গৌতম ব্রহ্ম: দেহ যেন মন্দির। সেখানে উপাস্য দেবতা হলেন সুস্থতা। যাঁর আশীর্বাদ লাভ করতে হলে যথোচিত পুজো চড়াতে হবে। শরীর দেবতাকে তুষ্ট করতে শরীরচর্চার চেয়ে যোগ্য উপচার আর কী? সহস্রাব্দ প্রাচীন ভারতীয় যোগশাস্ত্রের দেহ মন্দিরম তত্ত্বে ভরসা রেখেই এবার ট্রায়াল শুরু করছে মুম্বইয়ের টাটা মেডিক্যাল সেন্টার (Tata Medical Centre)। গবেষকদের আশা, সুষ্ঠু যোগাভ্যাস রুখে দিতে পারে ক্যানসারের মতো মারণ ব্যাধির রথকেও।
ব্যাপারটা ঠিক কী? রক্তে মজুত সাইটোটক্সিক টি লিম্ফোসাইট কোষ বাড়লে ক্যানসারের (Cancer) সম্ভাবনা কমে। রোগমুক্তির উদাহরণও আছে। কিন্তু শরীরচর্চা যে এই টি সেলের সক্রিয়তা বাড়িয়ে কর্কট রোগ নিয়মায় করে, তা জানা ছিল না। সংশয় দূর করে একদল গবেষক এবার ব্যয়াম অস্ত্রে ক্যানসার বধের প্রমাণ দিলেন। সুইডেনের ‘ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট’, ব্রিটেনের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়-সহ চারটি সংস্থা একযোগে গবেষণা শুরু করেছে। প্রথমে ইঁদুরের শরীরে ক্যানসার কোষ তৈরি করা হয়েছে। তারপর সেই ইঁদুরকে দৌড় করানো হয়েছে। আর এক দল ইঁদুরকে স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। দেখা গিয়েছে দৌঁড়ে বেড়ানো ইঁদুরের শরীর থেকে ক্যানসার উধাও হয়ে গিয়েছে। অথচ বিশ্রামে থাকা প্রাণীগুলির শরীরে ক্যানসারের আধিক্য এতটুকুও কমেনি। কেন?
[আরও পড়ুন: মারণ ভাইরাসকে হারিয়েও রেহাই নেই, বিরল স্নায়ুর রোগে ভুগছেন মুম্বইয়ের বহু করোনাজয়ী]
কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে গবেষকরা তাজ্জব। দেখা যাচ্ছে, ব্যায়াম করলে শরীরে ল্যাকটিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয়। যা সাইটোটক্সিক টি লিম্ফোসাইট সেলকে উজ্জীবিত করে। গবেষকদের আশা, মানদবেহেও এই ফর্মূলা কাজ করবে।
আর এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে যোগ-ব্যায়ামের মতো ভারতীয় শরীরচর্চার পদ্ধতি। এই আশাতেই মুম্বইয়ের টাটা মেডিক্যাল সেন্টারে শুরু হচ্ছে হিউম্যান ট্রায়াল। ব্রেস্ট ক্যানসার (Breast Cancer) আক্রান্ত রোগীদের দু’ভাগে ভাগ করে এই ট্রায়াল চলবে। এই গবেষণাকে যুগান্তকারী বলেই মনে করছেন শহরের অন্যতম ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকার। তিনি জানিয়েছেন, “টি সেলে মজুত সিডি-৮ যে ক্যানসার কোষ মারে তা নিয়ে ডা. গৌরীশংকর শাহ ও আমি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। গত বছর মেয়ো ক্লিনিকে পেপারও পেশ করেছি। এবার শরীরচর্চার সঙ্গে টি সেলের সক্রিয়তা স্থাপিত হল। আশা করি, টাটার গবেষণা সফল হলে নতুন দিগন্ত খুলে যাবে ক্যানসার চিকিৎসায়।”
আশাবাদী ইমিউনোলজিস্টরাও। অধ্যাপক ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানিয়েছেন, ইঁদুর মডেলে গবেষণা সফল। নিয়মিত কায়িক শ্রমে শরীরে টি সেল ও ন্যাচারাল কিলার সেলের আধিক্য ও সক্রিয়তা বাড়ে। আর এক্ষেত্রে পেশীতে উৎপাদিত ল্যাকটিক অ্যাসিড রক্তে মিশে গিয়ে সেতুর কাজ করে। একই বক্তব্য বিশিষ্ট ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা. সুভদ্রা চিপলাঙ্কারের। তাঁর দাবি, ব্যায়ামের সঙ্গে অবশ্যই কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপির মতো চিকিৎসা চালাতে হবে। চাই র্যানডমাইজড কন্ট্রোলড ট্রায়ালও। ভারতে অবশ্য ক্যানসার রোধে যোগের কার্যকারিতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ চলছে। যোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অভিজিৎ ঘোষ জানিয়েছেন, আমেরিকার ‘এমডি অ্যান্ডারসন ক্যানসার রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর সঙ্গে জোট বেঁধে বেঙ্গালুরুর ‘এস ভাসা’ ২০০২ থেকে স্টাডি চালাচ্ছে। তাতে দেখা গিয়েছে, যোগ-প্রাণায়মে টি সেল ও এনকে সেলের সক্রিয়তা বাড়ে। টাটার ট্রায়াল সফল হলে ক্যানসার চিকিৎসায় মান্যতা পাবে যোগ থেরাপি।