অর্ণব আইচ: গরু না পেয়ে গয়না লুঠ। প্রৌঢ়ার কাছ থেকে গয়না লুঠের পিছনে গরু চোরের গ্যাং। একেক সময় একেকটি গাড়ি নিয়ে গরু চুরি করত এই গ্যাংয়ের সদস্যরা। গরু না পেলে গাড়ির তেলের খরচ তোলার জন্য করত লুঠপাট। শেষ পর্যন্ত গড়িয়াহাট ও তারাতলায় হানা দিয়ে প্রৌঢ়াদের গয়না লুঠ করাই হল তাদের ‘কাল’। পুলিশের হাতে ধরা পড়ল খোঁড়া জামিলের দল। জামিল, তার সঙ্গী মহম্মদ সইদ-সহ মোট তিনজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি গাড়ি করে এসে দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাটের হিন্দুস্থান পার্কের বাসিন্দা এক প্রৌঢ়ার সোনার দুল লুঠ করে পালায় দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনার তদন্ত চলাকালীনই পুলিশ জানতে পারে যে, একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে তারাতলা এলাকায়। দেখা যায়, একাধিক গাড়ি লুঠে ব্যবহার করা হয়েছে। সিসিটিভির ফুটেজে গাড়িগুলির নম্বর ভাল করে না উঠলেও সেগুলির বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করে তদন্ত শুরু করেন গড়িয়াহাট থানা, তারাতলা থানা ও লালবাজারের গোয়েন্দা আধিকারিকরা। গাড়িগুলি যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর এলাকার, সেই ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত হয়। সেই সূত্র ধরে কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে জেলা পুলিশের সাহায্য নেওয়া হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ প্রথমে এক দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করে। তাকে জেরা করেই কলকাতা পুলিশ গ্রেপ্তার করে বাকি দু’জনকে।
[আরও পড়ুন: ‘গণতন্ত্রের পাহারাদারের হাতেই যেন মৃত্যুঘণ্টা না বাজে’, ফের বিস্ফোরক রাজ্যপাল]
ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে, খোঁড়া জামিলের গ্যাং গরু চুরির মতো অপরাধের জন্যই পরিচিত। মূলত কলকাতার আশপাশ থেকে গ্রামেগঞ্জেও তারা গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াত। ভোরের দিকে অনেক গৃহস্থই বাড়ি থেকে গরু নিয়ে গিয়ে রাস্তার পাশে মাঠে ছেড়ে দেন। কেউ বা আবার রাস্তার পাশে বেঁধে রাখেন। নির্জন রাস্তায় এই ধরনের গরুর উপরই নজর রাখত এই গ্যাং। গ্যাংয়ে থাকত তিন থেকে চারজন। তারা গাড়ি থেকে নেমে গরুর মুখ চেপে ধরে, পা বেঁধে ফেলে। ওই অবস্থায় গরুটিকে গাড়িতে তুলে বিশেষ হাটে চড়া দামে বিক্রি হয়ে যায়। তাদের দাবি, গড়িয়াহাটে অপরাধ করার দিনটিতে তারা হাওড়ার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও রাস্তার পাশে কোনও গরু দেখতে পায়নি। তাই হাওড়া ব্রিজ পেরিয়ে ব্রাবোন রোড থেকে পার্ক সার্কাস, গড়িয়াহাটে এসে লুঠ করে কসবা বাইপাস কানেক্টর, বাইপাস, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড কানেক্টর, টালিগঞ্জ, বেহালা হয়ে বিষ্ণুপুরের দিকে পালিয়ে যায়। একইভাবে বজবজের দিকে গরু না পেয়ে তারা তারাতলায় এসে গয়না লুঠ করে। তারাতলা থানার কাছ থেকে গড়িয়াহাট থানার পুলিশ তিনজনকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। ধৃতদের জেরা করে এই গ্যাংয়ের বাকিদের সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।