সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: খলিস্তানি জঙ্গি নিজ্জর খুনের ঘটনায় নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারত-কানাডার সম্পর্ক। টালমাটাল এই পরিস্থিতির মাঝেই এবার কানাডার পক্ষ নিয়ে কূটনৈতিক লড়াইয়ে যোগ দিল আমেরিকা। ভারতীয় সময় অনুযায়ী, মঙ্গলবার গভীর রাতে হোয়াইট হাউসের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হল, 'ভারতের বিরুদ্ধে কানাডা যে অভিযোগ এনেছে তা অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ। ফলে ভারতের উচিৎ কানাডা সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করা।'
মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন প্রশাসনের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, "বিষয়টি যখন কানাডার। তখন আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানাতে চাই, যে অভিযোগ করা হয়েছে তা অত্যন্ত গুরুতর। ভারতকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার আর্জি জানাচ্ছি।’ এখানেই শেষ নয় ম্যাথু আরও বলেন, 'কানাডার তদন্তে ভারতের সহযোগিতা করা উচিত। এ কথা আগেই বলেছিলাম। এখনো পর্যন্ত তারা তা করেনি, বরং উল্টো পন্থা অবলম্বন করেছে।' আমেরিকার প্রশাসনিক কর্তা বলেন, 'দুই দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে যা অভিযোগ করছে তার বাইরে আমাদের নতুন করে আর কোনও বক্তব্য নেই। আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য এই তদন্তে ভারত সহযোগিতা করুক। এবং আগামী দিনেও আমাদের বক্তব্য একই থাকবে।'
উল্লেখ্য, দুই দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েনের সূত্রপাত ২০২৩ সালের জুন মাসে। কানাডায় এক গুরুদ্বারের বাইরে খলিস্তানপন্থী নিজ্জরকে গুলি করে হত্যা করে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতী। এই ঘটনার পিছনে ভারতের হাত রয়েছে বলে সরাসরি অভিযোগ করেন ট্রুডো। যদিও ভারত সে অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে। সেই ঘটনায় নতুন করে কানাডার তরফে অভিযোগ তোলা হয়, ভারতীয় হাই কমিশনার সঞ্জয়কুমার বর্মা হরদীপ সিং নিজ্জর খুনে ‘স্বার্থ সম্পর্কিত ব্যক্তি’। কূটনৈতিক রক্ষাকবচ থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়নি। এর পরই নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দুই দেশের সম্পর্ক। কানাডা সরকারের নিশানায় থাকা ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সঞ্জয়কুমার বর্মা ও অন্যান্য কূটনীতিকদের দেশে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে দিল্লিতে থাকা কানাডার ৬ কূটনীতিককে দেশ ছাড়তে বলে বিদেশমন্ত্রক। এই তালিকায় রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার স্টুয়ার্ট রস হুইলার। ভারত স্পষ্ট জানায়, এই ঘটনায় ভারতের যোগ রয়েছে এমন কোনও প্রমাণ কানাডা দিতে পারেনি।
ভারতের এই ঘোষণার পর পালটা দিয়ে ৬ ভারতীয় কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে কানাডাও। তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই নিজ্জর খুনে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই নির্দেশিকা প্রকাশ্যে আসার পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ট্রুডো। সেখানে সাফ জানিয়ে দেন, ভারত যেভাবে কানাডার কূটনীতিকদের প্রতি আচরণ করেছে সেটা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। কানাডার তরফ থেকে বারবার ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও নয়াদিল্লির তরফে সদুত্তর মেলেনি বলে দাবি ট্রুডোর। সেই কারণেই সরাসরি ৬জন ভারতীয় কূটনীতিকের বিরুদ্ধে সমস্ত প্রমাণ-সহ অভিযোগ পেশ করে কানাডার পুলিশ। টালমাটাল এই পরিস্থিতিতেই এবার কানাডার পক্ষ নিয়ে সরব হল আমেরিকা।