সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সিনেমার গল্প নয়, বাস্তবের ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস লাইফস্টাইলই কাল হল মডেল-অ্যাংকর সনিকা চৌহানের। বন্ধুদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ১০০ পুশ আপের চ্যালেঞ্জ নেওয়া মেয়ে গতির নেশায় মত্ত ছিল। কিন্তু বড় পর্দার ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস সিরিজের ভক্ত সনিকার পরিণতিও যে এমনই হবে তা কেই বা ভেবেছিল! কিন্তু অভিনেতা বিক্রম? সেলেব বলেই কি গ্রেপ্তারির হাত থেকে পার পেয়ে যাবেন তিনি? গতকালের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় সনিকার মৃত্যুর পর এমনই প্রশ্ন ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে। অনেকেই গোটা ঘটনার দায় চাপিয়েছেন বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের উপর। দুর্ঘটনাগ্রস্ত সাদা টয়োটা অল্টিস গাড়িটি তিনিই চালাচ্ছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এই মুহূর্তে বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিক্রম। কিন্তু পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে টালিগঞ্জ থানায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪এ (গাফিলতির জেরে মৃত্যু), ২৭৯ (বেপরোয়া গাড়ি চালানো) এবং ৪২৭ (সরকারি সম্পত্তি নষ্ট) ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। এই অভিযোগ যে অমূলক নয় তার প্রমাণ, প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি অনুযায়ী, দুর্ঘটনার সময় ঘণ্টায় ১০০ কিমি বেগে গাড়িটি আসছিল। রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে গাড়িটি ডিভাইডারে ধাক্কা খেয়ে ফুটপাতে গিয়ে পড়ে। কিন্তু বিক্রমের পরিবারের দাবি, আচমকা গলি থেকে একটি গাড়ি বেরনোয় নিয়ন্ত্রণ হারান বিক্রম। আর তাতেই এই দুর্ঘটনা। কিন্তু বিক্রমের পরিবারের দাবি স্থানীয় মানুষদের বয়ানের সঙ্গে মিলছে না। এমনকি তাঁর পরিবার টয়োটা কোম্পানির বিরুদ্ধেও মামলা করতে চলেছেন। অভিযোগ, দুর্ঘটনার সময় এয়ার ব্যাগ বের হয়নি বলে।
তবে এখন এক অন্য প্রশ্ন উঠছে। তার জন্য ফিরে যেতে হবে কয়েকদিন আগের একটি ঘটনায়। সেটিও এর মতোই অনেক বেশি মর্মান্তিক। যার জেরে বাংলার সংগীতজগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারাতে হয়েছে। দোহার ব্যান্ডের পুরোধা শিল্পী কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের মৃত্যুর ঘটনায় একইভাবে শোকস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন সবাই। গত ৭ মার্চ হুগলির গুড়াপের কাছে ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় বিশিষ্ট লোকসংগীতশিল্পী কালিকাপ্রসাদের। ব্যান্ডের অনুষ্ঠান উপলক্ষে সিউড়ি যাচ্ছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন দলের অন্যান্য সদস্যরা। গুড়াপের কাছে এসে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি নয়ানজুলিতে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় কালিকাপ্রসাদের। অবসান হয় এক সংক্ষিপ্ত কিন্তু উজ্জ্বল সংগীত যুগের। শোকের ছায়া নেমে আসে বাংলার লোকসংগীত মহলে। কিন্তু ঘটনার এখানেই শেষ হয় না। গ্রেপ্তার করা হয় গাড়ির চালক অর্ণব রাওকে। তার বিরুদ্ধে ১১ মার্চ গুড়াপ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন প্রয়াত শিল্পীর স্ত্রী ঋতচেতা গোস্বামী। এর পরই কলকাতার কসবা বোসপুকুর লেন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে গুড়াপ থানার পুলিশ। ধৃতের বিরুদ্ধে ৩০৪, ২৭৯ ও ৩৩৮ ধারায় মামলা রুজু করা হয়। তারপর তাকে চুঁচুড়া জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক দু’দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। আদালতে ছেলেকে দেখতে আসা গাড়িচালকের মা কাবেরী ঘোষ বললেন, ‘ছেলে কোনও অপরাধ করেনি। তাকে ফাঁসানো হয়েছে।’ জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১১ই মার্চ চালক অর্ণব রাওয়ের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর অভিযোগ দায়ের করেছিল কালিকাপ্রসাদের পরিবার। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে চালকের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ (অনিচ্ছাকৃত খুন), ৩৩৮ (গুরুতর আঘাত) এবং ২৭৯ (বেপরোয়া গাড়ি চালানো) ধারায় মামলা দায়ের করেছিল পুলিশ। এর মধ্যে ৩০৪ ধারাটি জামিন অযোগ্য। অর্ণবের মা সংবাদমাধ্যমকে জানান, গত তিন বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছে অর্ণব। গত মঙ্গলবার দুর্ঘটনার কবলে পড়া গাড়িটি মাত্র তিন দিন চালাচ্ছিল সে।
এবার প্রশ্ন, অর্ণব রাও এবং বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যে ধারায় মামলা রুজু হয়েছে তা প্রায় এক। দুজনের অপরাধও তাহলে এক। সেক্ষেত্রে অর্ণব রাওকে যেমন পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল তেমনই কি বিক্রমের সঙ্গেও হবে? প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে। যদিও গতকাল বিক্রমের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও গতকাল সারাক্ষণই হাসপাতালে ছিলেন। এই অবস্থায় বিক্রম সুস্থ হয়ে উঠলে পুলিশ আদৌ তাঁকে গ্রেপ্তার করবে কি না তা নিয়ে জল্পনা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে টলিপাড়ায়। বেশ কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নবীন প্রজন্মের সেলেবদের আরও বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। অনেকেই বেপরোয়া গাড়ি চালানোর জন্য সেলেবদের গতির নেশাকেই দুষছেন। কিন্তু পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়, কালিকাপ্রসাদ, সনিকা চৌহানরা আর তো ফিরবেন না। যা ক্ষতি হওয়ার তো হয়েই গিয়েছে। এমনকি ভয়াবহ দুর্ঘটনায় জখম হয়ে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নাতি রণদীপ বসু হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে নবীন প্রজন্মের সেলেবদের, নাহলে আরও বহু তাজা প্রাণ অকালেই চলে যাবে। বলছেন বিশেষজ্ঞরা। আর অনেকেরই দাবি, অর্ণব রাওকে যদি গ্রেপ্তার করা হয় তাহলে সমান দোষে অপরাধী বিক্রমও যেন পার না পান।
The post সেলেব বলেই কি গ্রেপ্তারির হাত থেকে পার পেয়ে যেতে পারেন বিক্রম? appeared first on Sangbad Pratidin.