সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জঙ্গি লঞ্চপ্যাড ধ্বংসের ক্ষেত্রে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ কালো টাকা রোখার ক্ষেত্রেও কড়া সিদ্ধান্তর ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছিলেন৷ সেইমতো মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকেই দেশে ৫০০, ১০০০ টাকার নোটের লেনদেন নিষিদ্ধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী৷ তাঁর এই সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষ কিছুটা ভোগান্তিতে পড়লেও, যথেষ্ট বিপাকে পড়েছে রাঘব বোয়ালরাও৷ এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের৷
দেশের বণিকমহল প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে খুশি৷ কালো টাকার পরিমাণ রাতারাতি কমে যাওয়ার ফলে দেশের অর্থনীতিতে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে বলেই মনে করছেন তাঁরা৷ বস্তুত, ক্ষমতায় আসার আগে কালো টাকা উদ্ধারই ছিল মোদির প্রচারের ট্রাম্প কার্ড৷ ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, বিদেশে থাকা কালো টাকা ফেরাতে পারলে দেশের প্রতিটি গরীব মানুষের অ্যাকাউন্টে অন্তত ১৫ লাখ টাকা করে জমা করা সম্ভব হবে৷ কালো টাকা রোখার ক্ষেত্রে বরাবরই তাই আগ্রাসি মনোভাব প্রধানমন্ত্রীর৷ কর আদায়ের ক্ষেত্রে অঘোষিত সম্পত্তি প্রকাশ্যে আনার বিষয়েও লাগাতার প্রচার চালিয়েছিলেন৷ এবার কালো টাকা রোখার ক্ষেত্রে সবথেকে বড় পদক্ষেপটি নিলেন৷ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের প্রতি ১০ লক্ষ নোটের মধ্যে ২৫০ নোটই কালো টাকা৷ এবং, বিগত বছরগুলিতে দেশের অর্থনীতির প্রসারের সঙ্গে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের নেলদেনের কোনও সামঞ্জস্য নেই৷ স্পষ্টতই দেশ জুড়ে কালো টাকার রাজত্বের ছবিটা ছিল স্পষ্ট৷ সূত্রের খবর, বিভিন্ন সীমান্ত থেকে ঢুকছিল এই কালো টাকা৷ এর সঙ্গে সক্রিয় ছিল মাফিয়া চক্রও৷ বিদেশে গা ঢাকা দেওয়া কুখ্যাত মাফিয়া ডন দেশে কালো টাকা পাচার করছিল বলেও খবর ছিল গোয়েন্দাদের কাছে৷ আর তাই সন্ত্রাস ও দেশীয় অর্থনীতির বিপর্যয় রুখতে এই সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের সিদ্ধান্ত নিল সরকার৷
তবে প্রশ্ন উঠছে, এই সিদ্ধান্তে কি আদৌ বিপাকে পড়ল রাঘব-বোয়ালরা? অনেকের মতে, কালো টাকা যাদের আছে তাদের অ্যাকাউন্ট আছে বিভিন্ন বিদেশী ব্যাঙ্কে৷ এ প্রসঙ্গে একটি পুরনো রসিকতাও মনে করছেন অনেকে৷ একসময় নরসিমা রাওয়ের বিরুদ্ধে ১ কোটি টাকা নগদ ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল৷ সে সময় প্রশ্ন উঠেছিল, ১ কোটি টাকা নগদ দিতে কটি ব্রিফকেস লাগতে পারে? সে রসিকতার সূত্র ধরেই অনেকে বলছেন, কালো টাকা কি কেউ থরে থরে বাড়িতে মজুত করে রাখে? অনেকের অভিযোগ, এতে ভোগান্তি হচ্ছে স্রেফ সাধারণ মানুষেরই৷ রাঘব বোয়ালরা ঠিক গা বাঁচিয়েই থাকবে৷
তবে এর সঙ্গে সহমত নয় বিভিন্ন মহল৷ বিদেশি অ্যাকাউন্ট ছাড়াই দেশে নগদে যে কালো টাকার নেলদেন হয় তা একরকম ‘ওপেন সিক্রেট’৷ বিশেষত নেতা-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ প্রায়শই ওঠে৷ নির্বাচনের সময় এ দেশে যে বিপুল অঙ্কের টাকার লেনদেন হয় তাও অজানা নয়৷ বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির কোনওটাই তো বিদেশি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে হয় না৷ বিভিন্ন রাজ্য এই দুর্নীতির সাক্ষী৷ মোদির এই সিদ্ধান্ত রাতারাতি সেই অসাধু কার্যকলাপ বন্ধ করে দিল বলেই মত অনেকের৷ এছাড়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা জমা দেওয়ার উর্ধ্বসীমাও নির্ধারিত৷ ফলে বেশি অঙ্কের টাকা জমা দিতে গেলেও বিপাকে পড়বেন অসাধু কারবারীরা৷ অর্থাৎ এক ধাক্কায় এই জাল টাকার কালাপাহাড়কে প্রায় কুপোকাৎ করেছেন মোদি৷ পাশাপাশি উঠছে জঙ্গি দমনের প্রশ্নও৷ দেশের অভ্যন্তরে চলতে থাকা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এর ফলে জোর ধাক্কা খাবে৷ কেননা, এর প্রায় পুরোটাই চলে কালো টাকার ভিত্তিতে৷ ফলে আপাতত তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে৷ রসদ না থাকার ফলে পিছু হটতে বাধ্য হবে সন্ত্রাসের মাস্ট্রামাইন্ডরা৷ প্রশ্ন উঠছে, সাধারণ মানুষ কি এই কারণে ভোগান্তি মেনে নেবে৷ উত্তরে অনেকেই বলছেন, শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যখন উদগ্রীব হন সাধারণ মানুষ, তখন সন্ত্রাসী কাজে লাগাম টানার মতো সিদ্ধান্তে দুর্ভোগটুকু মেনে নেবেনই বা কেন? অযথা আতঙ্কিত না হয়ে, বরং কালো টাকার মিলকদের রমরমা মুখ থুবড়ে পড়ার লক্ষণে খুশি দেশের বহু সাধারণ মানুষই৷
অনেক মহল থেকে এ প্রশ্নও উঠেছিল যে, ২০০০ টাকার নোট চালু হলে কালো টাকা আরও বেশি অর্থমূল্যে জমা হবে৷ কিন্তু নয়া মাইক্রো ন্যানো জিপিএস চিপের কল্যাণে এই নোট জাল করাও সম্ভব নয়৷
ফলত সাময়িক সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়লেও মোদির সিদ্ধান্তে আখেরে লাভবান হবেন দেশবাসীই, এমনটাই রায় দেশের অধিকাংশ মানুষের৷ তবে বিদেশে মজুত হওয়া কালো টাকা আদৌ ফিরবে কি না, সে প্রশ্ন থেকেই গেল৷বিদেশি অক্যাউন্টে জমা কালো টাকা ফেরাতে মোদি সরকার আর কোন পদক্ষেপ নেয়, এখন সেদিকেই তাকিয়ে দেশবাসী৷
The post কালো টাকার বিরুদ্ধে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে কতটা বিপাকে রাঘব-বোয়ালরা? appeared first on Sangbad Pratidin.