অভিরূপ দাস: জ্বর রয়েছে দিন সাতেক ধরে। ‘একঘরে’ হওয়ার ভয়ে শিশুকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান নি অভিভাবকরা। কিন্তু কেন? “টেস্ট করলে পাছে করোনা ধরা পরে।” এমনটাই জানিয়েছেন শিশুর মা-বাবা। করোনা নিয়ে এই সামাজিক অস্পৃশ্যতার মধ্যে দিয়ে মাথা চাড়া দিচ্ছে ডেঙ্গু। স্রেফ এ মরশুমে চল্লিশজন শিশু ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছিল ইন্সটিটিউট অফ চাইল্ড হেলথে (Institute of Child Health)। তাদের মধ্যে ২০ জনকেই ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (ICU) রেখে চিকিৎসা করতে হয়েছে। এই মুহূর্তে পার্ক সার্কাসের শিশু হাসপাতালে দুজন শিশু ভরতি রয়েছে আইসিইউতে। একজনের বয়স চারমাস, অন্যজন সাত বছর।
কেন একেবারে আইসিইউতে ভরতি?
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রভাস প্রসূন গিরি জানিয়েছেন, বেশ কয়েকবছর ধরেই চরিত্র বদলেছে ডেঙ্গু (Dengue)। হেমোরেজিক ফিভার বেশি হচ্ছে। চোখ, নাক ও ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ, বমি, পেটব্যথা, খাদ্যনালি, মূত্রনালি-সহ বিভিন্ন জায়গায় রক্তক্ষরণের উপসর্গ নিয়েই ডেঙ্গুতে আক্রান্তরা হাসপাতালে বেশি আসছে। জ্বর, মাথাব্যথার মতো উপসর্গ অপেক্ষাকৃত কমই পাওয়া যাচ্ছে। এখন করোনার কারণে জ্বর হলেও চেপে রাখছেন অভিভাবকরা। পাছে ডাক্তার কোভিড টেস্ট করাতে বলে। তাতে পজিটিভ এলে পাড়ায় একঘরে হয়ে যেতে হবে। এমন মানসিকতা অন্য বিপদ ডেকে আনছে।
[আরও পড়ুন: স্ত্রীরোগের আঁতুড়ঘর সুন্দরবন, সংসার চালাতে নোনা জলে নেমে বাড়ছে জরায়ুর সমস্যা]
অনেক সময়ই দেখা যাচ্ছে কোভিড (COVID-19) নয় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে রোগী। জ্বর নিয়ে রোগী যখন দেরি করে হাসপাতালে আসছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রক্তে প্লেটলেটের সংখ্যা ২০ হাজারেরও নিচে নেমে যাচ্ছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ বাচ্চার জ্বর হলে কোভিড টেস্ট না করান, অন্তত ডেঙ্গু টেস্ট অবশ্যই করান। শিশু কোভিডকে সহজেই হারাতে পারবে কিন্তু শেষ পর্যায়ের ডেঙ্গু ভয়ঙ্কর।
সাধারণত প্রতিবছর সেপ্টেম্বর থেকেই রাজ্যে ডেঙ্গুর গ্রাফ উপরের দিকে উঠতে থাকে। গত বছর নভেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল ডেঙ্গুতে। ২০১৮-এ ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৪৪। ইতিমধ্যেই এ বছর ডেঙ্গুতে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সেই সংখ্যায় বেড়ি পরাতে কোভিড টেস্টের থেকেও জ্বর হলেই ডেঙ্গু টেস্ট করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। এ বছর এমনিতেই করোনা আবহে চিকিৎসক সংখ্যা অপ্রতুল। অনেকেই ডেডিকেটেড কোভিড চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছেন কোভিড হাসপাতালে। সেখানে ডেঙ্গু রোগী বাড়তে শুরু করলে কী হবে তা ভেবেই শঙ্কিত চিকিৎসকরা।
[আরও পড়ুন: জ্বর হলেই করোনা আক্রান্ত নয়, কী কী উপসর্গ হলে কোভিড টেস্ট করাবেন?]
শুধু কলকাতা পুরসভা এলাকাই নয়, হাওড়া গ্রামীণ এবং হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ইতিমধ্যেই ভিড় করছে হাসপাতালগুলিতে। গত বছরের রিপোর্ট অনুযায়ী কলকাতা পুরসভার যে সকল এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল সেগুলি হল, পর্ণশ্রী, পিকনিক গার্ডেন, ধাপা, তিলজলা। এই জায়গাগুলিতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আদৌ কতটা কাজ হয়েছে তার প্রমাণ মিলবে সেপ্টেম্বর থেকেই।
The post লাস্ট স্টেজ ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে আসছে আক্রান্তরা, গত একমাসে ৫০ শতাংশ রোগী ICU-তে appeared first on Sangbad Pratidin.