shono
Advertisement

শীতলকুচির মৃত্যু ছাপ ফেলেছে মনে, বন্দুক ছেড়ে হাতে লাঠি জওয়ানদের

দিনভর 'খেলা হবে' স্লোগানে কান ঝালাপালা বাহিনীর।
Posted: 09:47 AM Apr 11, 2021Updated: 09:47 AM Apr 11, 2021

গৌতম ব্রহ্ম ও অভিরূপ দাস: দৃশ্য ১: কসবার বিধানসভার তপসিয়া সেকেন্ড লেন। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আইটিবিপি জওয়ানরা। সবার হাতে লাঠি। দৃশ্য ২: অটো ছুটছিল বাঘাযতীন মেন রোড ধরে। সামনে দাঁড়ানো জনাচারেক জওয়ানকে দেখে আচমকাই তা দাঁড়িয়ে পড়ল। অটোর ভেতর থেকে তুমুল চিৎকার এল, “খেলা হবে। খেলা হবে।” দৃশ্য ৩: “কেয়া আপনে কোচবিহার কি ঘটনা কি বারে মে কুছ শুনা হ্যায়?” প্রশ্ন শুনে পালাতে পারলে বাঁচেন গুলাম জিলানি খান রোডের স্কুলে কর্তব্যরত জওয়ান (Jawan)। সাংবাদিকের ক্যামেরা দেখে হনহন করে বেরিয়ে গেলেন।

Advertisement

চৈত্রের শেষ শনিবারের বারবেলায় অদ্ভুত এক অবিশ্বাসের বাতাবরণ। ‘আমরা-ওরা’ শব্দবন্ধের একদিকে কেন্দ্রীয় বাহিনী অন্যদিকে আমজনতা। বেহালা থেকে সিঙ্গুর সর্বত্র একই দৃশ্য। মাঝখানের এই আড়াআড়ি বিভাজন এক নিঃশব্দ পরিবর্তন এনে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের একটা বড় অংশ আগ্নেয়াস্ত্রর ট্রিগার থেকে আঙুল সরিয়ে নিয়েছেন। হাতে তুলে নিয়েছেন রাজ্য পুলিশের থেকে ধার করা লাঠি। তাঁদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে এমনিই মানুষের আতঙ্ক কাজ করছে। শীতলকুচির (Sitalkuchi) ঘটনায় সেই আতঙ্ক আরও বেড়ে গিয়েছে। তাই আগ্নেয়াস্ত্র পিঠে ঝুলিয়ে লাঠিতেই কর্তব্য পালনে চেষ্টা জলপাই উর্দিধারীদের।

[আরও পডুন: শীতলকুচিতে বাহিনীর গুলিতে ৪ জনের মৃত্যুতে কী ব্যবস্থা? কমিশনের কাছে জানতে চাইল তৃণমূল]

চতুর্থ দফা নির্বাচনে (WB Elections 2021) কোচবিহারের শীতলকুচির ১২৬ নম্বর বুথে জওয়ানের গুলিতে মারা গিয়েছেন চারজন। আলোর থেকেও দ্রুতগতিতে সে খবর ছড়িয়ে পড়েছিল বুথে বুথে। যার প্রতিফলন, ‘কেন্দ্রীয় বাহিনী’র বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের চাপা ক্ষোভ। “খেলা হবে” টিটকিরি শুনে শুনে কান ঝালাপালা হওয়ার জোগাড়। ভ্যাপসা গরমে পিঠে ভারী অস্ত্রের বোঝা। ইন্ডো টিবেটান বর্ডার ফোর্সের এক জওয়ান দাঁড়িয়ে তপসিয়ায়। বলেই ফেললেন, “কী অদ্ভুত বলুন তো। সবাই ভাবছে আমরা শত্রু। আমরা তো কোনও দলের হয়ে এখানে আসিনি। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এসেছি।”

বাহিনীর গুলিতে চার মৃত্যু শুধু বিরলতম নয়, বাংলায় নির্বাচনে জওয়ানদের গুলিতে এমন রক্তকাণ্ড প্রথম। বাহিনীর ওই জওয়ান যদিও বলছেন, তাঁদের কাছে নির্বাচন কমিশনের স্ট্যান্ডিং ইন্সট্রাকশন রয়েছে গুলি চালানোর। তবে সব ক্ষেত্রে নয়। কেউ যদি ইভিএম চুরি করতে যায়, কিংবা অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে তবেই। কথায় কথায় বেরিয়ে এল রুদ্ধশ্বাস স্মৃতি। অরুণাচল প্রদেশেও নির্বাচনের কাজে গিয়েছিলেন ওই জওয়ান। এ রাজ্যেরই বাসিন্দা সুঠাম তরুণের কথায়, “অরুণাচলে নির্বাচন শেষে ইভিএম নিয়ে যখন ফিরছিলাম গাড়ি করে তাড়া করা হয়েছিল আমাদের। চাইলেই গুলি চালাতে পারতাম। কিন্তু চালাইনি। গাড়ির স্পিড দ্বিগুণ করে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দিয়ে এসেছিলাম ইভিএম।” তাঁর আফসোস, একদল ভাবেন আমরা হয়তো ইভিএম লুঠ করে অন্য দলকে জিতিয়ে দেব। এমনটা কখনও হতে পারে? আমরা না তৃণমূল না বিজেপির। সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে এসেছি।” চোখেমুখে চাপা কষ্ট। শীতলকুচির চার মৃত্যু ছাপ ফেলেছে বাংলার বাসিন্দা ওই আইটিবিপির জওয়ানের মনেও।

[আরও পডুন: ‘কোনও বিধিভঙ্গ করিনি’, CRPF মন্তব্য নিয়ে কমিশনের নোটিসের জবাব মমতার]

সুদূর উত্তরাখণ্ড থেকে যাদবপুর বিধানসভায় ‘ডিউটি’ করতে আসা এক জওয়ানের কথায়, “নির্বাচনটা শেষ হলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচি। যাদের নিরাপত্তা দিতে এসেছি তারাই যদি সন্দেহের চোখে দেখে। ভাল লাগে?” কোচবিহারের ঘটনা নিয়ে শনিবার দিনভর রাজ্যের নানা বুথের চারপাশে ফিসফাস, “পায়ে তো গুলি চালাতে পারত।” জওয়ানরা বলছেন, বন্দুক ছিনিয়ে নেওয়ার বিপদ অনেক। সেই আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ছিনতাইবাজ যদি কাউকে গুলি করে, সম্পূর্ণ দায় এসে পরে জওয়ানদের কাঁধেই। অন্ধকার নেমে আসে। চতুর্থ দফার নির্বাচনের ডিউটি আপাতত শেষ। গামবুট বাঁধতে বাঁধতে জওয়ান জানান, “আগে মুখে কথা বলি। না শুনলে তারপর গুলি চালাই। ওই সময় কর্তব্য পালন করাই আসল কাজ। তাড়াহুড়োয় পা লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া সম্ভব?”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement