সুলয়া সিংহ: “লর্ডস টেস্টে যদি রান না পেতাম, তাহলে ক্রিকেট দুনিয়ায় হয়তো আর টিকে থাকতে পারতাম না। ব্যবসা করতে হত। হয়তো কাপড়ের ব্যবসা করতাম।” বক্তা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ২০ বছর পর স্মৃতির পাতা ঘাঁটতে বসে এই সব কথাগুলো উঠে আসলে, এখনও অবাক হতে হয়! ১৯৯৬-এর সেই দিনটা ক্রিকেটার সৌরভের জীবনে যতটা মূল্যবান ছিল, প্রশাসক সৌরভের জীবনেও ততটাই প্রাসঙ্গিক। কারণ সৌরভ আজও বিশ্বাস করেন, সেই দিনটা না এলে, ‘দাদা’ হয়ে ওঠা হত না। ২০১৬-র আজকের দিনটাও আসত না।
লর্ডস টেস্টই যে সৌরভের ক্রিকেট কেরিয়ার পাল্টে দিয়েছিল, ২০ বছর পরও তা নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নেন ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়ক। দিনটা ছিল ২০ জুন ১৯৯৬। খানিকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই ভারতীয় দলে সুযোগটা চলে এসেছিল। নভজ্যোৎ সিং সিধু ও সঞ্জয় মঞ্জরেকর দল থেকে বাদ পড়েছিলেন। সেই জায়গাতেই শিকে ছিঁড়েছিল সৌরভ ও রাহুল দ্রাবিড়ের। দেশের জার্সি গায়ে দু’জনেই সেদিন প্রথমবার লর্ডসের বাইশ গজে নেমেছিলেন। বুকের ভিতর বড়সড় টেনশন আনাগোনা করছিল সর্বক্ষণ। কারণ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এজবাস্টনে প্রথম টেস্টে পরাস্ত হয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। সৌরভ তাই জানতেন, এই ম্যাচে ভাল পারফর্ম না করলে দলে সুযোগ পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। নিজেকে নিরাশ করেননি তিনি। ইংল্যান্ডের জল হাওয়ার সঙ্গে পরিচিত সৌরভ অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ছিলেন। তাঁর ‘পারফেক্ট কভার-ড্রাইভ’ আজও বিশ্ব ক্রিকেটের পাতায় জ্বলজ্বল করে।
ক্রিকেট কেরিয়ার কখনওই সৌরভের কাছে মসৃণ ছিল না। ১৯৯২ সালে ‘উদ্ধত’ তকমা দিয়ে ভারতীয় দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, ম্যাচ চলাকালীন সতীর্থর জন্য জল নিয়ে যেতে আপত্তি করেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, “ও কাজ আমার নয়।” যদিও সৌরভ এমন অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলেই দাবি করেছিলেন। সেই ঘটনার পর কেটে গিয়েছিল চারটে বছর। ভারতীয় দলে জায়গা হয়নি। সেই চার বছর দেশের মাটিতে ও ইংল্যান্ডে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে নিজেকে জাতীয় দলের যোগ্য বানিয়ে তুলতে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। তারপরই এসে গেল সুযোগটা। নয়া নক্ষত্রের অভিষেক হল লর্ডসে। বাকিটা ইতিহাস!
২০ বছর সময়টা নেহাত কম সময় নয়। এই ২০ বছরে সৌরভ যে ক্রিকেট জীবনের বৃত্ত সম্পূর্ণ করেছেন, তা আট থেকে আশি, সকলেরই জানা। সফল ওপেনার থেকে সফল অধিনায়ক। আর এখন প্রকাশক হিসেবেও নিজের সেরাটা দিচ্ছেন প্রিন্স অফ ক্যালকাটা। সিএবি প্রেসিডেন্টের উদ্যোগেই প্রথমবার ইডেনের বুকে গোলাপি বলে আয়োজিত হল দিন-রাতের টেস্ট ম্যাচ। মহেন্দ্র সিং ধোনিদের কোচ বাছাইয়ের দায়িত্বের একটা বড় অংশ রয়েছে তাঁর কাঁধে।
ছোটবেলায় দেখা স্বপ্ন, অনেকের ক্ষেত্রে স্বপ্ন হয়েই থেকে যায়। কিন্তু সৌরভের স্বপ্ন সার্থক হয়েছে। বলা হয়, তাঁর অধিনায়কত্বে ভারতীয় ক্রিকেটে এসেছিল নয়া মোড়। তাঁর সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা ছিল ভারত তথা গোটা বিশ্বের কাছে নজির কাপড়ের ব্যবসাটা অন্তত এজন্মে করতে হল না তাঁকে। আর এজন্য তাঁর থেকে অনেকগুণ বেশি খুশি তাঁর ভক্তকুল।
The post ২০ জুন, বছর কুড়ি আগে বাইশ গজে ‘দাদাগিরি’-র শুরুয়াতের দিন appeared first on Sangbad Pratidin.