স্টাফ রিপোর্টার: প্রচণ্ড পেটে ব্যথা। হজমের ট্যাবলেটের স্ট্রিপ শেষ করেও লাভ হয়নি। ব্যথা এতটাই বাড়ত যে, চিৎকার করে পাড়ায় মাথা তুলতেন নহসিন আরফা। উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার বাসিন্দা পেটব্যথা নিয়েই ভরতি হয়েছিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। কে জানত বছর তিরিশের মহিলার পেটব্যথার নেপথ্যে ডারময়েড সিস্ট উইথ টরসান। অর্থাৎ ক্রিকেট বলের সাইজের দু’দুটো টিউমার।
ডিম্বাশয়ের ডানদিকেরটা ন’সেন্টিমিটার, বাঁদিকেরটা সাত সেন্টিমিটার। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ বিভাগের চিকিৎসক ডা. প্রিয়াঙ্কা সান্যালের তত্ত্বাবধানে হয়েছে অস্ত্রোপচার। টিমে ছিলেন ডা. সঞ্চারী ঘোষ ও ডা. গোকুল রমণ। ডা. প্রিয়াঙ্কা সান্যাল জানিয়েছেন, দু’টো টিউমারের একটা ডারময়েড ,অন্যটা সাধারণ। সঠিক সময়ে অস্ত্রোপচার না হলে সেপসিস হয়ে মৃত্যু হতে পারত রোগীর। সাধারণত সিস্টের কারণে ঋতুস্রাব অনিয়মিত হয়। কিন্তু নহসিনের তা হচ্ছিল না। সে কারণেই এতদিন বুঝতে পারেননি তিনি।
[আরও পড়ুন: ‘১২ ডিসেম্বর লালন শেখের মৃত্যু হবে, জানত শুভেন্দু’, হাজরার সভায় বললেন চন্দ্রিমা]
নহসিনের বাড়ির লোকের জানিয়েছেন, মারাত্মক পেটব্যথাই ছিল একমাত্র উপসর্গ। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ বিভাগের আডটডোরের রোগীর সংখ্যায় দেখা যাচ্ছে, প্রতি একশোজন মহিলার মধ্যে গড়ে বারোজন ডিম্বাশয়ের সিস্টে আক্রান্ত। কী এই সিস্ট? কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ব্রেস্ট অ্যান্ড এন্ডোক্রাইন বিভাগের চিকিৎসক ডা. ধৃতিমান মৈত্র জানাচ্ছেন, ডিম্বাশয়ে জলভরা বেলুনের মতো মাংসপিণ্ডকেই বলা হয় সিস্ট। এই সিস্ট নানা ধরনের।
তবে যে তিন ধরনের সিস্ট দেখা যায় তা হল অপারেশনাল সিস্ট, ডার্ময়েড সিস্ট এবং এন্ডোমেট্রিওমাস সিস্ট। চিকিৎসকরা বলছেন, মূলত হরমোনের সমস্যা থেকেই সিস্টের সৃষ্টি। মেয়েদের ডিম্বাশয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত অ্যান্ড্রোজেন তৈরি হলে সিস্টের জন্ম হয়। কী করে বোঝা যাবে সিস্ট হয়েছে? স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনিয়মিত ঋতুস্রাব বা ঋতুস্রাবে অতিরিক্ত রক্তপাত, অথবা থেকে থেকে অস্বাভাবিক পেটব্যথা হলে সচেতন হতে হবে। এড়িয়ে না গিয়ে যোগাযোগ করতে হবে চিকিৎসকের সঙ্গে।
ডা. প্রিয়াঙ্কা সান্যালের কথায়, অতিরিক্ত পেটব্যথা হলে আল্ট্রাসাউন্ড করে নেওয়াই দস্তুর। অপরিণত ডারময়েড সিস্ট ক্যানসারও হতে পারে। চিকিৎসকরা বলছেন, এমন সিস্ট থাকলে কিছু জরুরি রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। তাতে দেখে নেওয়া যায় ক্যানসারের কোষ আছে কিনা।