সুলয়া সিংহ: দুর্গাপুজো আজ গ্লোবাল কার্নিভাল। বাংলা ও ভারতের পাশাপাশি প্রবাসেও মায়ের আরাধনার কমতি নেই। ঢাকের বোলে মেতে উঠছেন আমেরিকা, ইংল্যান্ডের বাঙালি ও ভারতীয়রা। সেভাবেই ব্রাসেলসে উদযাপিত হচ্ছে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। সেখানে এবছরের পুজোর থিমে রয়েছে ষোলাআনা বাংলার সংস্কৃতির ঐতিহ্য---'শিশু মনে তিন রায়'।
২০২১ সালে বেলজিয়ামের ব্রাসেলস শহরে গড়ে ওঠে সেদেশের প্রবাসী বাঙালিদের সংগঠন 'তেরো পার্বণ'। প্রতি বছরই দুর্গাপুজোর আয়োজন করছেন তাঁরা। এবারের থিমের (শিশু মনে তিন রায়) সঙ্গে সম্পর্কিত উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সুকুমার রায় এবং সত্যজিৎ রায়। কেন এমন থিম? তার উত্তরে 'তেরো পার্বণ-এর বক্তব্য---"আর যেখানেই যাও না রে ভাই সপ্তসাগর পার... শুধু সপ্তসাগর নয়, (আবোল তাবোল) প্রকাশকালের ১০১ বছর পেরিয়ে আজও প্রাসঙ্গিক আমাদের চিরপরিচিত শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায়। শুধু সুকুমার নন, তাঁর পিতা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী এবং পুত্র বিশ্ববিখ্যাত চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের অনবদ্য সব সৃষ্টিও শিশুমনে জায়গা করে নিয়েছে, হয়ে উঠেছে তাদের বড় হয়ে ওঠার অনন্য সাথী। বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে থেকেও আমরা সকলে চাই, আমাদের ছোটবেলার নস্টালজিয়া, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বড় হয়ে ওঠার এই তিন সাথীকে নিয়ে আয়োজিত দুর্গাপুজো সম্পন্ন করতে।" তাই এবারের থিম 'শিশু মনে তিন রায়।'
স্বভাবতই পুজোর মণ্ডপ সাজানো হয়েছে উপেন্দ্রকিশোর, সুকুমার ও সত্যজিতের কালজয়ী সব সৃষ্টি দিয়ে। পোস্টার, প্ল্যাকার্ডে, আঁকায়-লেখায় কোথাও 'খাই খাই কর কেন...', কোথাও 'রাজার ঘরে যে ধন আছে...', কোথাও 'ট্যাঁশ গরু', তো কোথাও 'প্যাঁচা আর প্যাঁচানি', কোথাও বা 'এরা যত বেশি পড়ে...'। মণ্ডপসজ্জার এক জায়গায় তিন রায়ের ফটোগ্রাফের নিচে লেখা হয়েছে 'মহারাজা তোমারে সেলাম'। সত্যিই তো যাঁরা এমন সৃষ্টি পারেন, তাঁরা তো রাজাই বটে। প্রতিমা রূপদানেও বাংলার মাটির গন্ধ। কুমোরটুলি থেকে সাগর পেরিয়ে ব্রাসেলসে গিয়েছে প্রতিমা। শিল্পী সনাতন পাল।
'তেরো পার্বণে'র পুজোয় সপ্তমী, অষ্টমী-নবমী, দশমী... প্রতিদিন থাকছে একাধিক সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান। এছাড়াও রোজ একসঙ্গে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এভাবেই একটি প্রজন্ম থেকে আরেকটি প্রজন্মে বাহিত হয়সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। বলা বাহুল্য, রায় পরিবারের তিন প্রজন্ম উপেন্দ্রকিশোর-সুকুমার-সত্যজিৎ যার অন্যতম ধারকবাহক।