সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ৮৬’র সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কথা এখনও ভোলেনি ইউরোপ (Europe)। হাজার হাজার মানুষ যার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে আজও। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের আবহে সেই দুঃসহ স্মৃতি যেন ফের টাটকা হয়ে উঠছে। ফের ভয়াবহতার আশঙ্কায় কাঁপছে গোটা ইউরোপ। রাশিয়া চেরনোবিল দখল করার পর সেখানকার পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রের আশাপাশে হু হু করে বাড়ছে তেজস্ক্রিয় গামা রশ্মির (Gamma Ray) বিকিরণ। যার ফলে ফের ভয়াবহতার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইউক্রেনের দাবি, চেরনোবিলের (Chernobyl ) পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র ও তার লাগোয়া এলাকাগুলিতে তেজস্ক্রিয় গামা রশ্মির বিকিরণের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে প্রায় ২০ গুণ বেড়ে গিয়েছে। যদিও এই বিকিরণ আপাতত শুধুমাত্র চেরনোবিলের আশেপাশের এক্সক্লুসন জোনেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু এভাবে বিকিরণ বাড়তে থাকলে তা যে দ্রুত এক্সক্লুসন জোনের বাইরে চলে যাবে, সেটা বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না। এক্সক্লুসন জোনের (Exclusion Zone) বাইরে লোকালয়ে বিকিরণ চলে এলে ফলাফল রীতিমতো ভয়ংকর হতে পারে। প্রাণহানি, পক্ষাঘাত, পঙ্গুত্ব, কোনও কিছুই বাদ যাবে না।
[আরও পড়ুন: দেশ রক্ষায় চরম বলিদান ইউক্রেনের সৈনিকের! রুশদের ঠেকাতে শরীরে বোমা বেঁধে ওড়ালেন ব্রিজ]
কিন্তু কেন এভাবে বিকিরণ বাড়ছে চেরনোবিলের এক্সক্লুসন জোনে? কিয়েভের অদুরের এই শহর রাশিয়া দখল করলেও এখনও পরমাণু উৎপাদন কেন্দ্রে হাত দেয়নি। সেটি অক্ষতই আছে। যদিও আমেরিকা ইতিমধ্যেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে রাশিয়া বহু কর্মীকে ওই পরমাণু উৎপাদন কেন্দ্রে আটকে রেখেছে। কিন্তু মুশকিল হল পরমাণু উৎপাদন কেন্দ্রের এক্সক্লুসন জোনের বাইরে রাশিয়া (Russia) এবং ইউক্রেন সেনার যুদ্ধ চলছে। মাঝে-মাঝেই গোলা-বারুদ-মিসাইল এসে পড়ছে ওই এক্সক্লুসন জোনে। বেলারুশ-ঘেঁষা ইউক্রেনের উত্তর সীমান্ত থেকে ছুটে আসছে প্রচুর রুশ ক্ষেপণাস্ত্র। ইউক্রেনের দাবি, এই গোলাবারুদের জেরেই এক্সক্লুসন জোনে গামা রশ্মির বিকিরণ বেড়ে গিয়েছে। তাছাড়া রাশিয়া চেরনোবিল দখল করার পর ভয়ংকর তেজস্ক্রিয় বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করতে পারছে না। সেকারণেও বাড়তে পারে বিকিরণ।
[আরও পড়ুন: ইউক্রেন আক্রমণের নেপথ্যে ‘ধর্মীয়’ যোগ! পুতিনকে ঘিরে প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য]
বলে রাখা দরকার, ১৯৮৬ সালে দু’-দু’টি ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রটির পরমাণু চুল্লি। সেই বিস্ফোরণে চুল্লির উপরের প্রায় দু’হাজার টন ওজনের ধাতব ঢাকনাটি উড়ে যায় এক লহমায়। সেই বিকিরণ ছড়িয়ে পড়ে ১ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায়। হাজার হাজার মানুষ এতে প্রাণ হারান, ক্ষতিগ্রস্ত হন। ওই এলাকাকে আগামী কয়েক হাজার বছর বসবাসের উপযুক্ত করা যাবে না। সেকারণেই ওই এলাকাকে এক্সক্লুসন জোন হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। আপাতত ওই এক্সক্লুসন জোনে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ বৃদ্ধি পেয়েছে।