নন্দন দত্ত, সিউড়ি: শিক্ষামূলক ভ্রমণে গিয়ে ধসের কবলে বীরভূমের ছাত্রছাত্রী-সহ ৩৪ জন। গত চারদিন তারা উত্তর সিকিমের পেগং আটকে। তাদের কাছে কোনও খাবার নেই। ফিরে আসার কোনও উপায়ও নেই। মঙ্গলবার সাংসদ শতাব্দী রায়ের দ্বারস্থ হন তারা। সাংসদ জানান, "সিকিম সরকারের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। সরকার তাদের গ্যাংটক পর্যন্ত ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।"
অন্যদিকে ভ্রমনের কলেজ গাইড সাধন চৌধুরী বলেন, "মঙ্গলবার আমাদের হেলিকপ্টারের নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার জন্য সেই যাত্রা বাতিল হয়। এখন তারা হেঁটে পাহাড়ের দুর্গম পথ পেরিয়ে সমতলে আসার চেষ্টা করছি।" রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম খবর পেয়েই জেলার ছাত্রছাত্রীদের ফেরাতে উদ্যোগী হন। শতাব্দী রায়ের সঙ্গেও তিনি কথা বলেন। জানান,মঙ্গলবার সকালে সিকিমে আটকে থাকার খবর পায়। খাবার-জল দিয়ে তাদের নিরাপদে সমতলে আনার সবরকম চেষ্টা সরকার করছে।
[আরও পড়ুন; কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার দায় কার? মালগাড়ির মৃত চালকের বিরুদ্ধেই FIR]
গত সপ্তাহ থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সিকিমে বেড়াতে গিয়ে আটকে পড়েছে বহু পর্যটক। বীরভুম এডুকেশনাল ইন্সটিটিউশনের পক্ষ থেকে ৩৪ জন গত ৯ জুন বীরভূম থেকে সিকিমের উদ্দেশে রওনা দেয়। ১০ জুন শিলিগুড়িতে বাস রেখে তারা সিকিমের জিরো পয়েন্ট সঙ্গে লাচুং পৌঁছয়। সকলেই বাঁধেরশোল শিক্ষক শিক্ষণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ছাত্রছাত্রী। ৩৪ জনের মধ্যে ১৫ জন ছাত্রী, ১৩ জন ছাত্র, এক শিশু ও পাঁচজন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মী আছে। তারা জানান, আবহাওয়া ঠিক থাকায় ঘুরে এসে তারা পেগং এলাকায় হোটেলে থাকেন। ১২ তারিখ থেকে ধস নামে। দুদিন আটকে থাকার পরে ১৪ জুন তারা হোটেল ছেড়ে নিচে নেমে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুদূর যেতেই সেখানেও রাস্তায় ধস নামে। হোটেলে ফেরার পরিস্থিতি ছিল না। বাধ্য হয়ে তারা পেগং প্রাথমিক স্কুলে আশ্রয় নেয়। সেখানে তিনদিন থাকার পরে তাদের খাবার, জল এমনকী এলাকার দোকানে মজুত খাবারও শেষ হয়ে যায়।
ছাত্রছাত্রীরা তাদের পরিস্থিতির কথা জানিয়ে একটা ভিডিও করে জেলায় পাঠায়। সেখানে ছাত্রী সমাপ্তি রায়চৌধুরী কাতর আবেদন রাখেন জেলাপ্রশাসন থেকে জেলাবাসীদের প্রতি। তিনি জানান, "তাদের মজুত সব খাবার শেষ। চারিদিকে ধস নামছে। চারদিন আটকে আছেন তারা। পরিবারের লোক খুব চিন্তিত।" সাধন চৌধুরী জানান, "মঙ্গলবার সকালে হেলিকপ্টার আর আসেনি। আমরা হেঁটে নিচে নামার চেষ্টা করছি। এক-একটি সেতু ধসে গিয়েছে। কাঠের সেতু দিয়ে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে পেরচ্ছি। বিকেলে ম্যাংগম পর্যন্ত কোনওরকমে পৌঁছাতে পেরেছি। তবে রাস্তায় সেনাবাহিনী ও সরকারের পক্ষ থেকে খাবার জল, শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে।"
[আরও পড়ুন: দুর্গাপুরে ডাক-কর্মীকে মাঝরাস্তা থেকে অপরহণের চেষ্টা! কাঠগড়ায় যোগীরাজ্যের পুলিশ]
উল্লেখ্য ম্যাংগম প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১ হাজার ১৭৮ জনকে মঙ্গলবার লাচুং থেকে সরাতে পেরেছেন। শুধু ৯১ জন এখনও আটকে। বিকালের মধ্যে ১ হাজার ৬০ জন রেচুখোলা পেরিয়ে গিয়েছে। যেটা ম্যাংগম থেকে ৪৫ মিনিট দূরে।