ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: যেমন কথা তেমন কাজ। কথাকে কাজে পরিণত করতে অত্যাধুনিক বিদেশি যন্ত্র এখন সাগরপথে কলকাতামুখী। যার উপস্থিতি ও সক্রিয়তা বাংলার করোনা লড়াইয়ে নতুন শক্তি জুগিয়ে দেশে নজির স্থাপন করবে বলে সরকারি মহল মনে করছে।
আইসিএমআরের সঙ্গে আলোচনায় দিনে এক লক্ষ করোনা পরীক্ষার প্রস্তাব উঠেছিল। ঠিক এক মাসের মাথায় সেই লক্ষ্যে পদক্ষেপ করতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। যে জন্য জাহাজে করে কলকাতায় আনা হচ্ছে কোভিড নমুনা একলপ্তে পরীক্ষা করার ক্ষমতাধারী স্বয়ংক্রিয় কোবাস কিট যন্ত্র।
[আরও পড়ুন: ‘কোমরের জোর নেই, বিকাশ দুবের এনকাউন্টার নিয়ে কী বলবে?’, তৃণমূলকে কটাক্ষ দিলীপের]
কোভিডের থাবা রাজ্যে ক্রমশ চওড়া হচ্ছে। তাই জুলাই মাসেই এই যন্ত্র দিয়ে যাতে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়, সে জন্য সব বন্দোবস্ত পাকা করে ফেলেছে রাজ্য প্রশাসন। নাইসেড ও স্বাস্থ্য দপ্তর একযোগে কাজটা করবে। নবান্নের দাবি, দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গই প্রথম রাজ্য, যে কিনা কোবাস যন্ত্রকে হাতিয়ার করে এভাবে করোনার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধে নামছে। আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ থাকায় একরকম বাধ্য হয়ে সুইডেন থেকে এই যন্ত্র সমুদ্রপথে আনার বরাতও দিয়েছে স্বাস্থ্যদপ্তর। প্রথম দফায় আটটি এমন যন্ত্র আনা হবে। এক-একটি কোবাস পাঁচ থেকে ছঘণ্টায় গড়ে বারো হাজার ব্যক্তির লালারস আরটিপিসিআর (RTPCR) পদ্ধতিতে পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয়ে সক্ষম। স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে খবর, প্রথম দফায় কলকাতা ও উত্তরবঙ্গে কোবাস কাজে লাগানো হবে, মূলত বাছাই করা সরকারি হাসপাতাল ও ল্যাবরেটরিতে। পরে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার বাড়ানো হবে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. অজয় চক্রবর্তীর কথায়, “এই মাসেই আটটি কোবাস যন্ত্র আনা হবে। শুরু হবে আরও বেশি পরীক্ষা। রোগ নির্ণয়ের পাশাপাশি নিরাময়ের জন্যও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” রাজ্য নিজের খরচে এই যন্ত্র আনছে বলে জানিয়েছেন অধিকর্তা।
স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য বলছে, আরটিপিসিআর পদ্ধতিতে দিনে দশ হাজার মানুষের লালারস পরীক্ষার জন্য রাজ্যের কোষাগার থেকে গড়ে আড়াই কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। সেখানে কোবাস ব্যবহার হলে লাভ বই ক্ষতি নেই। এক-একটা কোবাস যন্ত্রের দাম গড়ে দেড় লক্ষ টাকা। আমদানি শুল্ক ও অন্যান্য খরচ মিটিয়েও দুলক্ষ টাকার মধ্যে। দ্বিতীয়ত, আরটিপিসিআর পদ্ধতিতে ভাইরাসের জিন সংশ্লেষ করে পরীক্ষা হয় বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আইসিএমআরের গাইডলাইন মেনে কাজ হবে। স্বাভাবিকভাবেই পরীক্ষার ফল নিয়ে সংশয় অনেকটা কমবে।
[আরও পড়ুন: কলকাতায় ফের বাড়ল কনটেনমেন্ট জোন, কোন কোন জায়গা জুড়ল তালিকায়?]
রাজ্যে যে দৈনিক এক লক্ষ করোনা টেস্ট হতে চলেছে, গত ৯ জুন সংবাদ প্রতিদিনে সে খবর প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, আইসিএমআরের সহযোগিতায় করোনা ভাইরাসকে উৎখাত করতে দিনে এক লক্ষ টেস্ট করার ব্যবস্থা করতে চলেছে স্বাস্থ্য দপ্তর। স্বাস্থ্য অধিকর্তার পর্যবেক্ষণ, রোজ পরীক্ষার পিছনে যে খরচ হয়, একবারে সেই খরচ করলে দৈনন্দিন ব্যয় অনেকটাই কমবে। উপরন্তু নাইসেড ও স্বাস্থ্য দপ্তরে কোবাস কিট দিয়ে পরীক্ষা করার মতো দক্ষ কর্মীও রয়েছেন। কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধিকর্তা ডা প্রতীপ কুণ্ডু জানিয়েছেন, “কোবাসের প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে গিয়েছে। স্বয়ংক্রিয় এই যন্ত্রে বোঝা যায়, অতিমারি কতটা বিস্তার লাভ করেছে।”
ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ সেফটি সংস্থার অনুমোদন পাওয়া কোবাস (Cobas) কিট যন্ত্র দিয়ে সারি বা করোনা পরীক্ষার অনুমোদন অনেক আগেই দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। স্বাস্থ্য ভবনের আধিকারিকদের বক্তব্য, কোবাস যন্ত্রের মাধ্যমে আরটিপিসিআর পরীক্ষার জন্য দেশের ৫২টি সরকারি ল্যাবরেটরি বরাত দিলেও প্রযুক্তিটি প্রথম আনছে পশ্চিমবঙ্গ।
The post দিনে লক্ষাধিক নমুনা পরীক্ষা করতে সুইডেন থেকে ৮টি বিশেষ যন্ত্র আনছে রাজ্য appeared first on Sangbad Pratidin.