সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক বেসরকারিকরণের দিকে কি দ্রুত এগোতে চাইছে কেন্দ্র? নাকি আর্থিক মন্দার মুখে বহু শিল্পপতির কাছে থাকা অনাদায়ী ঋণের বোঝায় বিপর্যস্ত ব্যাংকিং শিল্প ঘিরে যে আশঙ্কার মেঘ জমেছে, তা ঘিরে আরও অন্ধকার নেমে আসার ইঙ্গিত দিয়ে রাখতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Modi)! কারণ, ব্যাংক দেউলিয়া হলে গ্রাহক তাঁর অ্যাকাউন্ট পিছু সর্বোচ্চ পাঁচ লক্ষ টাকা পাবেন বলে মোদির ঘোষণায় বিতর্ক তুঙ্গে। বিভিন্ন ব্যাংক কর্মী সংগঠনও সরব। তাদের মতে কেন্দ্র সাধারণ মানুষের সমস্ত সম্পদ বিক্রি করে দিচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের আমানতও আর নিরাপদ নয়। উদ্বিগ্ন গ্রাহকরা। সেই উদ্বেগ ধরা পড়েছে সারাদিনের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টেও।
গত আগস্টে কেন্দ্রের মোদি সরকার (Modi Govt) আমানত বিমা সংক্রান্ত আইন সংশোধন করে। সেই সংশোধনী বলছে, ব্যাংক দেউলিয়া হলে এক লক্ষ টাকার জায়গায় ৫ লক্ষ টাকা ফেরত পাবেন। অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, আমানত বিমা বাড়িয়ে সরকার প্রকৃতপক্ষে ব্যাংক আমানতের ঝুঁকির সম্ভাবনাতেই সিলমোহর দিয়েছে। ১৯৬৯ সালের ১৯ জুলাইয়ের আগে পর্যন্ত দেশে ব্যাংকিং ব্যবস্থা ছিল শোচনীয়। প্রায় প্রতি সপ্তাহে একটা করে ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে উঠে যাচ্ছে। গ্রাহকের আমানত উধাও। যাঁরা ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা রেখেছিলেন, তাঁরা রাতারাতি সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসছেন। সেই সময় ব্যাংক জাতীয়করণ পুরো অর্থনীতিটাকেই পালটে দিয়েছিল। সারা দেশের মোট ব্যাংক আমানতের ৮৫ শতাংশ সরকারি সুরক্ষা পেয়ে যায়। আমানতের সুরক্ষা নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই সময় ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আমানত বিমা স্থির হয় ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ফেরানোর জন্য।
[আরও পড়ুন: স্বাধীনতার চেয়েও বড় রাম মন্দির আন্দোলন! বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতার মন্তব্যে বিতর্ক]
মনে রাখতে, হবে সেই সময়ের বাজারদর অনুযায়ী ১ লক্ষ টাকা ছিল বিপুল অর্থ। যা খুব সামান্য সংখ্যক মানুষেরই ব্যাংকে গচ্ছিত থাকত। বর্তমানে শতাংশের হিসাবে যে ১০ শতাংশ গ্রাহকের পাঁচ লক্ষ টাকার ঊর্ধ্বে ব্যাঙ্ক আমানত রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে সংখ্যাটা খুব কম নয়। উদ্বেগের বিষয় হল, পাঁচ লক্ষ টাকার বেশি জমা অর্থ ফেরতের জন্য গ্রাহক কোনও আইনি সুরক্ষা পাচ্ছেন না। ব্যাংক দেউলিয়া হলে বা দেউলিয়া হওয়ার পরিস্থিতি হলে কেন্দ্র ৯০ দিনের মধ্যে আমানত বিমার অর্থ ফেরতের কথা বলছে। সাধারণ মানুষের তাতেও ভরসা নেই। তাছাড়া অর্থনীতিবিদদের মতে এতে ব্যাংকের পরিবর্তে অন্য ক্ষেত্রে লগ্নির পরিমাণ বাড়বে। বেড়ে যাবে ঝুঁকির বিনিয়োগ। আবার সোনা, প্ল্যাটিনামের মতো মূল্যবান ধাতুর উপর কালো টাকা বিনিয়োগে উৎসাহ বাড়বে।
কেন্দ্রের মোদি সরকারের ‘আর্থিক সংস্কারে’র অন্যতম লক্ষ্য ব্যাংক বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া। এর প্রথম পদক্ষেপ ছিল সংযুক্তিকরণের মাধ্যমে ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে ফেলা। ২০১৭ সাল পর্যন্ত দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সংখ্যা ছিল ২৭। ২০২০ সালের এপ্রিলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সংখ্যাটি মাত্র ১২-তে নামিয়ে এনেছে কেন্দ্র। পরবর্তী লক্ষ্য ব্যাংক, বিমা-সহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গা থেকে ‘সরকারি’ তকমাটি দ্রুত মুছে ফেলা। বিভিন্ন মহলের তীব্র আপত্তি অগ্রাহ্য করেই ভিতরে ভিতরে প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের অর্থমন্ত্রক।
[আরও পড়ুন: লোহার রেঞ্জের উপর দাঁড়িয়ে আস্ত সিলিন্ডার! বিজ্ঞানের জোরেই রেকর্ড গড়লেন অধ্যাপক]
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, তার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে ডিপোজিট ইনসিওরেন্স অ্যান্ড ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্পোরেশন (DICGC) আইন সংশোধন। যার প্রচারে নেমেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। এর আগে কোনও প্রধানমন্ত্রীকে এভাবে আগ বাড়িয়ে ব্যাংক দেউলিয়া হলে টাকা ফেরতের গ্যারান্টি দিতে দেখা যায়নি, বিশেষত যে সময় এটি কোনও আলোচনার মধ্যেই ছিল না। তাঁদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে ব্যাংকের লাটে ওঠাই নিশ্চয়তা পাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, ৫ লক্ষের ঊর্ধ্বে জমা বা প্রাপ্যর ক্ষেত্রে কী হবে? আমানতকারীর যাবতীয় সুদ-আসলের গ্যারান্টার কেন হবে না সরকার? কোনও অসাধু বা অদক্ষ ব্যাংক প্রতারণার লক্ষ্যে ব্যবসা ফাঁদলে গ্রাহকের তো নিঃস্ব হওয়া ছাড়া কোনও উপায়ই থাকবে না।