shono
Advertisement

বাবার চিকিৎসার খরচ জোগাতে ঘর ছাড়াই কাল! আক্ষেপ উত্তরপ্রদেশে মৃত বাংলার শ্রমিকের মায়ের

শোকস্তব্ধ গোটা গ্রাম। The post বাবার চিকিৎসার খরচ জোগাতে ঘর ছাড়াই কাল! আক্ষেপ উত্তরপ্রদেশে মৃত বাংলার শ্রমিকের মায়ের appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 07:11 PM May 16, 2020Updated: 07:35 PM May 16, 2020

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: “বাবার যক্ষ্মা হয়েছিল। সেই জন্যই দুটো জোয়ান ছেলে খাটতে গিয়েছিল রাজস্থানে। বড়টা আগে চলে এলেও ছোটটা বলত বাবার অসুখ সারাতে সব টাকা খরচ হয়েছে। আরও কিছু টাকা জমিয়ে তবে গ্রামে যাব।” কুঁড়ে ঘরের মেঝেতে গড়াগড়ি খেতে খেতে বারবার একথাই আওড়াচ্ছেন উত্তরপ্রদেশে পথ দুর্ঘটনায় মৃত বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক মিলন বাদ্যকারের মা। আর বাবা তা চোখে দেখতে না পেরে বাইরে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছেন। বলছেন, “কেন যে রোগটা হল? জোয়ান ছেলেটার প্রাণটা যেত না!”

Advertisement

লকডাউনের মাঝেই রাজস্থান থেকে ফেরার পথে শনিবার ভোররাতে উত্তরপ্রদেশের অরাইয়া এলাকায় পরিযায়ী শ্রমিকের লরি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ২৪ জন শ্রমিক মারা যান। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন পুরুলিয়া মফস্বল থানার ছররা-দুমদুমী গ্রামের এই মিলন বাদ্যকার। রাজস্থানের মার্বেল কারখানায় কাজের সুবাদে ফি মাসে আট হাজার টাকা বেতনের পাঁচ হাজার টাকাই পরিবারের জন্য পাঠাত। দুর্গাপুজো শেষে গাঁ ছেড়েছিল বছর বাইশের ওই যুবক। তারপর আর ঘরে ফেরেননি। দাদা দেবাশিস ফিরে এলেও ভাই সংসারের আর্থিক স্বচ্ছলতার কথা ভেবে সেখানেই থেকে যান। আর সেটাই কাল হল বলছেন মা সুবাষী বাদ্যকার। এদিন দুপুর দিকে পুরুলিয়া মফস্বল থানার পুলিশের কাছে নিশ্চিত মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর সুবাষী দেবীর কান্না যেন আর থামছে না। তিনি বলছেন, “আর ওই ছেলেটা বলবে না, মা, আমি ভাল আছি। তুই চিন্তা করিস না। সংসারের কথা ভেবে কেন যে ওখানে থেকে গেল?”

[আরও পড়ুন: সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর নামে আপত্তিকর মন্তব্য, তদন্তে গিয়ে আক্রান্ত পুলিশ]

একই ছবি ওই দুর্ঘটনায় মৃত বাংলার তথা পুরুলিয়ার আরও তিন পরিযায়ী শ্রমিকের বাড়িতেও। এদিন দুপুরে পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় ওই ছররা-দুমদুমী গ্রামের বাসিন্দা আরেক মৃত চন্দন রাজোয়াড়ের বাড়ি যেতেই তার পরিবারের লোকজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার মেজ ভাই রাজীব বলেন, “ভাই-র দেহ যাতে এখানে আনা হয় তার ব্যবস্থা করুন। সবাই একবার শেষ দেখা দেখতে চাইছেন।” আসলে এই জেলায় যে কয়েকজন পরিযায়ী শ্রমিকের কর্মস্থলে মৃত্যু হয়েছে তাঁদের অধিকাংশজনেরই মৃতদেহ দাহ হয়ে গিয়েছে সেখানেই। তাই শেষ দেখা দেখতে এমন করুণ আরজি।

কোটশিলার উপরবাটরি গ্রামের বাসিন্দা মৃত অজিতচন্দ্রের স্ত্রী উর্মিলা মাহাতো বলেন, “গত বৃহস্পতিবার সকাল বেলায় যখন রাজস্থান থেকে হাঁটা শুরু করে তখন শেষবারের মত কথা হয়েছিল। বলেছিল চিন্তা করবে না। বাড়ি আমি ফিরবই। আমি নিজেই যোগাযোগ করে নেব।” কিন্তু আর ফোন আসেনি। এদিন দুপুরের দিকে কোটশিলা থানার কাছ থেকে খবর আসে তার স্বামীর পথ দুর্ঘটনায় ম়ৃত্যু হয়েছে। তখনই যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে উর্মিলা দেবীর। বিকালে জয়পুর থানার পুলিশের কাছ থেকে এই দুর্ঘটনার খবর পায় গণেশ রাজোয়াড়ের পরিবারও। তার বাড়ি জয়পুরের ঝালমামড়ো গ্রামে হলেও সে তার মামার বাড়ি পুরুলিয়া মফস্বলের বোঙাবাড়িতে থাকতেন। সেখান থেকেই রাজস্থানে কাজে যান। বাবা তারাপদ রাজেয়াড় বলেন, “সব শেষ হয়ে গেল। শেষ দেখাটা যেন দেখতে পাই।” চার মৃত পরিযায়ী শ্রমিকের মৃতদেহের অপেক্ষায় এখন সমগ্র পুরুলিয়া।

[আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশে মৃত্যু পুরুলিয়ার ৪ শ্রমিকের, নিহতদের পরিবারের পাশে বাংলার সরকার]

The post বাবার চিকিৎসার খরচ জোগাতে ঘর ছাড়াই কাল! আক্ষেপ উত্তরপ্রদেশে মৃত বাংলার শ্রমিকের মায়ের appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement