ঋত্বিক আচার্য: রাত পোহালেই মহালয়া (Mahalaya)। বাঙালির প্রাণের উৎসব শারদোৎসবের নান্দীমুখ। পিতৃপক্ষের শেষে মাতৃপক্ষের সূচনা। কিন্তু এবার উৎসবের তো সেই চেনা ছবিটাই উধাও। আকাশে সাদা মেঘের ভেলার উঁকি-ঝুঁকি দেখা গেলেও একেবারে মিলছে না পুজোর সেই চেনা আমেজ। কুমোরটুলিতে এখনও চোখে পড়ছে না চেনা ব্যস্ততা। মণ্ডপের কাজও এখনও শুরু হয়নি সেভাবে। কারণটা অবশ্য অজানা নয়। করোনাসুরের দাপাদাপিতে মৃত্যু, দারিদ্র আর ত্রাসের ছায়া সর্বত্র। সবকিছুই কেমন মলিন হয়ে যাচ্ছে। তবে কি মুক্তির পথ নেই? তবে কি মানুষের আস্থা, ভক্তি হার মানবে? দেবীদুর্গার (Durga Puja in West Bengal) আগমনিতে কি শেষ হবে না এই আসুরিক ক্রিয়াকলাপ?
উত্তর এতটা সরল নয়। আধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও মানুষের ভক্তি – বিশ্বাসের যৌক্তিকতার বরাবরের বিরোধ সামনে চলে আসে এখানে। করোনা রোধে ভ্যাকসিন, ওষুধ, আধুনিক চিকিৎসার পাশাপাশি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস নিশ্চিতভাবে একটা বিরাট বড় অস্ত্র। মানুষের এই বিশ্বাসের অন্যতম সনাতন রসদ হল জ্যোতিষশাস্ত্র। বিজ্ঞান যতই বলুক যৎসামান্য মাধ্যাকর্ষণ ছাড়া মানুষের জীবনে কোনও গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাবের বিষয়টাই একেবারে অবান্তর, কিন্তু জ্যোতিষচর্চার পীঠস্থান ভারতে এর প্রাসঙ্গিকতা আজও অমলিন। আল-বিরুনি থেকে বরাহমিহির বা খনার বচন কে না জানে। এমনকী সারা পৃথিবীজুড়ে রয়েছে এর মারাত্মক চর্চা। নোস্ত্রাদামুস হোক বা জিন-ডমিনিক ক্যাসিনি, জগৎজোড়া বিরাট বিরাট ঘটনার ভবিষ্যদ্বাণী এরা নাকি করে গিয়েছিলেন অনেক আগেই।
[আরও পড়ুন: ‘খোলা প্যান্ডেল হলে বেরিয়ে যাবে জীবাণু’, দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে পরামর্শ মমতার]
Covid-19-এর ভবিষ্যৎ নিয়েও জ্যোতিষাচার্য্যদের চর্চা চোখে পড়ার মতো। ২০২০ সালটা যে ভাল যাবে না, সেটা বিগত দশকেই আন্দাজ করে ফেলেছিলেন জ্যোতিষবিদরা। কারণ হিসেবে বলছেন ২০২০-র ১২ ই জানুয়ারী শনি, বৃহস্পতি, বুধ, মঙ্গল ও রাহুর একই বক্রপথে চলে আশা, যা নাকি রীতিমতো আশঙ্কার। গ্রহের এই ফের নাকি এর আগে দেখা গিয়েছিল প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর সময়। আর ১৯৮০-র সাংঘাতিক অর্থনৈতিক মন্দার সময়। টরন্টো নিবাসী ভারতীয় জ্যোতিষবিদ দিব্যা ভোজক আবার বলছেন, আজকের এই পৃথিবী জোড়া পরিস্থিতির কারণ মানুষের কর্মফল। আবার শালিনী দ্বিবেদী জানাচ্ছেন, বৃহস্পতি গ্রহের আশীর্বাদ থেকে এই মুহূর্তে বঞ্চিত মানুষ, তাই এই কঠিন পরিস্থিতি। জ্যোতিষবিদ অঞ্জলি গিরিধারীর মতে বৃহস্পতি, শনি ও কেতুর অবস্থানের ফেরেই ভাইরাসের এই বাড়বাড়ন্ত। ব্রিটেনের জ্যোতিষবিদ এরিক সানডের মতে শুক্রের মকরে অবস্থানই হল এই করোনার ব্যাপক বিস্তারের মূল কারণ। তিনি আরও বলেছেন যে দেহের প্রথম কক্ষে নেপচুনের অবস্থানই প্রশ্রয় দিচ্ছে এই সংক্রমণকে।
এই নেতিবাচক পরিস্থিতি থেকে বেরনোর কি কোনও আশার আলোই নেই? না, তা একেবারেই নয়। চলতি মাসেই মিলতে পারে এই সমস্যার সমাধান সূত্র। দ্বারকাধীশ মন্দিরের বিখ্যাত জ্যোতিষী অজয় তৈলং ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন যে ২৩ সেপ্টেম্বরের পরেই মিলবে এই সমস্যার সমাধানের পথ। জ্যোতিষশাস্ত্রের এই মুহূর্তে বিস্ময় বালক অভিজ্ঞ আনন্দও মনে করেন যে এই মাসেই কমতে পারে করোনার দাপট। জুলিয়ানা ম্যাকার্থি আবার বলছেন বৃহস্পতির সঙ্গে নেপচুনের ৬০ ডিগ্রি কৌণিক অবস্থান মানুষের মধ্যে করোনা সচেতনতা এবং আত্মিক বন্ধনকে দৃঢ় করবে। এর পাশাপাশি প্লুটো ও শনি গ্রহের উত্তরায়ণে হবে নারীশক্তির জাগরণ।
নারী শক্তির জাগরণ মানেই তো মহামায়ার পদধ্বনি। শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত অজয় ভট্টাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় উঠে এল চণ্ডীর কথা। তিনি বলেন “দেবী দুর্গা শুধুমাত্র দেবতাদের সম্মিলিত শক্তির দেবী নন। তিনি হলেন আমাদের সবার মধ্যে যে একক দেবী আছেন দেবতাদের সম্মিলিত প্রয়াসে একত্রিত সেই শক্তির স্বরুপ।” তিনি আরও জানান “জগৎ, গ্রহ, নক্ষত্র সবের স্রষ্টা তিনিই; তিনি বিশ্ব সংসারের মাতা; তাঁর পুজো হৃদয়ের পুজো।” তাই যে পুজো হৃদয়ের পুজো তাতে বাধা, বিপত্তি এলেও যে সেটা জয় করে মাতৃ আরাধনা ব্যাহত হবে না বলাই বাহুল্য।
[আরও পড়ুন: দলীয় কার্যালয় থেকে মন্দির-মসজিদ, এই ক্লাবে সব স্থানের মাটি মিশিয়ে তৈরি হল মা দুর্গার মুখ]
ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সম্পাদক শাশ্বত বোসের এবিষয়ে মতামত জানতে চাইলে জানান ” ভাদ্র মাস আদপে একটা মল মাস তার মধ্যে মহালয়ার তিথি এতেই ছিল অশুভ ইঙ্গিত।” তিনি আরও বলেন যে “আগামী এক মাসে নিশ্চিতভাবে করোনা পরিস্থিতি বদলাবে।” বক্তব্য ব্যাখ্যা করে উল্লেখ করেন “আমাদের দেশে করোনা (Coronavirus) সংক্রমণের প্রকোপ অনেক পরে শুরু হয়েছে, সময়ের দিক থেকে তাই ভাবলে আগামী এক মাসে অবশ্যই করোনার প্রকোপ কমবে।” শুভশক্তির কাছে অশুভ শক্তি যে দ্রুত পরাভূত হবে সেই আস্থায় বুক বাঁধছেন ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সম্পাদক। তিনি আরও মনে করেন যে মা দুর্গা যিনি কিনা আমাদের ঘরের মেয়ে, তিনি এবার ভৌগোলিকভাবে চীনের অন্তর্গত কৈলাশ থেকে এসে ১৫দিন থাকবেন আমাদেরই মতো কোয়ারেন্টাইনে। তারপর আমাদের প্রস্তুতি খুঁটিয়ে দেখে পূজিত হবেন এই মর্ত্যলোকে।
এই গ্রহে নিঃসন্দেহে সবথেকে বুদ্ধিমান জীব মানুষ। সেই জীবের সৃষ্টির পিছনে থাকা অবিনাশী মাতৃশক্তি সময় সময়ে মানুষকে রক্ষা করে এসেছে। আর সেই অবিনাশী শক্তিরই কোনও প্রভাব বা প্রতিভূর হাত ধরে হয়তো আবারও বাঁচবে মানব সমাজ। সেই বিশ্বাসেই বুক বাঁধা যাক।
The post আকাশে-বাতাসে দেবীর আগমনির সুর, মায়ের আশীর্বাদেই কি বিদায় নেবে করোনা? appeared first on Sangbad Pratidin.