অভিরূপ দাস: কলকাতা হোক বা ক্যালিফোর্নিয়া। বাংলা শিখতে গিয়ে একরত্তি উচ্চারণ করে, ‘‘গোপাল যেমন সুবোধ। রাখাল তেমন নয়।’’ ১৬৮ বছর আগে প্রথম প্রকাশ। এই ২০২৩-এও তা অপ্রতিরোধ্য। হ্যারি পটার, রক মিউজিক, ফাইভ জি-র যুগেও ইংরেজি এবিসিডি-র সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়চ্ছে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্য়াসাগরের বর্ণপরিচয়। যার প্রমাণ মিলেছে ৪৬তম কলকাতা আর্ন্তজাতিক পুস্তকমেলাতে। মাত্র ১২ দিনে ১৫০০ বর্ণপরিচয় বিক্রি আর্ন্তজাতিক ভাষা দিবসে অক্সিজেন যোগাচ্ছে প্রকাশকদের।
এখন কলেজ স্ট্রিটের একাধিক প্রকাশনা সংস্থা ছাপায় বর্ণপরিচয়। আগে সে সত্ত্ব ছিল শুধু দেব সাহিত্য কুটিরের। দেব সাহিত্য কুটির সূত্রে খবর, বছরে একসময় ১ লক্ষ ৮০ হাজার বর্ণপরিচয় বিক্রি হত প্রকাশনা সংস্থার। শেষ বছরে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজারে। এর মানে এমন নয় যে চাহিদা কমেছে বর্ণপরিচয়ের।
পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সম্পাদক ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আগে শুধুমাত্র দেবসাহিত্য কুটির বর্ণপরিচয় বিক্রি করত। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রণিত যে বিশুদ্ধ বর্ণপরিচয়, তার প্রকাশনার সত্ত্ব একমাত্র তাদের হাতেই। এখন অক্ষয় লাইব্রেরি, শিশু সাহিত্য সংসদ, নির্মল বুক এজেন্সি-সহ একাধিক প্রকাশনা সংস্থা বর্ণপরিচয় প্রকাশ করে। স্বাভাবিক ভাবেই দেব সাহিত্য কুটিরের বর্ণপরিচয়ের বিক্রি কমেছে। কিন্তু তাই বলে চাহিদা কমেনি অক্ষর চেনার অমোঘ বইয়ের। দেব সাহিত্য কুটিরের মতোই বছরে হাজার ২৫ বর্ণপরিচয় বিক্রি করে শিশু সাহিত্য সংসদ। দেব সাহিত্য কুটিরের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজর্ষি মজুমদারের বক্তব্য, “বিদেশ থেকেও প্রবাসী বাঙালিরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বর্ণপরিচয়ের জন্য। আমরা ডাকযোগে বই পাঠিয়ে দিই।”
[আরও পড়ুন: বিএসএফ ক্যাম্পে মহিলা কনস্টেবল ধর্ষণের অভিযোগ, বিজেপিকে বিঁধে টুইট কুণালের]
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নৈপুণ্য ধরে রাখতে দেব সাহিত্য কুটিরের রিসিভার এডিশন এখনও সাদা-কালো। পাতলা পাতায় ছাপানো সে বইয়ের দাম এখন ১০ টাকা। প্রথম যখন প্রকাশিত হয়েছিল তখন দাম ছিল ২ পয়সা। পাশাপাশি ঝাঁ চকচকে বর্ণপরিচয়ও এসে গিয়েছে। জেন জেড এর কচিকাঁচাদের পছন্দ এই বর্ণময় বর্ণপরিচয়। সমস্ত পাতা প্লাস্টিকের। তার দাম? পঞ্চাশ থেকে একশো টাকা। দেব সাহিত্য কুটিরের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজর্ষি মজুমদারের কথায়, “এ যুগে অনেকেই এই চকচকে বর্ণপরিচয় বেশি পছন্দ করছে। এর পাতাগুলো অনেক মোটা। সহজে ছিড়বে না। কিন্তু রিসিভার এডিশনে আমরা পুরনো ধাঁচটাই রেখে দিয়েছি।”
[আরও পড়ুন: ‘অযোগ্য’দের চাকরি দিয়ে ১৬ কোটি তুলেছিলেন ‘সৎ রঞ্জন’, প্রাথমিকে নিয়োগ করেন মেয়েকেও]
দেব সাহিত্য কুটিরের ঝামা পুকুর লেনের বাড়িতে নিজে এসেছিলেন বিদ্যাসাগর। আজ ২১ ফেব্রুয়ারি আর্ন্তজাতিক ভাষা দিবসে প্রকাশকরা বলছেন, যুগ যতই বদলাক। বর্ণপরিচয়ের চাহিদা অবিনশ্বর। শিশুকে বাংলা অক্ষর চেনানোর জন্য এমন সহজ সরল বই আর হয়নি। এ বক্তব্যে সহমত পোষণ করেছেন পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সভাপতি সুধাংশু শেখর দে।