দুলাল দে: আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের ইচ্ছে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করবেন ঐতিহ্যবাহী আইএফএ শিল্ড। কিন্তু এবার কি আদৌ খেলবে এটিকে মোহনবাগান এবং এসসি ইস্টবেঙ্গল? আইএফএ সচিব বলছেন, “আমি সবাইকেই চিঠি দিয়েছি। এবার ক্লাবগুলোর উত্তরের দিকে তাকিয়ে। তবে অনেক ক্লাব খেলার জন্য মুখিয়ে আছে।”
আইএফএ সচিব বললেও এসসি ইস্টবেঙ্গল এবং এটিকে মোহনবাগানের (ATK-Mohun Bagan) শিল্ডে যোগদান এখনও অন্ধকারে। তারমধ্যে শিল্ড খেলা ইস্যুতে ইস্টবেঙ্গলে ফের সুপার কাপকে কেন্দ্র করে ক্লাব আর বিনিয়োগকারী সংস্থার মধ্যে বাদানুবাদের পুরনো ঘটনা মনে করাচ্ছে।
শ্রী সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ ইস্টবেঙ্গলের বিনিয়োগকারী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্লাবের নাম পরিবর্তন করার জন্য আইএফএতে চিঠি দিয়েছিলেন ক্লাব সচিব কল্যাণ মজুমদার। তারপর থেকে আইএফএতে নথিভুক্ত হয়েছে ‘শ্রী সিমেন্ট ইস্টবেঙ্গল ফাউন্ডেশন।’ কিন্তু আইএফএ শিল্ড খেলার আমন্ত্রণ জানিয়ে শ্রী সিমেন্ট ইস্টবেঙ্গল ফাউন্ডেশনের কোনও কর্তাকে চিঠি না পাঠিয়ে আইএফএ সচিব শিল্ড খেলার আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে (SC East Bengal)। যা ভালভাবে নিচ্ছেন না শ্রী সিমেন্ট ইস্টবেঙ্গল ফাউন্ডেশনের কর্তারা। এই প্রসঙ্গে আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা হল, “ক্লাবের নাম শ্রী সিমেন্ট ইস্টবেঙ্গল ফাউন্ডেশন করার জন্য আইএফএকে চিঠি দিয়েছিলেন ক্লাব সচিব কল্যাণ মজুমদার। তাই আমরা ক্লাব সচিবকেই জানি। এখনও পর্যন্ত আইএফএর গভর্নিং বডিতে শ্রী সিমেন্ট ইস্টবেঙ্গল ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধির নাম রয়েছে দীপঙ্কর চক্রবর্তী। তিনি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের গ্রাউন্ড সচিব। তার উপর শ্রী সিমেন্ট ইস্টবেঙ্গল ফাউন্ডেশন থেকে আমাদের সঙ্গে এখনও পর্যন্ত কোনও যোগাযোগ করা হয়নি। ওদের ইমেল আইডিও জানি না। স্বাভাবিকভাবেই আমরা ক্লাবকেই শিল্ড খেলার জন্য জানিয়েছি। এবং ক্লাব আমাদের মৌখিক ভাবে সম্মতি জানিয়েছে।”
এই প্রসঙ্গে শ্রী সিমেন্ট ইস্টবেঙ্গল ফাউন্ডেশনের তরফে অ্যাডাভাইসর শ্রেণিক শেঠ বললেন, “চুক্তিমতো যে কোনও কিছু খেলার সিদ্ধান্ত নিতে পারে শুধু শ্রী সিমেন্ট ইস্টবেঙ্গল ফাউন্ডেশন। তাই আমরা ঠিক করব, খেলব কি না।” আর আইএফএর সঙ্গে যোগাযোগ না করা নিয়ে বললেন, “শনিবার পর্যন্ত আমরা এএফসির লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। কারণ, এই মুহূর্তে আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য, আইএসএল খেলা। আগে সব কিছু গুছিয়ে নিই, তারপর ধীরে ধীরে আইএফএর সঙ্গে বসা যাবে। আগে তো এএফসি এবং এআইএফএফর ব্যাপারটা দেখতে হবে। আইএফএ তো এআইএফএফের নথিভুক্ত সংস্থা। তাছাড়া শ্রী সিমেন্ট ইস্টবেঙ্গল ফাউন্ডেশন হওয়ার আগে ক্লাবের তরফে দীপঙ্কর চক্রবর্তী গভর্নিং বডির মেম্বার হয়েছেন। আমরা করিনি।”
[আরও পড়ুন: প্রয়াত মোহনবাগানের প্রাক্তন ফুটবলার সত্যজিৎ ঘোষ, শোকের ছায়া ময়দানে]
ক্লাবের তরফে অন্যতম শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার বললেন, “শিল্ড খেলার জন্য আইএফএর থেকে ক্লাবকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আমরা শনিবার রাতে সেই চিঠি শ্রী সিমেন্ট ইস্টবেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মিঃ খান্ডেওয়ালের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।’’ আইএফএ শিল্ড (IFA Shield) খেলার প্রসঙ্গে বললেন, “ক্লাবের সভ্য সমর্থকদের কথা ভেবে অবশ্যই লাল-হলুদের আইএফএ শিল্ড খেলা উচিত। আলোচনার সময়েই শ্রী সিমেন্টকে বলা ছিল, ইস্টবেঙ্গল সব প্রতিযোগিতায় খেলবে। আমাদের অনেক ফুটবলার রয়েছে। দ্বিতীয় দল নিয়ে শিল্ডে খেলাই যায়।”
শ্রেণিক শেঠ বললেন, “কোম্পানির তরফে ক্লাবের সব ব্যাপার দেখার কথা আমার আর সুভাষ জাজুর। কিন্তু আমি আইএফএর কোনও চিঠি এখনও পাইনি। চিঠি পেলেও দেখতে হবে, কবে খেলা। কাদের পাব। তাছাড়া আই লিগ বা আইএসএলের মতো শিল্ডেও আইএফএ বায়ো বাবলের ব্যবস্থা করছে কি না। হোটেলে থাকার খরচ কে দেবে? কারণ, এটা আমন্ত্রণী প্রতিযোগিতা। ফলে আমাদের আমন্ত্রণ জানালে আইএফএরই সব খরচ বহন করা উচিত।”
আইএফএ (IFA) সচিব অবশ্য জানালেন, “কোনও বায়ো-বাবল থাকবে না। তবে পাঁচদিন অন্তর কোভিড টেস্ট করা হবে। স্থানীয় ফুটবলাররা বাড়ি থেকে এসেই খেলতে পারবে।” এটিকে মোহনবাগানের পক্ষে অন্যতম ডিরেক্টর দেবাশিস দত্ত অবশ্য যা ইঙ্গিত দিলেন, তাতে মোহনবাগানের শিল্ডে খেলার সম্ভাবনা নেই। দেবাশিস দত্ত বললেন, “আমরা এখন আইএসএল নিয়ে ব্যস্ত। তাছাড়া শিল্ড যদি বয়স ভিত্তিক প্রতিযোগিতা হত, নিশ্চয়ই দ্বিতীয় সারির দল খেলাতাম। শিল্ড প্রথম সারির প্রতিযোগিতায় কেন রিজার্ভ দল খেলাব? আর সবুজ-মেরুন জার্সি যেখানে খেলতে নামে, সেটা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই নামে।”
[আরও পড়ুন: রোহিত, ইশান্তের পর এবার চোটের কবলে বরুণ চক্রবর্তী, অনিশ্চিত তাঁর অস্ট্রেলিয়া সফর]
এসসি ইস্টবেঙ্গলের দল গঠনের ক্ষেত্রে ভাবা হচ্ছে, কেভিন লোবো-সহ যাঁদের চুক্তি থাকার পরেও গোয়া নিয়ে যাওয়া হয়নি, তাঁদের খেলানোর কথা। যদিও শ্রেণিক শেঠ বললেন, “চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনই জানানো সম্ভব নয়।” আইএফএ অবশ্য মহামেডান, ইন্ডিয়ান অ্যারোজ, গোকুলাম, পিয়ারলেস, ভবানীপুর, সাদার্ন সমিতিদের নিয়ে আট দলের প্রতিযোগিতা করার কথা ভাবছে। ভবানীপুরের পক্ষে সৃঞ্জয় বোস বললেন, “সবাই যেখানে বায়ো-বাবলে রেখে খেলা করার কথা ভাবছে, সেখানে বাড়ি থেকে এসে খেলা ফুটবলারদের জন্য ঝুঁকি হয়ে যাবে। কিছু হয়ে গেলে কে দেখবে?”
জয়দীপ বাবু অবশ্য বললেন, “আই লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনের সময় যাঁরা কোভিড নিরাপত্তার ব্যাপারটা দেখেছেন, এখানেও তাঁরাই দেখবেন।”
এত কিছুর পরেও বলতে হচ্ছে শিল্ড নিয়ে কিন্তু মারাত্মক জট বেঁধে গিয়েছে। যেখানে মোহনবাগানের খেলার সম্ভাবনা নেই। ইস্টবেঙ্গলও শেষ পর্যন্ত খেলবে কি না, এখনই বুক ঠুকে বলা যায় না।