সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: তৃণমূলের (TMC) প্রার্থী তালিকায় এবার তারুণ্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। প্রথম দফায় অর্থাৎ ২৭ মার্চ জঙ্গলমহলের চার জেলায় এবার লড়ছে বহু নতুন মুখ। ঝাড়গ্রামের (Jhargram) চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে দুটিতেই লড়ছেন সম্পূর্ণ নতুন দুই প্রার্থী। একজন এলেন সিনেমা জগৎ থেকে, অপরজন ঝকঝকে তরুণ চিকিৎসক। ঝাড়গ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য এবার তৃণমূ্লের নতুন প্রার্থী হলেন সাঁওতালি সিনেমা জগতের ‘মহানায়িকা’ বলে পরিচিত, অসংখ্য পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী বীরবাহা হাঁসদা। এই কেন্দ্রে বিধায়ক ছিলেন ডেপুটি স্পিকার প্রয়াত সুকুমার হাঁসদা। আর অভিনেত্রী তৃণমূলে যোগদান করার পরেই ঝাড়গ্রাম বিধানসভার জন্য টিকিট পেলেন। জয় নিয়ে আশাবাদী নায়িকা বীরবাহা। অন্যদিকে, গোপীবল্লভপুর বিধানসভার জন্য বছর আটত্রিশের চিকিৎসক খগেন্দ্রনাথ মাহাতো। তিনি গত প্রায় দশ বছর ধরে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ থেকে তিনি পাশ করেছেন। চিকিৎসক হিসেবে তাঁর যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। গোপীবল্লভপুর বিধানসভা কেন্দ্রের দু’বারের বিধায়ক, প্রাক্তন মন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতো এবার আর টিকিট পান নি।
রদবদলের ইঙ্গিত ছিলই। তবে তার থেকেও বেশি চমক এবার বাঁকুড়া (Bakura) জেলার ১২ টি বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য ঘোষিত তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায়। খোদ রাজ্যের মন্ত্রী তথা বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল সভাপতি অধ্যাপক শ্যামল সাঁতরার বিধানসভা কেন্দ্র এবার বদল হল। রানিবাঁধ, ছাতনা কেন্দ্রে পুরনোই আস্থা। বাঁকুড়া জেলার ১২টি বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় চমকের ইঙ্গিত ছিলই। তিন চতুর্থাংশ আসনে এবার নতুন মুখ। নির্বাচনী লড়াইয়ের ময়দানে প্রার্থী বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি মৃত্যুঞ্জয় মুর্মু, মেন্টর অরূপ চক্রবর্তী থেকে যুব তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক সভানেত্রী অর্চিতা বিদ, প্রয়াত বিধায়ক গুরুপদ মেটের স্ত্রী রুনু মেটে।
[আরও পড়ুন: ‘সম্মান না পেয়েই দল ছাড়ছেন নেতারা’, ফের জল্পনা বাড়ালেন শতাব্দী রায়]
এবার কোতুলপুর কেন্দ্রের বদলে সোনামুখী কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করা হয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী তথা বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল সভাপতি শ্যামল সাঁতরাকে। রাইপুরের বিদায়ী বিধায়ক বীরেন্দ্রনাথ টুডুকে এবার টিকিট দেয়নি দল। তার বদলে এবার রাইপুর কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী করা হয়েছে বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি মৃত্যুঞ্জয় মুর্মুকে। একইভাবে তালডাংরা কেন্দ্র থেকে বিদায়ী বিধায়ক সমীর চক্রবর্তীর বদলে প্রার্থী করা হয়েছে জেলা পরিষদের মেন্টর অরূপ চক্রবর্তীকে। ইন্দাস কেন্দ্রের প্রয়াত বিধায়ক গুরুপদ মেটের স্ত্রী রুনু মেটেকে ওই কেন্দ্রের প্রার্থী করা হয়েছে। কোতুলপুর কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন মহিলা তৃণমূল নেত্রী সংগীতা মালিক।
যদিও প্রার্থী তালিকায় এই রদবদলকে দলের সিদ্ধান্ত বলেই মেনে নিয়েছেন শ্যামল সাঁতরা। শ্যামলবাবু বলেন, “দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার যাদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা যোগ্য ব্যক্তি। কয়েকটি আসনে নতুন মুখ এনেছেন। আমার কেন্দ্রও বদল হয়েছে। এটা দলের সিদ্ধান্ত। আমি দলের জেলা সভাপতি। জেলার ১২ টি আসনই দলীয় প্রার্থীদের জেতানোর দায়িত্ব আমাদের সকলের। দলনেত্রী আমাদের প্রতি যে আস্থা রেখেছেন, তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।” অন্যদিকে, টিকিট না পাওয়ায় ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন বাঁকুড়ার বিধায়ক শম্পা দরিপা। আক্ষেপের সুরে বলছেন, ”আবার আরেকটা ধাক্কা এল আমার। বারবার প্রতিশ্রতি দিয়েও আমাকে প্রার্থী করেনি দল। গত লোকসভা নির্বাচনের ফের এই বিধানসভা নির্বাচনে। যে একদিন আগে দলের পতাকা ধরেছে তাকে প্রার্থী করা হল। অথচ ২০০২ সাল থেকে চমকাইতলা-সহ একাধিক আন্দোলনে আমি নেত্রীর সঙ্গে ছিলাম। বারবার অপমানের জন্যই আমি কংগ্রেসের টিকিটে গত ২০১৬ সলের নির্বাচনে দাঁড়িয়ে ছিলাম এবং আলু আর আলুবোখরা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম। এবার ফের মুনমুন সেনের ছায়া দেখতে পাচ্ছি। আমার দলের ক্যাপশন – ‘বাংলা তার মেয়েকেই চায়’। কিন্তু দল এটা বোঝে না ‘বাঁকুড়া তার মেয়েকেই চায়।”
[আরও পড়ুন: বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নাবালিকাকে ধর্ষণ ও খুন, ধর্ষককে ফাঁসির সাজা আদালতের]
পুরুলিয়াতেও (Purulia) নতুন মুখ চার। এই জেলায় দুই বিধায়কের ডানা ছেঁটে তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে আসরে নামছেন চার নবাগত। রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি ও জয়পুরের বিধায়ক শক্তিপদ মাহাতোকে বাদ দিয়ে ওই দুটি আসনে দুই নতুন প্রার্থী – রঘুনাথপুরে হাজারি বাউরি ও উজ্জ্বল
কুমার। এছাড়া পুরুলিয়া বিধানসভা আসনেও নতুন মুখ আনা হয়েছে। প্রার্থী করা হয়েছে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের কো–অর্ডিনেটর তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়কে। গত বিধানসভায় এই আসনটি হাতছাড়া হয়েছিল শাসক দলের। এছাড়া বাঘমুন্ডি বিধানসভা আসনেও রয়েছে নতুন মুখ। জেলা যুব সভাপতি সুশান্ত মাহাতোকে প্রার্থী করা হয়েছে। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের শিক্ষা–সংস্কৃতি–তথ্য–ক্রীড়া স্হায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ গুরুপদ টুডু বলেন, “তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে নবীন–প্রবীণকে নিয়ে বিভিন্ন জনজাতির সমন্বয়ে পুরুলিয়ার প্রার্থী তালিকা সাজিয়েছেন তাতে জেলার ন’টি বিধানসভা আসনেই আমরা জিতব। বিরোধীদের ন’টি গোল দিতে আমরা সবাইকে নিয়ে প্রচারের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছি।”