গোবিন্দ রায়: বিচারকদের সভায় এসে ‘সততার প্রশ্নে বিচারপতির ঔদ্ধত্য’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এসপি তালুকদার। পাশাপাশি সভায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের পর্যবেক্ষণ, বিচারপতি বা বিচারক সৎ হবেন, এটাই স্বাভাবিক। তাঁদের গায়ে কোনও রকম তকমা লাগানোকে দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করেন তিনি।
এ হেন মন্তব্যে র নিশানা কি বিশেষ কেউ?
দীর্ঘ এই অনুষ্ঠানে দুই বিচারপতি কিন্তু একবারের জন্য কারও নাম উল্লেখ করেননি। যদিও আইনজীবী মহলে প্রশ্ন উঠেছে, নাম না কি করেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে খোঁচা দেওয়া হল?
শনিবার কলকাতার জাতীয় গ্রন্থাগারের ভাষা ভবনে হয়ে গেল ওয়েস্ট বেঙ্গল জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের শতবর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠান। এটি জেলা বিচার বিভাগের বিচারকদের অ্যাসোসিয়েশন। এদিনের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। ছিলেন হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এস পি তালুকদার।
[আরও পড়ুন: খাস ক্যানিংয়েই শওকত মোল্লার পোস্টারে কালি, ছেঁড়া হল ব্যানার, কাঠগড়ায় ISF]
সেখানে কথা প্রসঙ্গে উঠে আসে বিচারক বা বিচারপতিদের সততার প্রসঙ্গ। এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে শোনা যায় বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তকে। তাঁর কথায়, “বিচারপতি সৎ হবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যেভাবে এই বিচারপতি সৎ কিংবা ওই বিচারপতি অসৎ বলে লেবেল লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।” শুধু বিচারপতি দত্ত নন। বিচারপতির সততা প্রসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এস পি তালুকদারও বলেন, “বিচারপতি সততার কথা বলে ঔদ্ধত্য দেখিয়ে ফেলছেন।”
সম্প্রতি একাধিক ইস্যুতে মামলা দায়ের হয়েছে হাই কোর্টে। দুর্নীতির অভিযোগে একাধিক বিচারপতির এজলাসে ভর্ৎসিত হতে হয়েছে রাজ্যকে। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এই সব মামলার তদন্ত করছে। কয়েকটি মামলার ক্ষেত্রে একাধিক বিচারপতি বা বিচারকের ‘সততা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন মহল। কখনও কখনও বিচারপতি বা বিচারকের সততা নিয়ে কোনও বিচারপতিকেও মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছে। এদিন সে বিষয়েরই উল্লেখ করেন বিচারপতি দত্ত ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি তালুকদার।
একইসঙ্গে, বিচারপতিদের বদলি প্রসঙ্গও এসেছে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের মুখে। তাঁর মতে, কাউকে শাস্তিস্বরূপ বদলি করে দেওয়া যায় না। বিচারপতি দত্তের কথায়, “ট্রান্সফার পলিসি কেউ অনুসরণ করে না। কাউকে শাস্তিস্বরূপও বদলি করে দেওয়া যায় না।” কেউ পছন্দসই জায়গায় বদলিও নিতে পারে না বলেও জানান তিনি।
বিচারপতি দত্তের আক্ষেপ, বিচারকদের বদলির ক্ষেত্রে ‘গডফাদার’ প্রথা এ রাজ্যে জারি আছে।