গোবিন্দ রায়: পুলিশের সামান্য ভুল! আর সেই ভুলের মাশুল দিতে ৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে বন্দি বাংলাদেশের তিন বাসিন্দা। নূর আলম, আবদুল মুনাফ ও মহম্মদ রিদওয়ান। অবশেষে হাই কোর্টের হস্তক্ষেপে কাটতে চলেছে বন্দিদশা। অবিলম্বে এই তিন বন্দিকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে উদ্যোগী হয়ে, ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। তাঁদের আশা এবার দেশে ফিরে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। তবে বন্দি অবস্থা থেকে তাঁরা মুক্তি পেলেও যে পুলিশের সামান্য ভুলের কারণে ৬ বছর কারাগারের অন্ধকারে কাটাতে হল এখন সেই পুলিশের শাস্তির দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।
সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। কখনও খেত মজুর, কখনও দিন মজুরের কাজ করে দিন গুজরান হয়। তাও সেটা নিয়মিত নয়। আজ কাজ জোটে, তো দুদিন ঘরে বসে থাকতে হয়। এই রকম আধপেটা খাওয়া পরিবারে যেখানে সংসারই ঠিক মতো চলে না, সেখানে পাসপোর্ট তো বিলাসিতা। তাই অগত্যা কাঁটাতার পেরিয়ে কাজের সন্ধানে বাংলাদেশ থেকে ভারতের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিল তিন বন্ধু। জানা গিয়েছে, তিনজনই বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার বাসিন্দা। এদিকে, পেটের দায়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে বেআইনি অনুপ্রবেশই কাল হল। যার জেরে ৬ বছর কারাগারে বন্দি তিন বাংলাদেশি।
[আরও পড়ুন: সাতসকালে নিউটাউনে রক্তাক্ত দেহ, খুন নাকি আত্মহত্যা, তদন্তে পুলিশ]
বিদেশমন্ত্রকের একটি সূত্র বলছে, এই বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের অধিকাংশই এদেশে ভালো জীবিকা এবং উন্নত জীবন যাত্রার খোঁজেই আসেন। বাংলাদেশে কোনও মতে জীবন ধারণ করে যখন আর কোনও উপায় দেখতে পান না, তখনই পেটের দায়ে ভারতে আসতে চান অধিকাংশ মানুষ। এই অবৈধ অনুপ্রবেশের সুযোগ এরাজ্যেই বেশি রয়েছে। প্রথমে বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গ, তার পর এরাজ্য থেকে প্রতিবেশী যে কোনও রাজ্যে কাজ ও মাথাগোঁজার ঠাঁই পাওয়া। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে যাঁরা ধরা পড়ে যান কয়েকমাস তাঁদের ঠিকানা হয় শ্রীঘরে। ঠিক তেমনটাই পরিকল্পনা ছিল নুর, আবদুল ও রিদওয়ানের ক্ষেত্রে। আর যারা বিএসএফের শত নজরদারির ফাঁক গলে বেরিয়ে আসতে পারেন, তাঁরা এদেশের যে কোনও রাজ্যে কাজ পেয়ে যান।
মামলাকারীর আইনজীবী আফরিন বেগম জানান, "পেটের তাগিদে কাজের সন্ধানে এদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন কক্সবাজারের বালুবাসা গ্রামের বাসিন্দা নুর আলম। সঙ্গী ছিলেন, তার অপর দুই বন্ধু কক্সবাজারের ঝিমংখালির বাসিন্দা আবদুল মুনাফ ও মোহাম্মদ রিদওয়ান।" আইনজীবীর দাবি, ২০১৭ সালের মার্চ মাসে তিনজনই পাড়ি দিয়েছিলেন বাংলাদেশ থেকে ভারতের উদ্দেশে। ২৯ মার্চ গভীর রাতে স্বরূপনগর থানা এলাকার কৈজুরী সীমান্ত দিয়ে বেআইনি অনুপ্রবেশের সময় বিএসএফের হাতে ধরা পড়েন। পর দিন ৩০ তারিখ তাঁদের স্বরূপনগর থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আইনজীবীর আরও দাবি, তাঁদের মতো বাংলাদেশিদের সঙ্গে কয়েকজন মায়ানমারের বাসিন্দাও সেদিন ধরা পড়ে ছিল। বসিরহাট আদালতে পুলিশের তরফে ভুলবশত তাঁদেরকে বাংলাদেশির পরিবর্তে মায়ানমারের বাসিন্দা বলে দাবি করা হয়। ওই বছর পুলিশের দেওয়া চার্জশিটেও পুলিশের তরফে একই দাবি করা হয়।
[আরও পড়ুন: মানসিক নির্যাতনের শিকার চালকরা! বিস্ফোরক ‘অভিশপ্ত’ মালগাড়ির সহকারী চালকের স্ত্রী]
মামলার কেস ডায়েরি ও আদালতে জমা দেওয়া পুলিশের তথ্যের ভুলই কাল হল। আদালতে কেন্দ্রের দাবি, ভারতের বিদেশমন্ত্রকের তরফে মায়ানমারে তাঁদের ঠিকানা খোঁজ করেও কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। যেখানে মায়ানমারের বাসিন্দার জায়গায় তাঁদের ঠিকানা বাংলাদেশ থাকলে ৯৫ দিনের মাথায় তাঁরা দেশে ফিরতে পারতেন, সেখানে তাঁদের দেশ মায়ানমার লেখা থাকায় এপর্যন্ত তাঁদের ঠিকানা হল দমদম সংশোধনাগার। শুধু মাত্র ঠিকানা ভুলের কারণে তাঁরা যে দেশে ফিরতে পারলেন না। ৬ বছর এদেশের কারাগারে বন্দি থাকলেন সে বিষয়ে আদালতকে আশ্বস্ত করে রাজ্য জানিয়েছে, তাদের দেশের ফেরানো যাবতীয় ব্যবস্থা করতে রাজ্য সদর্থক ভূমিকা নেবে।