাড় টানছে। তবে এমন একটা জায়গায় যাওয়া চাই যেখানে সচরাচর কেউ যায়নি। এমনই এক জনপদের বৃত্তান্ত রইল আজকের টোটোয়।

[হাত বাড়লেই সবুজের রাজ্য, মন ভাল করার রসদ জঙ্গলমহলে]
কমলার গ্রাম
গ্রামে পা রাখলেই স্বাগত জানাবে গাছে ঝুলে থাকা থোকা থোকা কমলালেবু। সেসব এড়িয়ে ঢুকলেই চোখের সামনে দিগন্তবিস্তৃত সবুজে ঢাকা পাহাড়। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি। শহুরে ব্যস্ততার আবডালে কার্শিয়াং পাহাড়ের কোলে দাঁড়িয়ে থাকা এই ছোট্ট জনপদের রং আক্ষরিক অর্থেই কমলা। নাম সিটং।
‘আন-টাচ’ সিটং
গাড়ির কালো ধোঁয়া উড়িয়ে দল বেঁধে পর্যটকদের খুব একটা দেখা মিলবে না এখানে। আর পাঁচটা পর্যটনকেন্দ্রের থেকে এখানেই অমিল সিটংয়ের। মেঘের কাছাকাছি নীরব আলস্য গায়ে মেখে রয়েছে গ্রামটি। আক্ষরিক অর্থেই এখনও অনেকটাই অনাস্বাদিত, শহুরেদের কাছে ভার্জিন। যে দিকে চোখ যায় শুধু কমলার বাগান। এখানকার মূল বাসিন্দা লেপচারা। বেশিরভাগ বাড়িই কাঠের। আর সবার মধ্যে মিল হল কমলালেবু। প্রত্যেক বাড়িতেই রয়েছে কমলালেবুর বাগান।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় চার হাজার ফুট উঁচু এই ছবির মতো সাজানো গ্রামটিতে অনেকেই যান পাহাড়ি প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে। ভালভাবে শ্বাস নিতে। অনেকেই বলেন, পড়ন্ত বিকেলে নিস্তব্ধ সিটংয়ে না কি কান পাতলে গাছেদেরও কথা বলতে শোনা যায়। কী দেখবেন সিটংয়ে? তার অবশ্য লম্বা-চওড়া তালিকা নেই। একটা চার্চ। স্থানীয়রা বলেন আগে এলাকায় একটি ১০০ বছরের পুরনো বাঁশের চার্চ ছিল। সেই জায়গাতেই চার্চের পাকা ভবন গড়ে উঠেছে। অনেকেই ভোর বা সূর্যাস্তের সময় চার্চের নিস্তব্ধতা উপভোগ করেন। আর রয়েছে সরু একফালি নদী। স্থানীয়দের ভাষায় রিয়াং খোলা। যারা গিয়েছেন, তারা বলেন নদীর ধারে বসলে সময় কোথা দিয়ে কেটে যায় তা বোঝাই যায় না। এরপরও হাতে একটু সময় থাকলে ঘুরে আসা যায় সিটং থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত মংপু থেকেও।
[সমুদ্রপাড়ে তাঁবুতে রাত্রিবাস, এমন দিঘা কখনও দেখেছেন?]
কোথায় থাকবেন?
পর্যটকদের থাকার জন্য সিটংয়ে এখন গড়ে উঠেছে বেশ কিছু হোম স্টে। একটি সোসাইটির মাধ্যমে এই হোম স্টে গুলি পরিচালিত হয়। বুকিংও করতে হয় সোসাইটির মাধ্যমেই।
খাওয়ার কী ব্যবস্থা?
চোখের খিদে মিটল, কিন্তু পেটের খিদে কীভাবে মেটাবেন? তার ব্যবস্থাও বেশ ভাল। পুরোপুরি জৈব পদ্ধতিতে তৈরি সবজির বিভিন্ন স্থানীয় ডিশ চেখে দেখতে পারেন। রসনা অনুযায়ী মিলতে পারে দেশি মুরগীও। বড়দিন আর নতুন বছরের কয়েক দিনের ছুটিতে পর্যটকদের গন্তব্য হতেই পারে অচেনা সিটং।
[মাঝ ডিসেম্বরে শীত শীত ভাব, এই ফাঁকে চুপিসারে চলুন ‘চুপি’]
কোন পথে যাবেন সিটং?
শিলিগুড়ি থেকে সিটং যাওয়ার তিনটি পথ রয়েছে। সেবক, কালিঝোরা, লাটপাঞ্চার হয়ে ৫৫ কিলোমিটার পথ পার হয়ে পৌছনো যায় সিটংয়ে। আবার শিলিগুড়ি থেকে রম্বি, মংপু হয়ে সিটংয়ের রাস্তা গিয়েছে। এই পথে দূরত্ব পড়বে ৭৫ কিলোমিটার। আবার কার্শিয়াং থেকেও যাওয়া যায়। এই রুটে দিলারাম, বগোড়া হয়ে গেলে ৭৮ কিলোমিটার দূরত্বে পড়বে এই পাহাড়ি জনপদ। যেখানে যাওয়ার পথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে চোখ জুড়িয়ে যাবে।
The post পাহাড়ে একঘেয়েমি? অন্য স্বাদের খোঁজ পেতে চলুন সিটং appeared first on Sangbad Pratidin.