বিশেষ সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি: তৃণমূল (TMC) অনেক আগেই নিজেদের পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে দিয়েছে। শাসকদলের প্রার্থীরা জোরকদমে প্রচারেও নেমে পড়েছেন। কিন্তু বিজেপির পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উলটো। এখনও অর্ধেকের বেশি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে উঠতে পারেনি গেরুয়া শিবির। যার জেরে প্রচারে কোথাও না কোথাও পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে। তাই আর দেরি করতে রাজি নয় গেরুয়া শিবির। মঙ্গলবার রাত ও বুধবার দিনভর বৈঠকের পর রাজ্যের বাকি পঞ্চম, ষষ্ঠ , সপ্তম ও অষ্টম, এই চার দফার প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করেছে বিজেপি (BJP)। পাশাপাশি দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফার যে সমস্ত আসনের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়নি সেগুলিতেও নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। সূত্রের খবর, এই ১৬৭টি আসনের জন্য আজই প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে দেবে গেরুয়া শিবির (BJP announces rest of the 167 Candidate list)। সেই সঙ্গে কর্মীদের অসন্তোষের জেরে একাধিক আসনে প্রার্থী বদলেও দেওয়া হতে পারে।
গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত দিল্লিতে দলের সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) উপস্থিতিতে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠকে বাকি আসনের নামের তালিকায় সিলমোহর বসেছে। আজ, বৃহস্পতিবার প্রার্থীদের সেই নামের তালিকা ঘোষণা করা হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে খবর। বিজেপি সূত্রের খবর, তৃতীয় ও চতুর্থ দফার মতোই বাকি দফার প্রার্থী তালিকায় চমক থাকছে। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল, বাম ও কংগ্রেস (Congress) থেকে দলে আসা নেতাদের পাশাপাশি যে সমস্ত অভিনেতা ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশকেই প্রার্থী করা হচ্ছে। তালিকাতেই রয়েছে অভিনেতা শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় থেকে রুদ্রনীলের নামও। জানা যাচ্ছে, সব কিছু ঠিক থাকলে হাওড়ার শিবপুর থেকে বিজেপির প্রার্থী হচ্ছেন রুদ্রনীল। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে কৃষ্ণনগর দক্ষিণ থেকে মুকুল রায়ের নাম শোনা যাচ্ছে। মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু রায় নিজের বীজপুর কেন্দ্র থেকেই প্রার্থী হচ্ছেন। রাজারহাট-গোপালপুর থেকে শমীক ভট্টাচার্যর নাম শোনা গিয়েছে। বড়বাজার থেকে লড়বেন প্রবীণ নেতা ও প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা। জোড়াসাঁকো কেন্দ্রে শিশির বাজোরিয়া ও চৌরঙ্গি থেকে রীতেশ তিওয়ারি টিকিট পেতে চলেছেন। কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রের জন্য নাম রয়েছে কল্যাণ চৌবের। পানিহাটিতে সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ও খড়দা আসনে শীলভদ্র দত্ত প্রার্থী হচ্ছেন বলে খবর।
[আরও পড়ুন: ইস্তাহারে মমতার মাস্টারস্ট্রোক! দেশে প্রথমবার সকলের জন্য ন্যূনতম আয়ের প্রতিশ্রুতি]
গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত মোদি-সহ কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির সদস্যরা রাজ্য বিজেপির কোর গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পরেই প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করেছেন। তার আগে সকালে প্রাথমিকভাবে চার দফার প্রার্থীদের নাম ঠিক করতে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা (JP Nadda), সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষরা রাজ্য বিজেপির কোর গ্রুপের নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন। দিল্লিতে নাড্ডার বাসভবনে সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে শুরু হওয়া সেই বৈঠক চলেছে সন্ধে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত। দফায় দফায় প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করা বিজেপির দস্তুর হলেও রাজ্য বিজেপির অনুরোধেই এবারে একসঙ্গে চার দফার প্রার্থী নাম নিয়ে ম্যারাথন বৈঠক করছে তারা। রাজ্য নেতাদের যুক্তি, রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীতালিকা আগেই প্রকাশ করার সুবাদে তাদের প্রার্থীরা প্রচারের কাজে এগিয়ে যাবেন। সেক্ষেত্রে বিজেপির তালিকা প্রকাশে দেরি হলে তারা পিছিয়ে পড়বে বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর (Amit Shah) কাছে দরবার করেছিলেন রাজ্য নেতারা। তার পরেই শাহ কলকাতায় প্রায় সারারাত ধরে বৈঠক করার পরে রাজ্য নেতাদের দিল্লিতে তলব করেন। এবং তড়িঘড়ি কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠক ডাকা হয়। এদিন সদর দপ্তরে বৈঠকে প্রবেশের সময়েই রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, “বাকি সমস্ত দফার প্রার্থীতালিকা চূড়ান্ত করার বিষয়েই এই বৈঠকে আলোচনা হবে। আগামিকাল তালিকা ঘোষণা করা হতে পারে।”