সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই ইন্ডিয়া জোটের 'মুখ' হিসাবে দেখছেন মণিশংকর আইয়ার! জল্পনা উসকে এক সাক্ষাৎকারে বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা বলেন, কংগ্রেসকে জোটের নেতৃত্ব ছাড়ার জন্য তৈরি থাকতে হবে। যে বা যাঁরা হাল ধরতে চাইছেন, আপাতত তাঁদের হাতে নেতৃত্বের রাশ ছেড়ে দেওয়া হোক। এই জোটের মুখ হওয়ার যোগ্যতা অনেকেরই রয়েছে। যাঁদের মধ্যে অন্যতম সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারপার্সন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাভাবিকভাবেই, তাঁর এমন মন্তব্যে অস্বস্তিতে পড়েছে হাত শিবির।
বিগত দিনে, একাধিক ইস্যুতে ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে তৈরি হওয়া ফাটল প্রকাশ্যে চলে এসেছে। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে আদানি ইস্যুতে কং বনাম তৃণমূল কাজিয়া নানা জল্পনা উসকে দিয়েছে। বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, 'অঘোষিত' ভাবে নিজেকে জোটের ক্যাপ্টেন মনে করে কংগ্রেস। তবে, সোনিয়া-রাহুলদের 'জমিদারি মেজাজ' গোঁসার কারণ হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, সমাজবাদী পার্টির মতো অন্যান্য শরিক দলগুলোর কাছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, শরিকদের কথা শুনতে হবে কংগ্রেসকে। জোট সংক্রান্ত বিষয়ে সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রণকৈশল ঠিক করতে হবে। সদ্য, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা লোকসভার সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছেন, অন্যান্য শরিকদলের কথা শুনতে হবে হাত শিবিরকে। ইন্ডিয়ার নেতৃত্বে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই যোগ্যতম। এই প্রেক্ষাপটে প্রাক্তন পেট্রোলিয়াম মন্ত্রীর মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ।
রবিবার এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মণিশংকর বলেন, "আমার মনে হয়, কংগ্রেসের তৈরি থাকা উচিত। তারা ইন্ডিয়া জোটের মুখ নাও হতে পারেন। কারণ অন্য শরিকদের মধ্যেও নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। এই জোটের নেত্রী হওয়ার যোগ্যতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রয়েছে। অন্য দলেরও যোগ্যতা রয়েছে। ফলে যে কেউ ইন্ডিয়া জোটকে নেতৃত্ব দিতে পারে।"
এদিন ইন্ডিয়া ব্লকে কংগ্রেসের গুরুত্ব যে কোনও অংশে কম নয় সে কথাও মনে করিয়ে দেন মণিশংকর। তাঁর কথায়, কংগ্রেসকে জোটের নেতৃত্ব ছাড়ার জন্য তৈরি থাকতে হবে। যে বা যাঁরা হাল ধরতে চাইছেন, আপাতত তাঁদের হাতে নেতৃত্বের রাশ ছেড়ে দেওয়া হোক। এই জোটের মুখ হওয়ার যোগ্যতা অনেকেরই রয়েছে। যাঁদের মধ্যে অন্যতম সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারপার্সন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তাঁর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট ইন্ডিয়া জোটের মুখ হিসাবে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতার উপরেই আস্থা রাখছেন।
উল্লেখ্য, গত লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বেশ কয়েকটি আসন হারিয়েছে বিজেপি। ১৮ থেকে নেমে রাজ্যে গেরুয়া শিবিরের আসন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২। মমতা মডেলের সামনে দাঁড়াতে পারেননি মোদি-শাহরা। শুধু তাই নয়, সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা উপনির্বাচনেও কোনও ছাপ ফেলতে পারেনি বিজেপি। ৬টি আসনেই ফুটেছে জোড়াফুল। মাদারিহাটের মতো গড়ও হাতছাড়া হয়েছে পদ্মশিবিরের। অন্যদিকে, মহারাষ্ট্র বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস ডাহা ফেল করেছে। ১০২টি আসনে লড়ে হাত শিবির জয় পায় মাত্র ১৬টিতে। আশা জাগিয়েও হরিয়ানা হাতছাড়া হয়েছে হাতশিবিরের। ফলে বিজেপির সঙ্গে সম্মুখ সমরে কংগ্রেস যে ব্যর্থ তা পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে। এই কারণেই বিজেপিতে টেক্কা দিতে মমতার মতো অভিজ্ঞ মুখ চাইছে শরিকদের অনেকেই। লালুপ্রসাদ যাদব, শরদ পওয়ারদের মতো হেভিওয়েটরাও তৃণমূল নেত্রীর দিকেই ঝুঁকে।