ধীমান রায়, কাটোয়া: শিবরাত্রি উপলক্ষে গঙ্গাস্নানে যাওয়াই কাল! জলে নেমে তলিয়ে গেলেন দুই বন্ধু। ঘাটে বসে অসহায়ভাবে তা দেখল একজনের ভাই। বুধবার মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের দাঁইহাটে। একজনের দেহ উদ্ধার করা গেলেও অন্যজনের খোঁজে তাল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই বন্ধুর নাম সুমন সাহা। বয়স ২১ বছর। তিনি দাঁইহাটের ৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বেরা এলাকায় বাসিন্দা। কাটোয়া কলেজের বি এ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। অন্যজনের নাম অর্ঘ্য সাহা। বয়স ২২ বছর। দাঁইহাটের দেওয়ানগঞ্জ এলাকায় বাড়ি অর্ঘ্যর। ল ক্লার্কের কাজ করতেন।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে সুমন ও অর্ঘ্য দুজনেই শিবরাত্রির ব্রতপালন করছিলেন। এদিন সকাল পৌনে এগারোটা নাগাদ দাঁইহাট ফেরিঘাটে ভাগীরথী নদীতে স্নান করতে গিয়েছিলেন। সুমন তাঁর বাবার বাইকটি নিয়ে যান। স্নান করতে যাওয়ার সময় সুমন তাঁর ভাই অয়নকে সঙ্গে করে নিয়ে যান। তবে অয়নকে ঘাটে বসে থাকতে বলে দুই বন্ধু স্নান নামেন। অয়ন দুজনের পোশাক ও মোবাইল ফোনগুলি আগলে বসেছিল। সেই সময় একটি বার্জ যেতেই ঢেউয়ের অভিঘাতে তলিয়ে যেতে থাকে অর্ঘ্য। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে নদীতে তলিয়ে যান সুমন। অয়ন বলে," দাদারা স্নান করার সময় কিছুটা দূরে একটি বার্জ যাচ্ছিল। তখন জলে খুব ঢেউ উঠেছিল। অর্ঘ্য দাদা ঢেউয়ে তলিয়ে যেতে যেতে চিৎকার করে ওঠে। ডুবে যাচ্ছে বুঝতে পেরেই দাদা ওকে বাঁচাতে যায়। তখন দাদাও তলিয়ে যায়।"
দুজনকে তলিয়ে যেতে দেখে ও অয়নের চিৎকার শুনে ছুটে আসেন অনেকে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন জলে নেমে উদ্ধারকার্য শুরু করেন। তাঁরাই সুমনকে কিছুক্ষণ পরে উদ্ধার করে। তাঁকে কাটোয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ ও ডুবুরির দল। অর্ঘ্যর সন্ধানে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
এদিকে এই ঘটনার জেরে প্রশাসনিক গাফিলতির অভিযোগও উঠেছে এলাকায়। স্থানীয়দের অভিযোগ একেই দাঁইহাটে ভাগীরথী নদীতে উপযুক্ত কোনও স্নানঘাট নেই। ফেরিঘাটের কাছে যেখানে সুযোগ পাওয়া যায় স্নান করতে হয়। তার উপর এই উৎসবের মরশুমে পুন্যার্থীদের ভিড় বেশি থাকা সত্বেও পুলিশ পাহাড়া বা সিভিল ডিফেন্সের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। থাকলে হয়তো দুই যুবককে উদ্ধার করা যেত। দুর্ঘটনার পর থেকেই দাঁইহাটে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।