ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বোলপুর: বীরভূমের (Birbhum) নিচুপট্টির বাড়িতে ঢুকে ঘর থেকে অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গিয়েছে সিবিআই (CBI)। এমন দৃশ্য স্বপ্নেও কখনও কল্পনা করতে পারেনি বীরভূমবাসী। গরুপাচারের অভিযোগে আপাতত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সিবিআইয়ের হেফাজতে বীরভূমের দাপুটে নেতা। পরপর দুই হেভিওয়েট নেতা-পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mandal) গ্রেপ্তারিতে কিছুটা হলেও বিড়ম্বনায় তৃণমূল। দলের ভাবমূর্তি বাঁচাতে ইতিমধ্যে পার্থর সঙ্গ ছেড়েছে ঘাসফুল শিবির। পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের ভাবমূর্তির কথা ভেবে বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি পদেও বদল আনা হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অনুব্রতর জুতোয় কে পা গলাবেন, তা নিয়েই শুরু হয়েছে জোর জল্পনা।
শীঘ্রই জেলার নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। সেখানে জেলাস্তরের সংগঠন নিয়ে আলোচনা অবশ্যম্ভাবী। অভিষেক বারবার বলছেন, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি, জনসংযোগ রয়েছে এমন নেতাই দলকে নেতৃত্ব দেবেন। সেই মাপকাঠির বিচারে হয়তো সরে যেতে হতে পারে বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা কেষ্ট মণ্ডলকে। আবার তাঁর অনুপস্থিতিতে সাময়িকভাবে দলকে সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে কোনও উজ্জ্বল ভাবমূর্তির পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ। তবে এ প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার, ২০০৫ সাল থেকে বীরভূমের সংগঠন একাহাতে সামলেছেন ‘কেষ্টদা’। তাঁর ‘অনুগত’রা-ই জেলা, ব্লকস্তরে নেতৃত্ব সামলাচ্ছেন। ফলে বীরভূমের জেলা সভাপতি বদল হোক বা সাময়িক সংগঠন সামলাতে আসুক নতুন কেউ, তাতেও ছায়া থাকবে কেষ্ট মণ্ডলেরই। তাঁরই কোনও অনুগত নেতা হয়তো সাময়িকভাবে সামলাবেন রাজ্যপাট। কিন্তু কারা রয়েছেন এই তালিকায়?
[আরও পড়ুন: ‘যাঁরা টাকা নিয়েছেন, তাঁদের টুঁটি চেপে ধরুন’, বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়কের মন্তব্যে বিতর্ক]
দলীয় সূত্রে খবর, এই দৌড়ে অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা। অনুব্রত মণ্ডল ঘনিষ্ঠ। ২০১১ সাল থেকে বোলপুরের বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিনহা। প্রথমবার জিতেই হয়েছিলেন মন্ত্রী। সামলেছেন পঞ্চায়েত, মৎস্য দপ্তর। বর্তমানে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দপ্তরের মন্ত্রী তিনি। তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর সুযোগ্য সৈনিক অভিষেকের পছন্দের তালিকায় রয়েছে তিনি। দলের অন্দরে কান পাতলে শোনা যায়, এর আগেও যখন অনুব্রত মণ্ডলকে সিবিআই তলব করেছিল, সেই সময় চন্দ্রনাথ সিনহাকে জেলা সভাপতি করার আবেদন জানিয়েছিলেন খোদ কেষ্ট মণ্ডলই।
রাজনৈতিক মহলের অন্য আরেকাংশের দাবি, বীরভূমের সংগঠন সামলানোর দৌড়ে রয়েছেন লাভপুরের বিধায়ত অভিজিৎ সিংহ রানাও। কিন্তু অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে তাঁর আবার দূরত্ব রয়েছে বলে দাবি ওয়াকিবহাল মহলের। ফলে অনুব্রত অনুগত ব্লক বা জেলা নেতৃত্ব অভিজিৎ সিংহকে সমর্থন করার সম্ভাবনা অনেকটাই কম। আবার সিবিআই লাভপুরের বিধায়ককেও তলব করেছিল। ফলে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মাপকাঠিতেও পিছিয়ে রয়েছেন তিনি। সাংসদ শতাব্দী রায়, ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম হাওয়ায় ভাসলেও সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে রাজনৈতিক মহল।
[আরও পড়ুন: মেদিনীপুর জেলে পতাকা তুলতে বাধা, শুভেন্দুর পর এবার রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ সুভাষ সরকারের]
তবে প্রথম দিন থেকেই অনুব্রতর পাশে ছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাছাড়া কেষ্টকে সরিয়ে দেওয়ার অর্থ বিরোধীদের অভিযোগ মেনে নেওয়া। সে পথে এখনই তৃণমূল হাঁটবে না বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।