অরূপ বসাক, মালবাজার: বিজলি বাতির হাত ধরে সভ্যতার আলো ঘরে পৌঁছলেও মনের কোণায় আজও ঘাপটি মেরে রয়েছে কুসংস্কার। তা সে পথে বিড়াল দেখে থমকে যাওয়াই হোক বা তন্ত্রের বলে বলীয়ান হয়ে ওঠার চেষ্টা। পরিস্থিতি যে এখনও শুধরাতে ঢের দেরি তা বলে দিতে হয় না। এবার কুসংস্কারে আছন্ন হয়ে তন্ত্র সাধনার নামে নিজের মানসিক ভারসাম্যহীন দশ বছরের ছেলেক বলি দিয়ে বাড়ির মধ্যেই গর্ত খুঁড়ে পুতে ফেলার অসফল চেষ্টা করতে গিয়ে ধরা পড়ল এক মহিলা।
[আরও পড়ুন: মর্মান্তিক! অজান্তেই করোনায় মৃত মায়ের দেহ কাঁধে নিয়ে মৃত্যু ৫ ছেলের, শেষ গোটা পরিবার]
বর্তমান যুগে এমন এক মধ্যযুগীয় ঘটনাটি ঘটেছে ডুয়ার্সের নাগরাকাটা ব্লকের কুর্তি চা বাগানের আপার ডিভিশন শ্রমিক বস্তিতে। চা বাগানের শ্রমিকনেতা জয়পাল উরাও জানান, চা বাগানের আপার লাইনে বিনোদ পান্না ও হিরামনি (কুন্তি) উরাও বলে এক দম্পতি থাকে। মহিলার গলায় বিভিন্ন তাবিজ রয়েছে। বাড়িতে ঠাকুরঘর বানিয়ে তন্ত্র মতে পুজা করতো। তাদের একটি ছেলে রয়েছে। ছেলেটি সামান্য মানসিক ভারসাম্যহীন। রবিবার রাতে হঠাৎ সেই ছেলেটি কাঁদতে কাঁদতে শ্রমিক মহল্লায় দৌড়ে বেরিয়ে আসে। পিছনে মা ছুটে আসে। মহল্লার শ্রমিকরা জানতে চাইলে ছেলেটি জানায় তার মা তাকে জাদুটোনা করে বলি দিয়ে মেরে পুঁতে ফেলতে চাইছে। তাই পালিয়ে এসেছে। কিন্তু, ছেলেটি মা জানায় যে ছেলেকে ভয় দেখানোর জন্য এমন করেছে। শ্রমিকরা তার বাড়িতে গিয়ে দেখে ঘরের মধ্যে তিন ফুট গভীর গর্ত খোঁড়া রয়েছে। এতেই সবার মনে সন্দেহ হয়। ঘটনায় চাঞ্চল্য হলে পুলিশকে খবর দিয়ে ওই দম্পতিকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
চা বাগানের এক শিক্ষক জানায়, খবর পেয়ে আমরা ওই ঘরে গেলে বিরাট গর্ত দেখতে পাই। কেন গর্ত খুড়েছিল জানিনা। কয়েকজন শ্রমিক জানায় ওই বিভিন্ন জাদুটোনা করত। এসব কাজে মানুষের ক্ষতি হতে পারে। নাগরাকাটা থানার ওসি সঞ্জু বর্মন জানান, ওই মহিলাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালতে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা করেছে স্থানীয় বেশ কয়েক জন শিক্ষক ও বিঞ্জান মঞ্চের সদস্যরা। তারা জানায়, আদিবাসী সমাজে এখনও ডাইনি হত্যা-সহ বিভিন্ন কুসংস্কার রয়েছে। এর বিরুদ্ধে লাগাতার সচেতনতা প্রচার দরকার।
[আরও পড়ুন: রাজ্যে সংক্রমিতের সংখ্যা ছাড়াল ৪৭ হাজার, সামান্য স্বস্তি দিচ্ছে সুস্থতার উর্ধ্বমুখী গ্রাফ]
The post আজও কাটেনি মনের অন্ধকার, তন্ত্রসিদ্ধ হওয়ার আশায় নিজের ছেলেকেই বলির চেষ্টা মায়ের appeared first on Sangbad Pratidin.