বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: সিকিমে ধর্মীয় পর্যটনের রুদ্ধদুয়ার ফের খুলছে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে রবিবার থেকে পূর্ব সিকিমের নাথু-লা পাস দিয়ে কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রার প্রস্তুতি শুরু করবে অভিযাত্রী দল। ২০২০ সালে শেষ যাত্রা হয়েছিল। জানা গিয়েছে, রবিবার গ্যাংটকে পৌঁছবেন প্রথম ব্যাচের ৫০ জন অভিযাত্রী। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং ‘ফ্ল্যাগ অফ’ করে তাঁদের স্বাগত জানাবেন। অভিযাত্রীরা ভারত সীমান্ত পার হবেন ২০ জুন। তার আগে চলবে উঁচু পাহাড়ি পথ পরিক্রমার প্রস্তুতি। সিকিম প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পুণ্যার্থীদের জন্য চিকিৎসা ও নিরাপত্তার সবরকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সিকিম পর্যটন দপ্তরের এক কর্তা জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের তৎপরতায় চিন সরকারের সম্মতিতে মানস সরোবর যাত্রা পথ খুলে যাওয়ায় ধর্মীয় পর্যটন সমৃদ্ধ হবে।
সিকিম রাজ্য পর্যটন দপ্তরের সচিব সিএস রাও জানান, পুণ্যার্থীদের জন্য চিকিৎসা, নিরাপত্তা এবং উচ্চতাজনিত সমস্যা সমাধানের সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গ্যাংটক ও নাথু-লায় তৈরি করা হয়েছে ‘অ্যাক্লাইমেটাইজেশন সেন্টার’। যেখানে অভিযাত্রীরা উচ্চতার ঝক্কি সামলে নিতে পারবেন। সিকিম প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কৈলাস পর্বত তিব্বতের নাগারি প্রিফেকচারে অবস্থিত। পর্বতের চূড়ার উচ্চতা ২১,৭৭৮ ফুট। অভিযাত্রীরা কৈলাস পর্বতের চারপাশের ৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ পরিক্রমা করবেন। প্রদক্ষিণ শুরু হবে দারচেন থেকে। সেখানেই শেষ হবে। এটি ১৫,৩২০ ফুট উঁচু। সর্বোচ্চ বিন্দু দ্রোলমা গিরিপথ, উচ্চতা ১৮,৫৪০ ফুট। এটি প্রদক্ষিণে গড়ে তিনদিন সময় লাগে। প্রথম দিনের ট্রেকিং দারচেন থেকে দিরাপুক গোম্পা পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার। দ্বিতীয় দিনে দিরপাউক থেকে জুতুলফুক পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার। শেষ দিনে দারচেনে ফিরে আসা।
১৯৬২ সালে চিন-ভারত যুদ্ধের পর প্রায় দুই দশক বন্ধ ছিল মানস সরোবর যাত্রা। ১৯৮১ সালে ভারত ও চিন সরকারের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে তীর্থযাত্রা শুরু হয়। এরপর ২০১৭ সালের ডোকলাম সংঘর্ষ, ২০২০ সালে গালওয়ান সংঘর্ষ এবং কোভিড অতিমারির জেরে নাথু-লা রুটে মানস সরোবর যাত্রা ফের বন্ধ হয়। এবার সেই জট কাটছে। সিকিম প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম পর্যায়ে পাঁচটি দল যাত্রা করবে। প্রতিটি দলে ৫০ জন অভিযাত্রী থাকবেন। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে ১০টি দল যাবে। যাত্রার আগে প্রতিটি দলের সদস্যদের উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে নির্দিষ্ট সময় নাথু-লায় থাকতে হবে। এরপর অভিযাত্রী দল সীমান্ত অতিক্রম করবেন। নাথু-লা থেকে মানস সরোবরের দূরত্ব প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার। এই পথে ৩৫ কিলোমিটার ট্রেকিং রুট। বাকি পথ সড়কপথে গাড়িতে। কৈলাস পর্বতে পৌঁছতে ৫২ কিলোমিটার ট্রেক করতে হবে। সময় লাগে তিনদিন। নাথু-লা দিয়ে অভিযাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছতে সময় লাগবে ২১ দিন। মানস সরোবর এবং কৈলাস পর্বত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছেও আকর্ষণীয়। সিকিম পর্যটন দপ্তরের কর্তাদের আশা, মানস সরোবর যাত্রা ফের চালু হওয়ায় দেশ-বিদেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পর্যটকদের ভিড় বাড়বে।
