স্টাফ রিপোর্টার: হুগলির যুব নেতা কুন্তল ঘোষের (Kuntal Ghosh) বক্তব্যে অসঙ্গতি। তাই মানিক ভট্টাচার্য ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডলকে তলব করে মুখোমুখি জেরা সিবিআইয়ের। মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত দু’জনকে জেরা করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)। ইডি সূত্রের খবর, আধিকারিকদের সামনেই কুন্তল ও তাপস একে অন্যের দিকে আঙুল তুলে দোষারোপ করতে থাকেন।
কুন্তলের দাবি, তিনি টাকা দিয়েছেন তাপসকে। তাপসের পালটা দাবি, তিনিই চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলে দিয়েছেন কুন্তলকে। একইসঙ্গে তাপসের সঙ্গী নীলাদ্রি ঘোষ নিয়েও ইডি তাঁকে প্রশ্ন করেন। ইডির ধারণা, নীলাদ্রি তাপসের হয়েই চাকরিপ্রার্থীদের থেকে টাকা তুলতেন। অবশ্য নীলাদ্রি যে তাঁর হয়ে কাজ করতেন, তা ইডির কাছে স্বীকার করেছেন তাপস। তাই নীলাদ্রির ভূমিকা জানতে এবার ওই ব্যক্তিকেও তলব করে ইডি জেরা করতে পারে। এদিকে, ইডির সূত্র জানিয়েছে, কুন্তলের টেবিলের ড্রয়ার থেকে তিনটি পেন ড্রাইভ উদ্ধার হয়েছে। সেখানেও সাংকেতিক ভাষায় রয়েছে বেশ কিছু নাম ও তথ্য। সেগুলি উদ্ধারের জন্য ইডি সাইবার বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিচ্ছে।
নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআইয়ের হাতে ধৃত কুন্তল ঘোষ প্রথম থেকেই দাবি তোলেন, মানিক-ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডল বেসরকারি বিএড ও ডিএলএড কলেজের সংগঠনের নেতা হওয়ার সুবাদে তাঁকে টাকা দিতে হত। তাপস মণ্ডল ও তাপস মিশ্র নিউটাউনে কুন্তলদেরই একটি ফ্ল্যাটে লকডাউন গোটা সময়টা কাটিয়েছেন। এই দাবি অস্বীকার করেন তাপস মণ্ডল। কুন্তলের দাবি, তাপস মণ্ডল ও তাঁর সঙ্গী নীলাদ্রি ঘোষ ৫০ লক্ষ টাকা তোলা নিয়েছেন তাঁর কাছ থেকে। এই ব্যাপারে তাঁর কাছে প্রমাণও রয়েছে।
[আরও পড়ুন: গ্রুপ সি-র নিয়োগ দুর্নীতি: মিডলম্যান প্রসন্ন-প্রদীপকে জেলে গিয়ে জেরা করবে CBI]
প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরে তাপস দাবি করেন যে, তিনি বহু চাকরিপ্রার্থী ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে প্রচুর টাকা তুলে কুন্তলকে দিয়েছেন। কিন্তু কুন্তল সব ক্ষেত্রে চাকরি দিতে না পারায় প্রার্থীরা টাকা ফেরত চান। সেই টাকাই তিনি কুন্তলের কাছ থেকে চেয়েছেন। কারণ, চাকরিপ্রার্থীরা তাঁর উপরই চাপ সৃষ্টি করছিলেন। যদিও কুন্তল ইডিকে জানান যে, তাপস ও নীলাদ্রি দু’জন মিলেই তাঁকে সিবিআই ও ইডিকে দিয়ে গ্রেপ্তার করানোর হুমকি দিয়ে ক্রমাগত তোলাবাজি করতেন।
যদিও ইডির প্রশ্নে এই বিষয়টি তাপস অস্বীকার করেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময়ই ইডি আধিকারিকদের সামনে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন কুন্তল ও তাপস। কখনও মেজাজ হারিয়ে ফেলেন তাপস। যদিও তাপসের দাবি, তাঁর একাধিক বিএড ও ডিএলএড কলেজে প্রচুর ছাত্রছাত্রী রয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই তাপসের কাছে এসে কীভাবে চাকরি পাওয়া যায়, সেই প্রশ্ন করেন।
তাপসের দাবি, টাকা দিয়ে স্কুলে শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীর চাকরি পাওয়াটাই অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। তাই তিনি ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিতেন। যেখানে টাকা দিলে ছাত্রছাত্রীরা চাকরি পেতে পারেন, সেখানেই তাঁদের পাঠিয়ে দেওয়া হত। বিষয়টি উচিত না কি অনুচিত, তা তাপস কখনও বিবেচনা করেননি বলে দাবি। এই বিষয়ে আরও তথ্য পেতে দু’জনকে ফের জেরা করা হতে পারে বলে জানিয়েছে ইডি।