shono
Advertisement

আমরা-ওরা পিছিয়ে পড়া

কেরিয়ারের চূড়ান্ত সময়ে বা পরিণতির স্তরে মহিলারা সেভাবে সাফল্য পাচ্ছে না। ঘরে ঘরে একই কাহিনির ধারাবাহিক পুনরাবর্তন কেন! প্রশ্ন তুলেছেন মন্দার মুখোপাধ্যায় The post আমরা-ওরা পিছিয়ে পড়া appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 12:03 PM Jul 28, 2018Updated: 12:33 PM Jul 28, 2018

শিক্ষা ও অগ্রগতিতে নারী-পুরুষের সমতায় ১৪৪টি দেশের মধ্যে ভারত ১০৮তম ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’-এর ২০১৭-র রিপোর্ট তেমনই বলছে। অথচ দেখা যাচ্ছে শিক্ষার বুনিয়াদি ও তার পরের ধাপেও ছেলেদের থেকে মেয়েরা এগিয়ে ছিল। কিন্তু উচ্চশিক্ষার একটা স্তরে পৌঁছনোর পরেই সেই দৌড়ে পিছিয়ে যাচ্ছে তারা। কেরিয়ারের চূড়ান্ত সময়ে বা পরিণতির স্তরে তারা সেভাবে সাফল্য পাচ্ছে না। ঘরে ঘরে একই কাহিনির ধারাবাহিক পুনরাবর্তন কেন! প্রশ্ন তুলেছেন মন্দার মুখোপাধ্যায়

Advertisement

মেয়েরাই খুঁজে এনেছিল শস্যবীজ- যা দিয়ে হরিৎক্ষেত্র। তারাই প্রথম অনুভব করেছিল আর এক প্রাণ- শরীরের মাঝমধ্যিখানে। মানুষ-সন্ততির মা হয়ে প্রতিপালন- সেই তার শুরু। হয়তো বা দুঃখেরও শুরু। সেই কোন যুগে অ্যারিস্টটল বুঝেছিলেন- সমাজের দু’টি প্রাথমিক প্রজননশীল গোষ্ঠী হল নারী ও পুরুষ। ‘মানবাত্মা’-র ছদ্মনামে মেলাতে চাননি- উলটে বিভাজনে দেখালেন কী তাদের অবস্থান। সমাজের উন্নতিতে পশুর বলকে হটিয়ে মনোবলের স্বীকৃতি যত এল, ঠিক ততটাই উলটোবেগে উলটো বেগে নর ও নারীর সম্পর্ক। পুরুষ পেশির জোরে এল ‘সক্ষমতা’ আর জন্ম-যন্ত্রণা সহ্য করার শক্তিকে বলা হল ‘জান্তব’। ক্রমে নারী দাস বা নামমাত্র সম্মানে সহযোগী। ফলে ‘ফিনিশিং রেখা’ ছোঁয়ার আগেই ফিনিশ। দু’জনে একসঙ্গে ছুটতে শুরু করেও পিছিয়ে পড়ছে মেয়েরা। কিন্তু কেন?

খেলার জগতে তো ই-ভোটগুলো আলাদা, তাই ফলাফলে কারচুপি নেই। কিন্তু মেধার জগতে যেখানে শরীর-সামর্থ্য লাগে না, সেখানেও তো তুলনামূলকভাবে তাই। শ’দেড়েক দেশে সমীক্ষা চালিয়ে ভারতের স্থান একশোর উপরে। অবাক হওয়ার কিছু আছে কি!
আমার উচ্চশিক্ষিত মা সংসারের কথা ভেবে বাড়ির মানুষদের ছেড়ে বিদেশ যেতে পারেননি। পারেননি প্রবাসে থেকে আরও বড় চাকরি করতে। উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়ে বিদেশে গিয়েও ফিরে এসেছেন যমুনাদি, সংসারের বেহাল ভবিষ্যৎ ভেবে। উচ্চ মাধ্যমিকে ৮০ শতাংশ নম্বর পেয়েও পড়তে পায়নি রত্না। ভাল সম্বন্ধ হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে। উচ্চ মাধ্যমিক পাস, সেলাইতে ডিপ্লোমা, সাঁতার-সাইকেলে অটুট স্বাস্থ্য– বিয়ে হল ‘এইট পাস’ বেকার ছেলের সঙ্গে- গণ্ডগ্রামে। কিনা, ছেলে ভাল,

মদ-মেয়েমানুষে যায় না! ছেলেদের এই ‘ভাল’টা মেয়েদের যোগ্যতা হিসাবে ধরা হয় কেন? এই ‘হিসাব’ শব্দটাই আসল। এরই মধ্যে
তত্ত্ব-তালাশ-যৌতুক-ন্যায্য ধর্ষণ- ‘আঁটকুড়ি’র শিরোপা এবং হত্যা। সতীদাহ বিরোধী আইন, যৌতুক বিরোধী আইন, বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধকরণ, বহুবিবাহ বন্ধ, বিবাহে ধর্ষণ, মানসিক অত্যাচার এবং পোস্টমর্টেম- আইন কোথায় নেই? কোথায় সুরক্ষা নেই? থানা-পুলিশ-ডাক্তার-উচ্চন্যায়ালয়, বিধায়ক-মন্ত্রী এবং রাশিখানেক এনজিও- সবাই তো অধিকার প্রতিষ্ঠায় থরে থরে। আসলে সেই ‘লাঠি লাও, সড়কি লাও- লাও তো বটে, আনে কে?’ কারণটা আমাদের অবস্থানেই। অবস্থিতিতে। এখনও ভাবতে পারি না যে সংসার সামলাব দু’জনেই। সমান সক্ষমতায়। অথচ আয় করব দু’জনে, খাব দু’জনে, শোব দু’জনে, থাকব দু’জনে– কিন্তু ঘর সামলাবে মেয়েরা। মায়েরা, শাশুড়িরা, দিদিরা, বোনেরা এবং বউ। ওটা মেয়েরা পারে। দরকারে ছুটিও নেবে মেয়েরা। সে আমি কলেজের দিদিমণি হই বা ছায়া আমার রান্নার লোকই হোক বা ফিজিওথেরাপিস্ট কমলাই হোক বা ব্যাঙ্কের উচ্চপদে থাকা শর্মিলাই হোক। শুরুর দৌড়টা এক। কিন্তু শেষের আগেই মাঝপথে থেমে যাওয়া। এবং এই আত্মতৃপ্তি- ঘরের লোকটা আর ছেলেমেয়েগুলো তো বাঁচল দু’টি খেয়ে-পরে! আর, মেয়েরা যদি ঘাড় সিধে করে দম ভরে দৌড়য়, ‘যাক সব চুলোর দোরে’ ভেবে- তকমা তখন ‘স্বার্থপর’, ‘নিষ্ঠুর’, ‘উচ্চাকাঙ্ক্ষী’, ‘মদতপুষ্ট’, ‘অহংকারী’। সম্পর্কের এই গাঁট যে শুধু স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকাতেই বর্তায় তা নয়। বাবা-মা এবং ছেলেমেয়েরাও এই ধরন এবং ধারণে অভ্যস্ত। তাই, অধিকার তো আছে। কিন্তু তার প্রয়োগের মনটাই তো পুরুষের প্রাধান্যপুষ্ট।

লেখিকা শ্রীশিক্ষায়তন কলেজের অধ্যাপিকা
(মতামত নিজস্ব)
mmukherjee19@gmail.com

The post আমরা-ওরা পিছিয়ে পড়া appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup রাজধানী এক্সপ্রেস toolbarvideo ISL10 toolbarshorts রোববার