কুণাল ঘোষ ও কিংশুক প্রামাণিক (লন্ডন থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী): অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের (Oxford University) কেলগ কলেজে ‘সামাজিক উন্নয়ন- বালিকা, শিশু এবং নারীর ক্ষমতায়ন’ নিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ভাষণ চলাকালীন কাটল তাল। বাংলার শিল্পবান্ধব পরিবেশের কথা বর্ণনা করতেই সিঙ্গুর থেকে টাটা বিতাড়ন ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন তুললেন শ্রোতাদের একটা অংশ। দর্শকাসন থেকে ধেয়ে এল প্রশ্ন - ''টাটারা তো চলে গেল, এখন আর বাংলায় শিল্প কোথায়? আপনি মিথ্যে বলছেন!'' সঙ্গে সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সপাট জবাব, ''ভালো করে খোঁজ নিন। বাংলা টাটা কনসাল্টেন্সি সার্ভিস, কগনিজেন্ট আছে। আমি একটুও মিথ্যে বলছি না।''

বাংলার শিল্পায়নের ইতিহাসে সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনের কথা কে না জানে? ২০০৬ সালে হুগলির সিঙ্গুরের উর্বর তিনফসলি জমিতে টাটার ন্যানো গাড়ির কারখানা তৈরিতে রাজি হয়েছিল তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। কৃষকদের অধিকার কেড়ে এভাবে শিল্পায়নের পক্ষে রাজি ছিলেন না সেসময়ের বিশিষ্টরা। এই ইস্যুতে তখনকার মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন। পরবর্তীতে এই ইস্যুই বাংলায় ৩৪ বছরের বাম সরকারের পতনের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়। সে যাই হোক, জন আন্দোলনের চাপে পড়ে সিঙ্গুরে কাজ শুরু করেও টাটারা পাততাড়ি গোটাতে বাধ্য হন। পরে গুজরাটের সানন্দে ন্যানো গাড়ির কারখানা তৈরি হয়। তবে সিঙ্গুরে অন্য কোনও কারখানাও তৈরি হয়নি। এর নেপথ্যে একেবারে অনুঘটকের মতো কাজ করেছে তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংঘবদ্ধ আন্দোলন।
আজ, প্রায় দু'দশক পর লন্ডনের মাটিতে বাংলা থেকে টাটাদের চলে যাওয়া নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাঁকে 'মিথ্যাবাদী'ও বললেন দর্শকদের কেউ কেউ। যার জবাবও মমতা দিলেন সপাটে। বললেন, ''টাটাদের গাড়ি কারখানা হয়নি। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখুন, খড়গপুরে টাটাদের ইন্ডাস্ট্রি আছে, রাজারহাট এলাকায় টাটার আইটি অফিস রয়েছে। না ভাই, আমি কোনও মিথ্যে বলছি না। আপনারা খোঁজ নিন।'' সিঙ্গুর থেকে টাটাদের বিতাড়নই হোক আর বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন থেকে লগ্নি নিয়ে যত প্রশ্নই উঠুক বিলেতের মাটিতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাবু করা যাবে না কোনওভাবেই, তা ফের প্রমাণ করলেন তিনি।