অভিরূপ দাস: দৈনিক মাথাপিছু ১৫০ লিটার জলেই কাজ চলে যেত কলকাতাবাসীর। কিন্তু রেকর্ড ভাঙা গরমে সে চাহিদা এখন তিনগুণ। কেউ দিনে তিনবার স্নান করছেন। দরদর করে ঘেমে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেকটাই বেশি জল খেতে হচ্ছে শহরবাসীকে। রাস্তায় বেরলে ঘাম সপসপে জামা কাঁচতেও হচ্ছে রোজ। এমন নানান কারণে এই মুহূর্তে কলকাতাবাসীর জলের চাহিদা মাথাপিছু দৈনিক ৪৫০ লিটার। তবে কলকাতাও কি দ্বিতীয় বেঙ্গালুরু হয়ে উঠবে?
এদিকে প্রয়োজন বাড়লেও উৎপাদন বাড়েনি। বরং ক্রমশ কমছে জলের উৎপাদন। চাঁদিফাটা গরমে গঙ্গার জলস্তর নামছে হু হু করে। গঙ্গা থেকে জল টেনে ট্রিটমেন্ট প্লান্টে পরিশ্রুত করা হয়। ভাটার সময় সেই জল টানতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে শুধুই কাদা উঠছে। সোমবার মেয়র ফিরহাদ হাকিম তাই করজোরে প্রার্থনা করেছেন শহরবাসীর কাছে। তাঁর অনুরোধ, সমস্ত বাড়িতে জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে জলের অপচয় ঠেকান। ট্রিটমেন্ট প্লান্টগুলো শুধুমাত্র জোয়ারের সময় গঙ্গা থেকে জল নিতে পারছে। চাহিদা অনুযায়ী সমস্ত বাড়িতে জল তখনই পৌঁছে দেওয়া যাবে যখন সকলে সচেতন হবেন।
[আরও পড়ুন: ‘CAA-তে আবেদন ১০ হাজার মতুয়ার’, দাবি শান্তনুর, ‘মিথ্যা বলছেন’, খোঁচা তৃণমূলের]
শহরের একাধিক বাড়িতে জলের কল খারাপ। দিনভর ফোঁটা ফোঁটা করে জল পড়ে যায়। অনেকেই এতে গা করেন না।কলকাতা পুরসভার জল-বিভাগের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রতিটি ফোটায় .০৫ এমএল জল বেড়িয়ে যায় কল থেকে। প্রতি সেকেন্ডে যদি এক ফোঁটা করে জল কল থেকে বেড়িয়ে যায় অঙ্কের হিসেবে চার লিটারের ওপর জল নষ্ট হয়। এই চার লিটার জলও এই সময় অত্যন্ত প্রয়োজন। একশোটা বাড়িতে যদি এভাবে জল নষ্ট হয় তাহলেই চারশো লিটার জলের অপচয়!
এদিন ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, "গরমে সবাই কষ্টে আছে। এই মুহূর্তে জলের একান্ত প্রয়োজন। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি সকলের ঘরে জল পৌঁছে দেওয়ার। এই সময়টা জল অপচয় করবেন না। অপচয় রুখে দিন।" মেয়রের অনুরোধ, অকারণে কল খুলে রাখবেন না। ওভারহেড ট্যাঙ্ক ভর্তি হয়ে জল বেরিয়ে যাওয়া ঠেকান। পরিশ্রুত জল দিয়ে গাড়ি ধোবেন না।
[আরও পড়ুন: কলকাতাকে গিলে খাচ্ছে দহন দানব! ছয় দশকের রেকর্ড ভেঙে পারদ ৪২ ডিগ্রিতে]
এদিকে জল অপচয় ঠেকানোর পাশাপাশি গ্রীষ্মে পুর-কর্মীদের জন্যেও নতুন সার্কুলার জারি করল পুরসভা। কলকাতা পুরসভার রাস্তা সাফাই, জঞ্জাল পরিষ্কার বিভাগের কর্মীরা ঠা ঠা গরমেও রাস্তায় নেমে কাজ করেন। মেয়র জানিয়েছেন, মঙ্গলবার থেকে সকাল দশটার পর বিকেল চারটে পর্যন্ত আপাতত তাদের কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। ফিরহাদের কথায়, হিটস্ট্রোক এড়ানোর জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।