কুণাল ঘোষ ও কিংশুক প্রামাণিক (লন্ডন থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী): বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা লড়াকু নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) বক্তৃতা ঘিরে প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়েছে লন্ডনে। অনুষ্ঠানের ৪৮ ঘণ্টা আগেই 'হাউসফুল' বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ডের (Oxford University) কেলগ কলেজের হল। মুখ্যমন্ত্রীর এই অনুষ্ঠানে প্রবেশ অবাধ। তবে রীতি অনুযায়ী অগ্রিম আসন সংরক্ষণ-পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছিল। এখন যারা আবেদন করছেন তাঁদের রীতিমতো 'ওয়েটিং লিস্টে' থাকতে হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটায় (লন্ডনের সময়) শুরু হবে সমারোহ। আপ্যায়ন-পর্ব সেরে মূল আলোচনা শুরু। মঞ্চে বাংলার জনপ্রিয় মহিলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও থাকবেন কলেজের সভাপতি অধ্যাপক জোনাথন মিচি এবং এই কলেজেরই ‘ফেলো’ তথা বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোগী লর্ড করণ বিলিমোরিয়া। উপস্থিত থাকার কথা ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়েরও। অনুষ্ঠানের শিরোনাম ‘সামাজিক উন্নয়ন- বালিকা, শিশু এবং নারীর ক্ষমতায়ন’। এগারো সালে বাংলায় রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকেই রাজ্যের নারী ক্ষমতায়নে জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তাঁদের শিক্ষিত করে তোলার জন্য স্কুলস্তর থেকেই রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের কন্যাশ্রী প্রকল্প। কলেজেও তাঁদের পড়াশোনার খরচ সামাল দেয় এই যোজনা। ইতিমধ্যে ইউনেসকোর স্বীকৃতি পেয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রকল্প। উচ্চশিক্ষার জন্য রয়েছে স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড। আবার বাংলার প্রত্যন্ত এলাকায় স্রেফ দূরত্বের অজুহাতে স্কুলের গণ্ডি থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা কন্যা-কৈশোর যে আজ বিদ্যালয়মুখী, তার কৃতিত্বও মমতারই। সৌজন্যে তাঁর জনমুখী ‘সবুজ সাথী’। দু-চাকার সাইকেল সত্যিই জীবনের দিশাই বদলে দিয়েছে গ্রাম-গ্রামান্তরে এতকাল গুমরে থাকা অগণিত ছাত্রীর। এছাড়াও রূপশ্রী-সহ একাধিক প্রকল্প যাতে মহিলাদের সামাজিক সুরক্ষা দেওয়া যায়। আবার স্বাস্থ্যসাথী মতো প্রকল্পেও পরিবার প্রধান হিসেবে রাখা হয়েছে মহিলাদের নাম। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার তো প্রান্তিক থেকে শহরে, সকল মহিলাকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে সাহায্য করেছে। এই সমস্ত সামাজিক কল্যাণ ও সমাজে মহিলাদের লড়াইয়ের ইতিহাস অক্সফোর্ডের কেলগ কলেজের প্রেক্ষাগৃহে তুলে ধরবেন মমতা। আর সেই কথা শুনতেই আগ্রহী পড়ুয়ারা।
পূর্ণ ও আংশিক সময়ের নিরিখে অক্সফোর্ডে এই মুহূর্তে পড়ুয়ার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি কেলগ কলেজেই। মেধা ও মননে বিশ্বের এক নম্বরে থাকা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় তো বটেই, বঙ্গজ পড়ুয়ার সংখ্যাও যথেষ্ট। স্বভাবতই বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা ঘিরে সংশ্লিষ্ট মহলেও আগ্রহ তুঙ্গে। তার প্রমাণ মিলেছে আসন সংরক্ষণের উদ্দীপনায়। ইতিমধ্যে 'হাউসফুল' কেলগ কলেজের হল।
সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কলেজে আয়োজিত সেমিনারে অংশগ্রহণ আমন্ত্রণমূলক। তবে বক্তার পরিচিতি ও কাজের পরিধির নিরিখে ব্যতিক্রমও হয়ে থাকে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সেদিনের বক্তৃতা হতে চলেছে তেমনই আর এক ব্যতিক্রম। কেলগ কলেজ হাবে সেদিনের ওই আলোচনা ও বক্তৃতা সভায় প্রবেশ রাখা হয়েছে অবাধ। রীতি অনুযায়ী, অগ্রিম আসন সংরক্ষণ-পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছিল আগেই। ইতিমধ্যে যা 'হাউসফুল'। এখন যাঁরা আবেদন করছেন তাঁদের ওয়েটিং লিস্টে থাকতে হচ্ছে। সশরীরে হাজির হতে তো বটেই, অনলাইনে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা শুনতেও বিপুল আগ্রহ রয়েছে। কলেজের দেওয়া লিংক খুলে বক্তৃতা সভার ‘লাইভ স্ট্রিমিং’য়ের সাক্ষীও হতে চলেছেন অনেকে। সবমিলিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা ঘিরে লন্ডনেও উদ্দীপনা তুঙ্গে।