গৌতম ব্রহ্ম: এক হাজারের বেশি গুণের অধিকারী এই জলজ ফুল। যার গুণকীর্তন রয়েছে খোদ চরক সংহিতায়। করোনাকালে (COVID-19) সেই ফুলকেই মেনুতে রাখার পরামর্শ দিলেন ডাক্তারবাবুরা। ‘আশ্বিনে রাঁধে, কার্তিকে খায়। যে বর মাগে, সেই বর পায়।’ আশ্বিন শেষ হয়ে সোমবার কার্তিক শুরু হয়েছে। সংক্রান্তির দিনে শাপলা (Water lilies) দিয়ে ডাল রেঁধে পরের দিন খাওয়ার রীতি বঙ্গভূমে। শাপলা দেওয়া সেই গাড়ুর ডাল ঘরে ঘরে রান্না হয়েছে। বাজারে গত দু’তিন দিন ধরেই তাই শাপলার আমদানি বেড়ে গিয়েছে। যদিও ডাক্তারবাবুদের পরামর্শ, বছরে শুধু একটা দিনে নয়, শাপলা বা শালুক খাওয়া উচিত বছরভর। তাহলে রক্তজনিত বহু রোগকেই দূরে রাখা যাবে।
কী কী রোগে শাপলা কার্যকর?
চরক সংহিতার সূত্রস্থানের পঞ্চম অধ্যায়ে শালুকের উল্লেখ রয়েছে। চিকিৎসকদের দাবি, এক হাজারের বেশি গুণাবলি রয়েছে এই ফুলের। বিশেষ করে পিত্তজনিত কারণে রক্ত দূষিত হলে লাল শাপলা কার্যকরী ভূমিকা নেয়। স্ত্রীরোগেও লাল শালুকে তৈরি ক্বাথ বেশ কার্যকর। রক্তপ্রদর উপশম করে। পিত্ত কুপিত হলে রক্তপিত্ত বা আমাশয় রোগ হতে পারে। এই ‘হেমারেজিক ডিসঅর্ডার’ সারাতেও লাল শালুক বেশ কাজের। এমনটাই জানালেন রাজাবাজারের শ্যামাদাস বৈদ্যশাস্ত্রপীঠের অধ্যাপক ডা. প্রদ্য়োৎবিকাশ কর মহাপাত্র। তাঁর মত, গর্ভাশয়ের বিকারেও শাপলার ক্বাথের ব্যবহার বহুদিনের। ত্বকের অসুখ সারাতেও এই ফুল সমান কার্যকর।
[আরও পড়ুন: বাদ নয়, বেশি খাবার খেয়েই নিয়ন্ত্রণে রাখুন কোলেস্টেরল! জানুন বিশেষজ্ঞর পরামর্শ]
তবে পুষ্টিগুণেও শাপলার কোনও তুলনা নেই। আলুর চেয়ে সাতগুণ বেশি পুষ্টি দেয় এই সবজি। শাপলায় রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। একটি গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, প্রতি ১০০ গ্রাম শাপলা লতায় রয়েছে খনিজ পদার্থ ১.৩ গ্রাম, আঁশ ১.১ গ্রাম, ক্যালোরি-প্রোটিন ৩.১ গ্রাম, শর্করা ৩১.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭৬ মিলিগ্রাম। উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি, শাপলায় মজুত গ্যালিক এসিড এনজাইম ক্যানসার রোধে সাহায্য করে।
শাপলাতে থাকা ফ্লেভনল গ্লাইকোসাইড মাথায় রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে মাথা ঠান্ডা রাখে। শাপলা ফুল ইনসুলিনের স্তর স্থিতিশীল রেখে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। শরীরকে শীতল রাখে, হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ায় ও পিপাসা দূর করে। প্রস্রাবের জ্বালা—পোড়া, আমাশয় ও পেট ফাঁপা প্রশমনে শাপলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। চিকিৎসকদের দাবি, “শালুক বা শাপলা পদ্ম গোত্রের। পদ্মের বেশিরভাগ গুণাবলিই এই ফুলে মজুত।”
[আরও পড়ুন: জুতোর হিলে লুকিয়ে ভয়ানক বিপদ, এড়াবেন কীভাবে? পরামর্শ দিলেন চিকিৎসক]
কীভাবে রান্না হয় এই গাড়ুর ডাল?
শাপলা, শালুক, মুলো, বিনস, বরবটি, থোড়, শিম, বাঁধাকপি, আলু, পটল মটরডালে দিয়ে সিদ্ধ করতে হবে। এই ডালে অন্য কোনও মশলার দরকার নেই। দরকার নেই ফোড়নেরও।