স্টাফ রিপোর্টার: বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে এসে মৃত্যু হল এক ব্যক্তির। নাম বিশ্বজিৎ দাস। তাঁর শরীরে আন্ত্রিকের উপসর্গ দেখা গিয়েছিল। তবে মৃত্যুর কারণ যে আন্ত্রিকই তা রাত পর্যন্ত স্পষ্ট করেনি পুরসভা বা স্বাস্থ্য দফতর। অন্য সূত্রে দাবি, ওই ব্যক্তি পেটের আলসারেও ভুগছিলেন। অন্য কোনও সমস্যা ছিল শরীরে। মৃত্যুর ঘটনাটি কলকাতা পুর এলাকার ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের বাঘাযতীন এলাকায় হলেও মৃতের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুরে। পরিবারের দাবি, বিয়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিশ্বজিৎবাবু বাঘাযতীনের জে ব্লকে আত্মীয় সুকুমার বিশ্বাসের বাড়িতে এসেছিলেন। সেখানেই তিনি আন্ত্রিকে আক্রান্ত হন। বমি-পায়খানা শুরু হয়। প্রথমে বাঘাযতীন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার সুস্থ বোধ করায় বাড়ি ফিরে আসেন। বুধবার ফের অসুস্থ বোধ করলে বিশ্বজিৎবাবুকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে একটি বেসরকারি হাসপাতাল হয়ে বিকেলে ফের বাঘাযতীন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসা শুরুর আগেই মৃত্যু হয় বিশ্বজিৎবাবুর। তারপরই এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। স্বাস্থ্য আধিকারিকরা দফায় দফায় খবর নিতে শুরু করেন।
কলকাতা পুরসভার তরফে মৃত্যুর কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। যদিও কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “একটি মৃত্যুর খবর পেয়েছি। তবে বিস্তারিত রিপোর্ট এখনও হাতে আসেনি।” মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার অবশ্য এই মৃত্যুর জন্য বিশ্বজিৎবাবুর পরিবারকেই দায়ী করেছেন। জানিয়েছেন, বিশ্বজিৎবাবুকে বাঙুর হাসপাতালে রেফার করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়নি। বরং বাড়িতে নিয়ে এসে বেসরকারি হাসপাতালে দেখানো হয়। বিশ্বজিৎবাবুর পরিবার অবশ্য বাঘাযতীন হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন। উল্লেখ্য, বাঘাযতীন, গড়িয়া, পাটুলি, গাঙ্গুলিবাগান, সন্তোষপুর, অজয়নগর-সহ সাতটি ওয়ার্ডে আন্ত্রিকের প্রকোপ দেখা গিয়েছে। গত কয়েকদিনে প্রায় ২৩০০ মানুষের মধ্যে আন্ত্রিকের উপসর্গ দেখা গিয়েছে। শতাধিক মানুষকে বাঘাযতীন ও বাঙুর হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়েছে। এখন ৪৪ জন মানুষ ভর্তি হাসপাতালে। এদিন নতুন করে ২২ জন মানুষ আন্ত্রিকে আক্রান্ত হয়ে বাঘাযতীন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে পাঁচজন অতিরিক্ত ডাক্তার পাঠানো হয়েছে বাঘাযতীন হাসপাতালে।
পুরসভা সূত্রের খবর, ১০০, ১১১, ১১২-এই তিনটি ওয়ার্ডে নতুন করে ছড়িয়েছে আন্ত্রিক। সবমিলিয়ে দশটি ওয়ার্ডে আন্ত্রিক ছড়াল। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. অজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, আক্রান্ত এলাকাগুলির বাসিন্দাদের জল ফুটিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আক্রান্ত মানুষদের মলের নমুনা স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট হাতে এলেই সংক্রমণের কারণ পরিষ্কার হবে। পুরসভার পক্ষ থেকেও আন্ত্রিক রোধে একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে। বাড়ি বাড়ি ঘুরে বাসিন্দাদের সতর্ক করা হচ্ছে। পাঁচটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ক্লাব ও থানা থেকে ওআরএস বিলি করা হচ্ছে। আক্রান্তদের বাড়ি গিয়ে জলের নমুনাও সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও জলেই আন্ত্রিকের জন্য দায়ী কোনও জীবাণুর সন্ধান মেলেনি। সেই কথা জানিয়েও দিয়েছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। যদিও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে জল ফুটিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা। তাঁর মত, যেহেতু আন্ত্রিক মূলত জলবাহিত রোগ, তাই রোগের কারণ বের না হওয়া পর্যন্ত জল ফুটিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
The post বিয়েবাড়িতে গিয়ে মৃত্যু যুবকের, আন্ত্রিকের অভিযোগ পরিবারের appeared first on Sangbad Pratidin.