সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: খাবার বলতে স্রেফ চা আর বিস্কুট৷ মাঝে মাঝে মরশুমে একটু কমলালেবু৷ টানা ৭০ বছর এ নিয়মের কোনও ব্যত্যয় নেই৷ কোনও রোগভোগও নেই তাঁর৷ বরং জীবনে ১০০ বছরের মাইলস্টোন ছুঁয়েও যে নতুন উদ্যমে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি, তাতে অবাক হওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না৷
অসমের অরুণা মুখোপাধ্যায় সত্যিই যেন এক জীবন্ত বিস্ময়৷ প্রতিটি কাজে তিনি চমকে দেন সকলকে৷ যেমন এই একশো বছর পেরিয়েও তিনি পরিকল্পনা নিয়েছেন একটি বৃদ্ধাশ্রম চালু করার৷ শুধু তাই নয়, তিনি নিজেই যে সেটা চালাবেন এমনটাও খোলসা করে জানিয়ে দিয়েছেন৷ এতেই মালুম হয় তাঁর মনের জোর কতখানি৷
তবে এটুকু তো কিছুই নয়৷ আসল মনের জোরের পরিচয় যেন তিনি দিয়েছেন তাঁর খাদ্যাভ্যাসেই৷ এই যে টানা সত্তর বছর স্রেফ চা-বিস্কুট খেয়েই দিন গুজরান অরুণার, তার নেপথ্যে রয়ে গিয়েছে এক মর্মস্পর্শী কারণ৷
ঢাকার মেয়ে অরুণার বিয়ে হয়েছিল অসমে৷ দেশভাগের পর্বে নিজের চোখে তিনি দেখেছেন, তাঁরই
দেশভাগ যখন নয়া প্রজন্মের কাছে ফিকে হয়ে আসা এক বিষয় আর তাত্ত্বিকদের কাছে ইতিহাসের হলদেটে পাতা ওলটানোর সামিল, তখন অরুণা এক মূর্তিমান ব্যথার প্রতিমা৷ যিনি সত্যি সত্যিই যেন দেশভাগের যন্ত্রণাকে গিলে ফেলেছেন বলে আর কোনও দিন সুখে খাবার খেতে পারলেন না৷ কিন্তু তাতে তো তাঁর কোনও যায় আসে না৷ এমনকী তাঁর প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, কোনও অসুখও নেই তাঁর৷ ঘরের কাজ সব তিনি নিজেই করতে পারেন৷ ওই চোখের দৃষ্টি এখন একটু ক্ষীণ হয়েছে এই যা৷
অরুণার সন্তানদের অনেকেই আজ আর নেই, কেউবা বিদেশে৷ একা, তবু যেন অনেকের জন্যই নিজের জীবন বয়ে নিয়ে চলেছেন তিনি৷ তথ্য-চিত্র পরিচালক ববিতা শর্মা তাঁর জীবনকে ফ্রেমবন্দি করে রাখছেন৷ কে বলে দেশভাগের যন্ত্রণা আজ বিস্মৃতপ্রায়! প্রতিদিনের যাপনে সে যন্ত্রণা মিশিয়ে নিয়ে অরুণা নিজেই যেন কবে সকলের সামনে হয়ে উঠেছেন এক জীবন্ত ইতিহাস৷