দুলাল দে: লাল-হলুদের প্রাক্তন কোচ ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের ‘গড সন’। স্কট নেভিলের বাবা স্টিভ নেভিল আর মর্গ্যান দু’জনেই অভিন্ন হৃদয় বন্ধু। ফলে গির্জায় গিয়ে স্কট নেভিলের ‘গড ফাদার’ হতে সামান্য দেরি করেননি লাল-হলুদের (SC East Bengal) প্রাক্তন কোচ। ডার্বি নামক মহাযুদ্ধ জেতার জন্য শুক্রবার লাল-হলুদ সমর্থকরা তাকিয়ে থাকবেন মর্গ্যানের ‘গড সন’ স্কট নেভিলের দিকেই। তাঁর ঘাড়েই যে পড়তে চলেছে এটিকে মোহনবাগানের রয় কৃষ্ণকে থামানোর গুরুদায়িত্ব। তিনি কিন্তু ডার্বির আগে ফুরফুরে। ‘রয় কৃষ্ণ’ (Roy Krishna) আর ‘চাপ’ এই দুটো শব্দই এই মুহূর্তে অনেক দূরে ‘ব্রিসবেন রোয়ার’-এর প্রাক্তন ফুটবলার থেকে। সোমবার সকালে সেসা অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন শেষ করে হোটেলে ফিরে ‘সংবাদ প্রতিদিন’কে যা বললেন, তাতে মনেই হল না কোনও চাপে আছেন।
প্রশ্ন: এটিকে মোহনবাগানের ম্যাচটা টিভিতে দেখার পর ডার্বির প্রতিপক্ষ নিয়ে ভাবনা চিন্তায় কোনও বদল এসেছে?
নেভিল: দেখুন, এসসি ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলার হওয়ার আগেই কলকাতার ডার্বি নিয়ে আমি অনেকের থেকেই বেশি জানি। ১৯৯৭-এ ডার্বি ম্যাচ ঘিরে স্টেডিয়ামে ১ লক্ষ ২০ হাজারের বেশি মানুষের সমাগম হয়েছিল সেটাও জানি। এরকম একটা ম্যাচ খেলতে নামার আগে উত্তেজিত থাকাটাই তো স্বাভাবিক।
প্রশ্ন: প্রথম ম্যাচ দেখার নিরিখে এটিকে মোহনবাগানকে বিশ্লেষণ করতে হলে কী বলবেন?
নেভিল: (হেসে উঠে) দেখুন, আমিও কিন্তু সেটাই বোঝাতে চাইছিলাম।
প্রশ্ন: কীরকম?
নেভিল: যে দলের এরকম জনসমর্থন রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে খেলাটা খুব একটা সহজ নয়। সেদিন কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ম্যাচটা খুব ভালভাবে দেখেছি। কীভাবে আমরা এটিকে মোহনবাগানের (ATK Mohun Bagan) বিরুদ্ধে খেলব, তা নিয়ে পরে নিশ্চয়ই আমাদের পরিকল্পনা হবে। তবে এটুকু বলতে পারি, প্রথম ম্যাচেই দারুণভাবে তিন পয়েন্ট পেয়ে গিয়েছে ওরা। যে কোনও প্রতিযোগিতায় শুরুর ম্যাচেই তিন পয়েন্ট নিয়ে শুরু করতে পারা দারুণ ব্যপার। তাই ওরা ভাল জায়গায় রয়েছে।
প্রশ্ন: কিন্তু অনেক ফুটবল বিশেষজ্ঞ বলছেন, আপনারা ওদের দেখে নেওয়ার সুযোগ পেলেন। হাবাস কিন্তু আপনাদের দল এখনও দেখতে পায়নি। সেই দিক থেকে আপনারা তো অ্যাডভান্টেজ অবস্থায় রয়েছেন।
নেভিল: এই পর্যায়ের ফুটবলে এরকমভাবে অ্যাডভান্টেজ পাওয়া যায় না। একটা ম্যাচ দেখে নিতে পারলে যে মাঠে সব কিছু ওলটপালট হয়ে যায়, এরকমটা নয়। আবার উলটো দিক থেকে দেখলে মনে হবে, ডার্বির আগে ওরা আমাদের থেকে অনেক ভাল জায়গায় রয়েছে।
প্রশ্ন: কীভাবে?
নেভিল: একটা ম্যাচ খেলে নিয়ে ওদের ফুটবলাররা আইএসএলের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়ে গেল। সেখানে আমাদের মাঠে নামতে হবে একদম নতুন পরিবেশে। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে প্রত্যেক ফুটবলারেরই কিছুটা হলেও সময় লাগে। সেদিক থেকে ওরা তো ভাল জায়গায়।
[আরও পড়ুন: ‘ফোন করলেই কাঁদে, বাবার স্বপ্ন পূরণ করেই দেশে ফিরতে চায়’, জানালেন সিরাজের দাদা]
প্রশ্ন: আপনি নিশ্চয়ই বলবেন, এটিকে মোহনবাগান থেকে অনেক দেরিতে প্র্যাকটিস শুরু করার কথা।
নেভিল: না। সেটা আমাদের প্রস্তুতিতে কোনও অসুবিধা হয়েছে বলে মনে হয়নি। যা সময় পেয়েছি, তার মধ্যে আমরা ম্যাচ খেলার জন্য প্রস্তুত। দেখুন, আমাদের দলে সবাই পেশাদার ফুটবলার। সব হাই লেভেলে খেলা বিদেশি ফুটবলার। সেরা ভারতীয় ফুটবলাররা দলে আছে। তাই যে কোনওরকম প্রতিকূলতায় মানিয়ে নিতে খুব একটা সময় লাগেনি। অন্তত প্রস্তুতি নিয়ে আমার তরফে কোনও অভিযোগ নেই। আর ডার্বির সঙ্গে এগুলোর কোনও সম্পর্ক থাকে না। ম্যাচটা টোটালি ডিফারেন্ট।
প্রশ্ন: এটিকে মোহনবাগানের ম্যাচটা যখন দেখেছন, তখন প্রশ্নটা করেই ফেলি।
নেভিল: (হাসতে হাসতে) নিশ্চয়ই রয় কৃষ্ণকে নিয়ে?
প্রশ্ন: বুঝে গিয়েছেন?
নেভিল: ডার্বির আগে সবাই তো দেখছি তাই বলছে।
প্রশ্ন: সবাই বলছেন, আপনার আর রয় কৃষ্ণর লড়াইয়ের ফলাফলের উপরেই কিন্তু ডার্বির ভাগ্য নির্ভর করছে।
নেভিল: (হেসে উঠে) ওদের ম্যাচ দেখে আমার বলার অপেক্ষা রাখে না যে, রয় কৃষ্ণ দারুণ ফুটবলার। ও কী করতে পারে সবাই জানে। তবে আমার তরফ থেকে বলতে পারি, লড়াইটা কোনও ভাবেই রয় কৃষ্ণর বিরুদ্ধে আমার নয়। আমার কাজ দলকে ঠিক ভাবে ডিফেন্ড করা। আবার অ্যাটাকের কাজটাও নিচের থেকে শুরু করা। সেখানে রয় কৃষ্ণকেও আটকাতে হবে। তবে শুধু রয় কৃষ্ণকে নিয়েই ভাবছি না। ওদের যে ফুটবলারই অ্যাটাক করতে আসবে, তাঁকেই আটকাব।
[আরও পড়ুন: ‘আমার সময় শেষ’, WWE-কে বিদায় জানালেন সুপারস্টার আন্ডারটেকার]
প্রশ্ন: আপনি ডার্বি ম্যাচ বলতে গিয়ে ’৯৭-এর ডার্বিতে রেকর্ড সংখ্যক দশর্কের কথা তুললেন। কিন্তু ভারতের মাটিতে প্রথম ডার্বিটাই খেলবেন দর্শক শূন্য অবস্থায়।
নেভিল: এই অবস্থাটা একজন ফুটবলারের জন্য কতটা হতাশার তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। দু’দলেরই এত লাখ লাখ ফ্যান। কিন্তু শুক্রবার স্টেডিয়াম থাকবে শূন্য। এখানে আসার আগেই জেনেছি, আমাদের সমর্থকরা ভারতীয় ফুটবলের সবচেয়ে আবেগপ্রবণ সমর্থক। আমরা যেরকম গ্যালারিতে ওদের দেখতে পাব না বলে হতাশ হব, ওরাও একই ভাবে হতাশ হবে মাঠে ঢুকতে না পেরে। ফ্যানদের হতাশা কাটাতে পারি আমরাই। এটিকে মোহনবাগানকে হারানোটাই হবে সমর্থকদের জন্য আমাদের তরফ থেকে সেরা উপহার। ভাল পারফরম্যান্স করতেই হবে।