সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান। বলা ভাল, শাপমুক্তি। দীর্ঘদিন এক রাজ্যে থাকার পর, সে রাজ্যের জন্য জানপ্রাণ লড়িয়ে সেবা করার পরও বহিরাগত তকমা গা থেকে মুছে ফেলা যাচ্ছিল না। আবার সেই অভিশাপ থেকে মুক্তি মিলল। গত বছর আগস্ট মাসে ঐতিহাসিক ৩৫এ ধারার অবলুপ্তি ঘটে। এরপর প্রায় পঁচিশ হাজার অ-কাশ্মীরি স্থায়ী নাগরিকের শংসাপত্র পেলেন। যার মধ্যে একজন IAS অফিসার।
জম্মু-কাশ্মীরের নিজস্ব সংবিধান ছিল। সেই সংবিধান অনুযায়ী, বাইরের রা্জ্যের কেউ ভূস্বর্গের স্থায়ী নাগরিক হতে পারতেন না। জমি, স্থাবর সম্পত্তির মালিকও হতে পারতেন না। বাড়ির মেয়ে যদি অন্য রাজ্যের ছেলের সঙ্গে বিয়ে করে, তবে সেও স্থায়ী নাগরিকত্ব হারাত। এমনকী মা-বাবার সম্পত্তির ভাগও পেত না। ব্যতিক্রম শুধু স্থানীয় পুরুষদের বিয়ে করা ভিন রাজ্যের মহিলারা। গত বছর আগস্টে জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন চালু হওয়ার পর থেকে আশায় বুক বাঁধছিলেন ভিন রাজ্য থেকে কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখে কাটিয়ে দেওয়া মানুষজন।
[আরও পড়ুন: সংক্রমণের মাঝেই শুরু প্রত্যাবর্তনের পালা, বিজেপি শাসিত রাজ্য ছাড়ছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা]
নতুন আইন মোতাবেক সম্প্রতি স্থায়ী নাগরিক হলেন পঁচিশ হাজার জন। যাঁদের মধ্যে অন্যতম বিহারের আইএএস অফিসার ও কৃষি উৎপাদন বিভাগের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি নবীন চৌধুরি। যা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে সেখানকার দুই প্রধান রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল কনফারেন্স ও পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। তাদের বক্তব্য নতুন এই আইনকে হাতিয়ার করে দেশের একমাত্র মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যের জনতত্ত্ব বদলানোর ছক করছে আরএসএস-এর নীতিতে চলা কেন্দ্র সরকার।
[আরও পড়ুন: চিনা দূতাবাসে ৮০০টি ভেড়া পাঠিয়েছিলেন বাজপেয়ী, জানেন কেন?]
এবার আইনে বদল এসেছে। তারপরেও জম্মু-কাশ্মীরের স্থায়ী নাগরিকত্ব সহজে মিলবে না। এর জন্য নির্দিষ্ট প্রমাণ দিয়ে কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হবে। যেমন, সেখানে নূন্যতম ১৫ বছর বসবাস করছেন, এমন সাফাইকর্মী, ভিনরাজ্যে বিয়ে করা কাশ্মীরি মহিলা ও তাঁদের সন্তান, পাকিস্তান থেকে আসা শরনার্থীরা আবেদন করতে পারবেন স্থায়ী নাগরিকত্বের। সরকারী কর্মচারীদের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম ১০ বছর। রাজ্য সরকারে অ-কাশ্মীরিরা চাকরিই পেতেন না, তাই তাঁদের জন্য কোনও নিয়ম নেই। এবং দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা জম্মু-কাশ্মীর থেকে দিয়েছেন এমন পড়ুয়া, যাঁরা ন্যূনতম সাত বছর সেখানে কাটিয়েছেন, তাঁরাও তহশিলদারের কাছে আবেদন করতে পারবেন। এই সার্টিফিকেট দিতে কোনও আধিকারিক অকারণে দেরি করলে তাঁকে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণও করা হবে।
এখনও মোট ৩৩ হাজার ১৫৭ আবেদন জমা পড়েছে। যার মধ্যে শুধু জম্মু থেকেই এসেছে প্রায় ৩২ হাজার। উল্লেখযোগ্য হল শ্রীনগর থেকে মাত্র ৬৫টি আবেদন জমা পড়েছে, যার মধ্যে কাউকেই এখনও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়নি।
The post অবশেষে শাপমুক্তি, কাশ্মীরে স্থায়ী নাগরিকত্ব পেলেন ভিন রাজ্যের ২৫ হাজার নাগরিক appeared first on Sangbad Pratidin.