সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সরকার বিরোধী কোনও কার্যকলাপ বা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকলে কলকাতার হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করতে পারবেন না তফসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত ছাত্রছাত্রীরা। ঘুরিয়ে হলেও খানিকটা এই ভাষাতেই এবার পড়ুয়াদের সতর্ক করে দিল রাজ্য সরকার। কলকাতায় সরকারি হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করতে চাইলে আদিবাসী ছাত্রছাত্রী ও তাঁদের অভিবাবকদের খাতায়-কলমে একথা জানাতে হবে, যে তাঁরা সরকার বিরোধী কোনও কাজ বা আন্দোলন অথবা সরকারের বিরুদ্ধে কোনও অন্তর্ঘাতের সঙ্গে যুক্ত নন। তবেই মিলবে হস্টেলে থাকার অনুমতি।
[সেনার আত্মত্যাগ স্মরণ করাতে JNU ক্যাম্পাসে কামান বসানোর দাবি উপাচার্যর]
তফসিলি জাতি এবং আদিবাসী গরিব ছাত্রছাত্রীদের কলকাতায় থেকে পড়াশোনা করার জন্য চারটি হস্টেল রয়েছে। ছাত্রদের জন্য দুটি-বিধাননগরের সিধো কানহো হস্টেল, গোখানা লেনের সেন্ট ডেভিড হস্টেল। ছাত্রীদের জন্য রয়েছে জাজেস কোর্ট রোডের রানি রাসমণি ছাত্রীনিবাস ও বিধাননগরের সেন্ট্রাল হস্টেল। গত ৬ই জুলাই এই চারটি হস্টেলে থাকার সুযোগ পাওয়ার জন্য আবেদনপত্র জমা দেওয়ার নোটিস জারি হয়। নোটিসের সঙ্গেই দেওয়া হয়েছে আবেদনপত্র। সেই আবেদনপত্রের নিচের দিকে রয়েছে এমন একটি শর্ত, যা যথেষ্ট অপমানজনক বলে মনে করছে শিক্ষামহলের একাংশ। সরকারি হস্টেলে থাকতে গেলে এবার থেকে মুচলেকা দিতে হবে, ‘আমি সরকারের বিরোধিতা করি না, সরকার বিরোধী কোনও আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নই।’
এই হল সেই নির্দেশিকা-
[সমুদ্রে ড্রাগন বধে দিল্লির ‘প্রজেক্ট-৭৫’]
এই নির্দেশিকায় ক্ষোভ জমা হয়েছে আদিবাসী সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের মধ্যে। প্রশ্ন উঠছে, পড়াশোনা করতে এসে সরকার-বিরোধী কোন আন্দোলনের আশঙ্কা করছে রাজ্য? পড়ুয়ারা এমন কী বিক্ষোভ দেখাতে পারেন যার জন্য আগেভাগেই রাজ্য সরকারকে এতটা সতর্ক থাকতে হচ্ছে? তবে কি দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্র-বিরোধী আন্দোলন প্রভাব ফেলেছে রাজ্য প্রশাসনের উপর? সম্প্রতি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলনের ডাক দিয়ে রাতারাতি নেতা বনে যান কানহাইয়া কুমার। দলিত ছাত্র রোহিত ভেমুলার মৃত্যর পর থেকেই উত্তাল হয়ে ওঠে দিল্লির রাজনীতি। যার আঁচ সরাসরি গিয়ে পড়ে জাতীয় রাজনীতিতেও। কানহাইয়া কুমারকে গ্রেপ্তার করা হলেও পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। জেএনইউ-র অন্দরে ওঠা ‘আজাদি’র স্লোগান শোনা গিয়েছে এ রাজ্যের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেও। সম্প্রতি আবার ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই হস্টেল থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যায় এক ছাত্র সুশীল মান্ডি৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্ব বিভাগের পড়ুয়ার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে ফেসবুকে একটি পোস্ট করা হয়৷ তারপরই কি আদিবাসী সম্প্রদায়ের ছাত্রদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করছে রাজ্য, উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না সেই সম্ভাবনাও। যদিও এই বিষয়টি জানাজানি হতেই মুখে কুলুপ এঁটেছেন সরকারি কর্তারা। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রী জেমস কুজুর এই বিষয়টি জানেনই না বলে দাবি করেছেন।
The post ‘সরকার-বিরোধী নই’, মুচলেকা দিলে তবেই মিলবে হস্টেলে থাকার ছাড়পত্র appeared first on Sangbad Pratidin.