দেশের সংকটের দিনে কলম ধরলেন হীরালাল মজুমদার মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যাপক ঋত্বিক আচার্য।
সারা দেশে যখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, লকডাউনের সময়সীমা যখন পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলিতে আরও ১৫ দিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে, সাধারণ মানুষের রুজি-রোজগার, সারা দেশের অর্থনীতি যখন বিপন্ন, তখন মুক্তির পথ দেখাচ্ছে ভারতেরই এক রাজ্য। কেরল।
দেশের প্রথম করোনা আক্রান্তের সন্ধান মেলে এখানেই। পরবর্তীতে ভারতের সর্বাধিক সংখ্যক আক্রান্তও দেখা যায় এখানেই। আজ থেকে প্রায় ১০০ দিন আগে এ রাজ্যে প্রথম করোনা আক্রান্তের সন্ধান মেলে। আজকের দিনে মোট আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ৩৭০, যে বৃদ্ধির হার প্রাথমিকভাবে এখানে দেখা গিয়েছিল, তা আজ সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এবং অতি দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। এই মুহূর্তে এই রাজ্যে চিকিৎসাধীন ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ২২০ এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৪০-এর বেশি সংখ্যক মানুষ। মৃত্যু হয়েছে মাত্র ২ জনের। পরিসংখ্যানের দিক থেকে বললে সুস্থতার হার প্রায় ৩৭%, যা সারা দেশের তুলনায় ৩ গুণের কিছু বেশি। আর সারা বিশ্বের তুলনায় ১.৫ গুণের খানিক বেশি। আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যুর হারও কেরলে বেশ কম। মাত্র ০.৫৪%, যা দেশের নিরিখে ৭ ভাগের ১ ভাগ এবং বিশ্বের নিরীখে ১২ ভাগের ১ ভাগ।
[আরও পড়ুন: জাহাজের কেবিন থেকে ঘরের চার দেওয়ালে বন্দি, বিবর্তনের ‘কোয়ারেন্টাইন’]
দেশের বেশ কিছু রাজ্যে যখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে, তখন একসময় আক্রান্তের সংখ্যায় শীর্ষে থাকা এই রাজ্যটি কোন পথ অনুসরণ করে হয়ে উঠেছে মডেল? কেন মহারাষ্ট্র সরকার এই রাজ্যের কাছে করোনা নিয়ন্ত্রণে সাহায্যপ্রার্থী? আসুন দেখে নেওয়া যাক:
১. অতি দ্রুত নীতি নির্ধারণ ও সর্বাধিক আক্রান্তের সম্ভাব্য সংখ্যা গণনার মাধ্যমে, সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণ করা হয়েছে।
২. আক্রান্ত রুগীদের পূর্ববর্তী গতিবিধি নির্ধারণের মাধ্যমে রুট ম্যাপ তৈরি করা।
৩. কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রগুলিতে বেশিদিন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নজরবন্দি এবং চিকিৎসাধীন রাখা (২৮ দিন) এবং তাঁদের পরিষেবা হিসেবে পছন্দমতো খাবারের ব্যবস্থা, Wi-Fi কানেকশন দেওয়া। পাশাপাশি কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করে মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখা।
৪. GOKdirect অ্যাপ অতি দ্রুত চালু করে রাজ্যের মানুষকে সঠিক তথ্য দেওয়া যাতে গুজব আর বেঠিক তথ্য আটকানো যায়।
৫. আঞ্চলিক সেচ্ছাসেবক দল গঠন করে তাদের নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ব্যবহার।
৬. দ্রুত করোনা পরীক্ষার স্বার্থে আঞ্চলিক কিওস্ক গঠন।
[আরও পড়ুন: COVID-19 কি তাহলে জৈব রাসায়নিক যুদ্ধের মহড়া?]
৭. ঘরবন্দি মানুষকে কাজ এবং বিনোদনের স্বার্থে অন্তত ৩০-৪০% বেশি পরিমাণ ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়া।
এছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলির মধ্যে পরিষেবা প্রদানে সমন্বয় সাধন বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
The post করোনা মোকাবিলায় কেরল মডেলই আশার আলো, ভারত কি পারবে? appeared first on Sangbad Pratidin.