সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘সবুজ বিপ্লব’-এর জনক বলে তাঁকে চেনে দেশ। বলা হয়, ভারতের কৃষি ব্যবস্থার চেহারা আমূল বদলে দেওয়ায় ড. এমএস স্বামীনাথনের অবদান অনস্বীকার্য। কে এই স্বামীনাথন? শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চরণ সিং ও পি ভি নরসিমা রাওয়ের পাশাপাশি স্বামীনাথনকেও দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ‘ভারতরত্ন’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভারতীয় কৃষি বিজ্ঞানীর পুরো নাম মানকম্বু সাম্বাসিবন স্বামীনাথন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ আগস্ট তামিলনাড়ুর থাঞ্জাভুরের কুম্ভকোনম শহরে জন্ম তাঁর। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে ১৯৪৪ সালে কৃষিবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে কৃষি বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন স্বামীনাথন। এর পর ১৯৫৯ সালে ইন্ডিয়ান এগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইন্সটিটিউটে তরুণ বিজ্ঞানী হিসাবে যোগ দেন। সে সময় খাদ্য সংকটে জেরবার হচ্ছিল ভারত। এই প্রেক্ষাপটে দেশে কৃষিব্যবস্থার উন্নতিতে মার্কিন কৃষি বিজ্ঞানী নরম্যান বোরলাগের সঙ্গে একযোগে কাজ করা শুরু করেন স্বামীনাথন। পাঞ্জাব ও হরিয়ানার মতো রাজ্যে মেক্সিকান গমের ফলনের জন্য কাজ শুরু করেন তাঁরা। ১৯৬৩ সালে স্বামীনাথন ও বোরলাগ একসঙ্গে উত্তর ভারতের বিভিন্ন চাষের ক্ষেত পরিদর্শন করেন। সেখানকার মাটি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালান।
[আরও পড়ুন: ভারতরত্ন নরসিমা রাও, চরণ সিংকে, মাস্টারস্ট্রোক মোদির, সর্বোচ্চ সম্মান স্বামীনাথনকেও]
সেসময় তৎকালীন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী সি সুব্রহ্মণ্যম এবং পরিকল্পনা কমিশনের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে প্রভূত সমর্থন পেয়েছিলেন তিনি। তাঁর হাত ধরে ভারতে উচ্চ ফলনশীল গম ও ধানের প্রজাতির উৎপাদন শুরু হয়। পাশাপাশি জলসেচ প্রক্রিয়ার আমূল পরিবর্তন ঘটে। নরম্যান বোরলাগের সঙ্গে স্বামীনাথনের সহযোগিতায় কৃষক এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টা ১৯৬০-এর দশকে ভারতকে দুর্ভিক্ষের হাত থেকে রক্ষা করেছিল। দেশে শুরু হয় সবুজ বিপ্লব। দেশীয় প্রযুক্তিতে উচ্চ মানের ফসল উৎপাদন শুরু হয়।
এছাড়া ভারতীয় কৃষিতে আরও বড় সাফল্য আসে যখন স্বামীনাথন ফিলিপিন্স ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে একটি উচ্চ ফলনশীল প্রজাতির ধানের খোঁজ পান। তাকে ভারতীয় আবহাওয়া, প্রেক্ষাপটের সঙ্গে মানানসই করে তোলা হয়। শস্য উৎপাদন শুরু হয়। এর পর এই উচ্চ মানের চাল রপ্তানি শুরু করে দেশ। এর ফলে ভারতীয় অর্থনীতির বিরাট অগ্রগতি ঘটে। ১৯৭০ সালের গোড়ায় পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় খাদ্য উৎপাদন প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ভারতে কৃষিকে ভিত করে অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়। ২০২৩ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ৯৮ বছর বয়সে জীবনাবসান হয় স্বামীনাথনের। নানা ক্ষেত্রে বিরাট অবদানের জন্য ১৯৬৭ সালে পদ্মশ্রী, ১৯৭২ সালে পদ্মভূষণ ও ১৯৮৯ সালে পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত করা হয় তাঁকে।