সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: জীবিতকে মৃত! এমনকী, কাজ করতে অনিচ্ছুক দেখিয়েও দরিদ্রতম জেলা পুরুলিয়ায় (Purulia) ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প থেকে সাড়ে পাঁচ লক্ষ শ্রমিককে বাদ দিয়ে দিল প্রশাসন। হয়ে গিয়েছে। এদিকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে এই প্রকল্পে শ্রমিকদের মজুরি কেন্দ্রীয় সরকার বকেয়া রাখায় এই মেগা প্রকল্পের কাজ-ই বন্ধ
অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ পালন করতে গিয়ে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন কোনওরকম শুনানি না করেই নাম বাদ দিয়ে দিয়েছে। অথচ এই প্রকল্পের বিধি রয়েছে জনশুনানি করে এই ধরনের কাজ করতে হবে। তাছাড়া যাদের নাম বাদ পড়েছে তাঁরাও জানেন না। কেন এই বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের নাম বাদ তা সঠিকভাবে জানতে ১০০ দিনের কাজে শ্রমিকের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করা পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেতমজুর সমিতি মঙ্গলবার থেকে এই জেলার ব্লকে ব্লকে গণশুনানি শুরু করেছে। পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো বলেন, “বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে আরও বিস্তারিতভাবে খোঁজ নিয়ে এরপর কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় সেই বিষয়টি দেখছি।”
[আরও পড়ুন: Jyotipriya Mallick: ‘অভিষেক কে? আমাদের নেতা?’, সাংবাদিকদের পালটা প্রশ্ন জ্যোতিপ্রিয়র]
এ রাজ্যের মধ্যে দরিদ্রতম জেলা পুরুলিয়া। নীতি আয়োগের রিপোর্ট-এ তা ধরা পড়েছে। সেখানে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প অর্থাৎ মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইনে-এ ৪৭ শতাংশ শ্রমিকের নাম জব কার্ড থেকে বাদ দেওয়া রীতিমতো নজিরবিহীন। এই প্রকল্পের সরকারি ওয়েবসাইট বলছে, বনমহলের এই জেলায় ৫ লক্ষ ৪১ হাজার ৩৬২টি পরিবারের ১১ লক্ষ ৮৩ হাজার ৬৬৪ জনের নাম শ্রমিক হিসাবে নথিভুক্ত ছিল। সেই জায়গায় দেখা যাচ্ছে ৫ লক্ষ ৫১ হাজার ৯৫৯ জনের নাম জব কার্ডের তালিকা থেকে বাদ। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয়, জব কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ডের সংযুক্তি করানোর জন্য। এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে শ্রমিকদের নামের তালিকা সংশোধনের কাজ এক বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। তবে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, এই বিষয়ে তাদের কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি। আসলে বাদ পড়া শ্রমিকরা জানেনই না তাঁদের নাম এই প্রকল্প থেকে বাদ গিয়েছে। এদিন গণ শুনানিতে তা ধরা পড়ে।
এদিন জেলার তিনটি ব্লক পুরুলিয়া ২, বরাবাজার এবং পুঞ্চা ব্লকের মোট চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক সংসদে গণশুনানি হয়। পুরুলিয়া দুনম্বর ব্লকের বেলমা গ্রাম পঞ্চায়েতের দুটি সংসদ, বরাবাজার ব্লকের তুমড়াশোল গ্রাম পঞ্চায়েতে একটি সংসদ ও পুঞ্চা ব্লকের নপাড়া ও লাখরা গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক সংসদে গনশুনানিতে ওই এলাকার শ্রমিকরা অংশ নেন। পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেতমজুর সমিতির রাজ্য কমিটির সদস্য প্রেমচাঁদ মাইতি বলেন, “যে সকল শ্রমিকদের নাম বাদ পড়েছে তা কী কারণে জানার জন্যই আমরা সংসদে-সংসদে গণশুনানি শুরু করেছি। এদিনের গণশুনানি থেকে দেখা গিয়েছে শ্রমিকরা জানেনই না তাঁদের নাম বাদ পড়ার কারণ। ” এই সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, জীবিতকে মৃত দেখিয়ে এমনকী কাউকে কাজ করতে অনিচ্ছুক দেখিয়ে শ্রমিকদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। তাদের এই অভিযোগে রীতিমতো তোলপাড় পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন।
[আরও পড়ুন: শিশিরের সম্পত্তি বৃদ্ধিতে সারদা যোগ! তদন্ত চেয়ে মোদি-শাহ-ইডি-সিবিআইকে চিঠি কুণালের]
পুরুলিয়া জেলায় মোট বাসিন্দা ৩৩ লক্ষ ৮৬ হাজার। তার মধ্যে ৪৩ শতাংশ অর্থাৎ ১৪.৫৫ লক্ষ মানুষ নানান ক্ষেত্রে শ্রমিকের কাজ করেন। এর মধ্যে ১১ লক্ষ ৮৩ হাজার মানুষ ১০০ দিনের কাজের সঙ্গে যুক্ত। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন এই প্রকল্পে কাজ না করলে, আধার কার্ড ও জব কার্ডের সংযোগ না করানো থাকলে বা মারা গেলে বা অন্যত্র চলে যাওয়ার মত নানা কারণে জব কার্ড বাতিল করা হয়। শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা ওই সংগঠন জানিয়েছে, ২০০৬ সাল থেকে জব কার্ড তৈরির কাজ শুরু হয়। আগে কখনও এই জেলা থেকে এই বিপুল সংখ্যক নাম বাদ যায়নি। বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্লক স্তরে শুনানি করা দরকার। কিন্তু তা করেনি প্রশাসন। কিন্তু বিকল্প উপায় কী? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রমিকরা পুনরায় নাম তোলার জন্য আবেদন করতে পারেন। কিন্তু তাতে তো অযথা ভোগান্তিতে পড়তে হবে শ্রমিকদের। বলছে ওই খেতমজুর সমিতি। তাঁদের কথায়, তারা গণশুনানি করে সেই তথ্য প্রশাসনের হাতে তুলে দিয়ে আলোচনায় বসবেন।