পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য৷ এমনই কিছু বাছাই করা প্রাচীন বাড়ির পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির Sangbadpratidin.in৷ আজ রইল বড়তোড়িয়া গ্রামে মণ্ডলবাড়ির দুর্গাপুজোর কথা।
চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: যোড়শ শতক থেকেই বাংলার ধনী পরিবারগুলির দুর্গাপুজো ‘বনেদি বাড়ির পুজো’ নামে পরিচিত। পরে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের হাত ধরে সামাজিক চেহারা নেয় ‘বনেদি বাড়ির পুজো’। সেই ইতিহাস নেই, কিন্তু ঐতিহ্য বর্তমান। ২৫২ বছর আগে যে পুজো সামন্ত রাজারা শুরু করে গিয়েছিলেন তার পরম্পরা আজও অব্যাহত। আসানসোলের বড়তোড়িয়া গ্রামে মণ্ডলবাড়ির দুর্গাপূজায় মিলবে সেই ঐতিহ্যের স্বাদ।
জমিদার বাড়ি নেই। কিন্তু পরিবারের ৩০৯ জন সদস্যের সম্মিলিত দুর্গাপুজো আজ সামাজিকতায় পরিণত হয়েছে। এই পরিবারের একটি নয়, দুটি দুর্গাপুজো, হয়ও একসঙ্গে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শেরগড় পরগনার (বর্তমানে পশ্চিম বর্ধমান) সামন্ত রাজা ছিলেন তাঁদের পূর্বপুরুষরা। হেমসুন্দর, বদনসুন্দর ও কান্ত নামে তিনভাই মণ্ডল পরিবারে প্রথম দুর্গাপুজো চালু করেছিলেন। কিন্তু মেজভাই বদনসুন্দরের ৬ মেয়ের পর পুত্রসন্তানের আশায় মা দুর্গার কাছে মনস্কামনা করেছিলেন। মানতের সেই পুত্রসন্তান ‘কাঙালচন্দ্র’ জন্মানোর পর বদনসুন্দর আলাদা করে দু্র্গামন্দির তৈরি করে পুজো শুরু করেন। তখন থেকেই মণ্ডলদের দুটি দুর্গাপুজোর প্রচলন।
[ডিজে-র তালে বার ডান্সারের উদ্দাম নাচ, পরিবেশ বিধি ভেঙে বিতর্কে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প]
পরিবারের মহিলা সদস্যা রিনা মণ্ডল জানান, পাঁচদিনই ভোগ হয়। তবে বিশেষ বৈশিষ্ট হল, মণ্ডলদের পুজোয় অষ্টমীর ভোগ রাঁধেন পুরুষরা। এটাই পরম্পরা। পাঁচদিনেই মায়ের ভোগ খেতে আসেন পঞ্চগ্রামের মানুষ। ষষ্ঠীতে অধিবাসের ভাত দিয়ে শুরু দশমীতে মৎস্য ও খই চিড়ে দিয়ে মহাভোগের শেষ। রেওয়াজ অনুযায়ী পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যকে দশমীর সকালে জ্যান্ত চ্যাং মাছ দেখে উঠতে হয়। সেই মাছেরই ভোগ নিবেদন হয় দশমীতে। মায়ের মুখে পোড়া মাছের ভোগ নিবেদন না করলে বিদায় দেওয়া হয় না। পরিবারের সদস্য আশিস মণ্ডল জানান, দশমীর সকালে নবপত্রিকা বিসর্জনের সময় জলাধারের উপরের আকাশে শঙ্খচিল উড়তে দেখা যায়। তারপরেই ঘট ও নবপত্রিকার বিসর্জন হয়। পরিবারের নবীন সদস্যা দেবিকা মণ্ডল জানান, সপ্তমীর সন্ধ্যায় চণ্ডীমণ্ডপে জলসার নিয়ম রয়েছে। তার আগাম প্রস্তুতি হিসাবে দু’মাস আগে থেকেই নাটক ও অনুষ্ঠানের রিহার্সাল শুরু হয়ে গিয়েছে। পরিবারের সদস্যরাই সেই নাটক পরিবেশন করবেন। সদস্যদের অনেকেই কর্মসূত্রে ও পড়াশোনা জন্য জেলা বা রাজ্যের বাইরে থাকেন। পুজোর টানে সবাই আসেন বড়তোড়িয়ায়।
[পঞ্চায়েতে জয়, রাতারাতি নীল-সাদা অফিস গেরুয়া-সবুজ!]
The post ২৫২ বছর ধরে জোড়া দুর্গার পুজো, আসানসোলের মণ্ডলবাড়িতে ঐতিহ্যের স্বাদ appeared first on Sangbad Pratidin.
